সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ সড়ক পানির নীচে চলে যাওয়া, বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ, যানবাহন চলাচলে বিপত্তি, স্কুল-কলেজে জলাবদ্ধতা, নিন্মাঞ্চল প্লাবিতর পাশাপাশি নিন্ম আয়ের শ্রমজীবী মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে নগরবাসীর জীবন দুর্বিষহ ও স্থবির হয়ে পরে। ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের প্রলংকারী সুপার সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসের পানি পরেরদিনই নেমে গিয়েছিলো। পরবর্তী সময়ের বন্যা, অতিবৃষ্টির পানি দীর্ঘস্থায়ী জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেনি। তাহলে এখন কেন চরম দুর্ভোগ? এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশালের সাধারণ নাগরিক সমাজের (বসানাস) আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমানের মতে, প্রথমেই আসে বর্তমান ৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বরিশাল নগরীর অপরিকল্পিত নগরায়ন। ১৯৯২ সালে বরিশাল জেলা যখন বিভাগে উন্নীত হয়, তখন থেকেই বরিশাল নগরীর প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এরপর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর তাতে গতি আসে।
সম্প্রতি সময়ে পদ্মা সেতু, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর ও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের কারণে বরিশাল এখন ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে আকর্ষণীয়। অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে ভবন/ অবকাঠামো নির্মানের ফলে নিন্মভূমি, কৃষি জমি, পুকুর, ডোবা ও নালা, প্রাকৃতিক জলাধারসমূহ ভরাট হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া এবং ভূমিখেকোদের দৌরাত্মে যোগসাজশে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এখনও তা অনিয়ন্ত্রিতভাবে অব্যাহত রয়েছে।
বসানাস’র আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান আরও বলেন, দ্বিতীয়ত, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছেনা। ভবনের চারদিকে যতটুকু স্থান ফাঁকা রাখা বাধ্যতামূলক, তার অন্তত ২৫% ভাগ খোলা রাখার নিয়ম। অর্থাৎ খোলা স্থানটুকু কংক্রিট দিয়ে ঢাকা যাবেনা। ওই (খোলা) স্থান দিয়ে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। নিয়ম মেনে ভবন তৈরী করা হয়েছে এমন সংখ্যা হাতে গোনা। এ ছাড়া নির্মিত ভবনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা করা হয়না। ছাদে এবং ভবনের নিচে আঁধারে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন ব্যবস্থা থাকলে জলাবদ্ধতা অনেকটা নিয়ন্ত্রনে থাকবে। একইসাথে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের উপর চাঁপ কমে আসবে। এক গবেষনায় বলা হয়েছে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং ভবন সংলগ্ন উঠান খালি রাখলে বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা ৬০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নাগরিকদের অনুমোদিত প্লানের ভিত্তিতে বাড়ি তৈরী করতে হবে। সিটি করপোরেশন ও নগর উন্নয়ন (প্রস্তাবিত) কর্তৃপক্ষকে তদারকি নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোন ব্যাত্যয় না হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনেকটা নাজুক। এর ব্যবহার উপযোগিতা নেই বললেই চলে। অনেকটা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এবং অপরিকল্পিতভাবে এসব ড্রেনগুলো তৈরী করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে মাস্টার ড্রেনের সাথে প্রাইমারী ড্রেনের সংযোগ নেই। আবার কয়েকটির থাকলেও তলদেশের উচ্চতার পার্থক্য থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। নবগ্রাম রোডের খাল ভরাট করে বটতলায় তিন তলা মার্কেট নির্মান করাও নগরীর জন্য আত্মঘাতী হয়েছে। যেকারণে জোয়ারের পানি এবং বৃষ্টিতে এখানে সবার আগে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। খালের উপরের ব্রিজ ভেঙে কালভার্ট নির্মান করায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ড্রেনের নীচে মাঝে মাঝে ঢালাই না করে ফাঁকা রাখার নিয়ম উপেক্ষিত। কংক্রিটের স্তর না থাকলে পানি মাটি চুইয়ে ভূগর্ভে প্রবেশ করে পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া ড্রেন এবং খাল নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচ্ছন্ন না করারও বিস্তার অভিযোগ রয়েছে।
কাজী মিজানুর রহমান বলেন, নগরীর মধ্যে একসময় ২৩টি খাল এবং ২৪টি সংযোগ খাল প্রবাহিত হতো। এখন বেশিরভাগ খালের অস্তিত্ব নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে ছোট ছোট ড্রেন বানানো হয়েছে। যে ২২/২৩ টি খালের কথা বলা হয়-সেগুলো দখল, দূষণ এবং নাগরিকদের অপরিণামদর্শী আচরনের কারণে অস্তিত্বহীন হয়ে পরেছে। মাত্র ৩/৪টি খালে কোনরকম জোয়ার ভাঁটা হয়। খালের উপর ও নীচ অপচনশীল বর্জ্য বিশেষত প্লাস্টিক এবং পলিথিনের পুরু স্তর জমা এবং দুই পাড়ের বাসিন্দাদের অপদখলের কারণে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়া এবং সুয়ারেজ সংযোগের কারণে এইসব খালের ব্যবহারে উপযোগিতা নেই। যেকারণে বৃষ্টির পানি নিস্কাশনে খালগুলো কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। অথচ একসময় নগরীর মধ্যকার জেলখাল, নবগ্রাম খাল, সাগরদী খালে তীব্র স্রোত ছিল। নালাগুলো বেয়ে পানি খালে পড়তো। বড় বড় নৌকা মালামাল পরিবহন, গয়না যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করতো। খালে মাছ ধরে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতো যা এখন ইতিহাস হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নবগ্রাম খালের বটতলা এলাকায় এখন পাকা ড্রেন। বর্তমান প্রজন্মের কাছে পূর্বের খালের ইতিহাস শুধুই গল্পের মতো। বিগত কয়েক বছর আগে একবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কর্মী এবং অর্থায়নে জেলখাল ও সাগরদী খাল পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সে সময় জেল খাল থেকে উঠে এসেছিলো শতমণ পলিথিন আর প্লাস্টিক বর্জ্য।
সচেতন নাগরিকদের মতে, এই তথ্য নাগরিকদের জন্য কোন ভাল বার্তা নয়। কারণ একটি নগরীর বাসিন্দা হিসেবে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নাগরিকদেরও ভূমিকা রয়েছে। কারণ শুধুমাত্র একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিশাল এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব নয়। সকল নগরবাসী যদি যত্রতত্র অপচনশীল দ্রব্যাদি বিশেষত প্লাস্টিক বর্জ, পলিথিন সামগ্রী, টিনের কৌটা, নারিকেলের খোসা ইত্যাদি ড্রেন, নর্দমা, খালে এমনকি নদীতে ফেলেন, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়। পানি নামতে বিলম্ব হয়। নিন্মাঞ্চলের বাসিন্দা, কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। তাই নগরবাসীর আচরনেও সুনাগরিকের ছোঁয়া থাকার তাগিদ দিয়েছেন সচেতন বরিশালবাসী।
সূত্রমতে, একসময় নগরীতে তিন হাজারেরও বেশী পুকুর ছিল। এখন হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পুকুর আছে। তাও আবার মাঝে মধ্যে রাতের আঁধারে গোপনে ভরাট করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভাটিখানার একটি পুকুর রাতের আঁধারে বালি ফেলে একাংশ ভরাট করা হয়েছে। রাতে ট্রাক ভর্তি বালু ও মাটি এনে নগরীর একটি স্কুলের পুকুর ভরাট করতে গিয়ে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের তুঘলকি কান্ড ঘটেছে। এরমধ্যেই আশার কথা হচ্ছে, সচেতন নাগরিক সমাজের প্রচেষ্টায় আইনের আওতায় নগরীর ঝাউতলার পুকুরটি আপাতত ভরাটের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি পুকুর, জলাশয় ভরাটের ফলে বৃষ্টির পানি উপচে উঠে বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ডুবিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি জনজীবন এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পুকুর, জলাশয় ভরাট করার প্রচলিত আইনকে উপেক্ষা করে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে অচিরেই বরিশাল নগরবাসী কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হবেন। ভবিষ্যতে যাতে খাল ভরাট করে ড্রেন নির্মান না করা হয়, সেদিকেও সবার নজর রাখতে হবে। খালের উপর কালভার্টগুলো ভেঙে পুল তৈরী করা প্রয়োজন। প্রচলিত সকল আইন মেনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা ছাড়া জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি মিলছে না।
বসানাস’র আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমানের মতে, ব্যক্তি তার জীবনের প্রয়োজনে পুকুর ভরাট করে। তাকে বাসস্থান বানাতে হবে, ব্যবসা বাণিজ্য করতে হবে। তাই তাকে নিবৃত্ত করা কঠিন। অন্যদিকে রাষ্ট্রকে জলাশয় রক্ষা করতেই হবে। প্রয়োজনে এগুলোকে জলবায়ু ট্রাস্টের অর্থায়নে অধিগ্রহণের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে মেরু অঞ্চলের গ্রীনল্যান্ড, আর্কটিক, এন্টার্কটিকা এবং হিমালয়ের বরফগলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা স্থায়ীভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় জলোচ্ছ্বাস, উঁচু জোয়ারের প্রভাবে নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে দুইকূল প্লাবিত করছে। কখনো নদীর পানির উচ্চতা বেশী হওয়ায় এবং অপরিচ্ছন্ন, অপরিসর ড্রেনের কারণে নগরীতে বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীতে নামতে পারছেনা। নদীর পানির উচ্চতা না কমা পর্যন্ত শহরে জলাবদ্ধতা থেকেই যাচ্ছে। নদীর পানি কমলেও নগরীর পানি সমান হারে কমছে না। নদী ব্যবস্থাপনায়ও জনগন খুশী নয়। ড্রেজিং করে সেই বালু নদীতেই ফেলা হচ্ছে। জনগনের অর্থ নদীতেই জলাঞ্জলি দিচ্ছে। নদীর তলদেশে পলিথিন, প্লাস্টিক এবং পলি জমে নাব্যতা হ্রাসও নগরী জলাবদ্ধতার অন্যতম কারন। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় পানির ধারন ক্ষমতা কমে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-এভাবে কতোকাল চলবে? নাগরিক ভোগান্তির কি শেষ নেই। প্রাচ্যের ভেনিস কি তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে? জবাব খোঁজার চেষ্টা করছেন বরিশালের সচেতন নগরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ‘প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্লান ফর বরিশাল ডিভিশনাল টাউন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। এই মহাপরিকল্পনা গেজেট আকারেও প্রকাশিত। যার প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১০-২০৩০। কিন্তু এ পরিকল্পনার অগ্রগতি পুরোপুরি থমকে আছে। অবিলম্বে একে কার্যকারিতা দিতে হবে। ওই প্রকল্পে খাল সমুহ দখলমুক্ত, সংরক্ষণ ও বিনোদন সুবিধা সম্বলিত ডিটেইলড এরিয়া প্লান প্রনয়ন করা হয়েছে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ পরিকল্পনা এবং একই সাথে প্রাইমারী-সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি এই তিন শ্রেণীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে যেন শহর তলিয়ে না যায়, সে কারণে তিন হাজার জলাধার সংরক্ষনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় শহরের পুকুর সংরক্ষণের কথা বলা আছে। দ্রুত মাস্টার প্লান অনুমোদন, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠণ, ওয়াসা এবং গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষ গঠণ করা না হলে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি, নির্মান নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবেনা। পাশাপাশি নগরীর দখলকৃত সকল খাল উদ্ধার করে স্থায়ী সীমানা পিলার স্থাপন এবং মানসম্মত পুনঃখননের কোন বিকল্প নেই। বরিশাল সিটি করপোরেশন খাল পুনঃখনন ও সংরক্ষণ, সবুজায়ন, ওয়াকওয়ে নির্মানের জন্য প্রায় ২৫শ’ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ করেছিল কিন্তু সেটা অনুমোদন পায়নি। তারপরেও যেকোন বিবেচনায় ব্যর্থতার দায়ভার সিটি করপোরেশনের।
অতিবৃষ্টি, বন্যা এবং নদীর জোয়ারে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে নগরীর নিন্মাঞ্চল, রাস্তাঘাট, নীচু ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়া আর বৃষ্টির পানি নামতে “ফ্লাড কন্ট্রোল মহাপরিকল্পনার” আওতায় নগরীর চারপাশ দিয়ে বহমান নদীর পানি খালের প্রবেশমুখে বোটপাস (ডিজিটাল নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা)/গেট স্থাপন করে উঁচু জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ এবং নগরীতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পাম্প হাউসের মাধ্যমে নিস্কাশন করা গেলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের সমগ্র উপকূলীয় এলাকার জন্য অশনিসংকেত। এটা জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আলামত এবং বৈশ্বিক সমস্যা।
আগামী ৫০ বছরে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের ৩০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখন থেকেই সচেতন হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আর এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্তৃপক্ষ এবং অংশীজনকে সাথে নিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের উপায় নিশ্চিত করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সকল নাগরিককে সোচ্চার এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বসানাস’র আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান।
অপরদিকে বরিশাল নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, গত বছরের ২৪ আগস্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সময়ের মত জলাবদ্ধতা আবারও দেখল বরিশাল নগরবাসী। অথচ সিত্রাং এর সময় কীর্তনখোলা নদীর পানি জোয়ারের সময় বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এবং একই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছিল (২৪ আগস্ট সকাল নয়টা থেকে ২৫ আগস্ট সকাল নয়টা পর্যন্ত) ২৪১ মিলিমিটার। অথচ এবছর ৭ আগস্ট কীর্তনখোলা নদীর পানি জোয়ারের সময় বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৭ আগস্ট সকাল নয়টা থেকে ৮ আগস্ট সকাল নয়টা পর্যন্ত ১৭৭ মিলিমিটার। নদণ্ডনদীর পানি বিপদ সীমার নিচে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণও সিত্রাং তুলনায় কম। তারপরেও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই মেলেনি বরিশাল নগরবাসীর।
তিনি আরও বলেন, নদ-নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার ফলে জলধারণক্ষমতাও স্বাভাবিকভাবে দিন দিন হ্রাস পাঁচ্ছে। অপরদিকে শহর এলাকার মধ্যে যেসকল ছোট নদী বা খাল রয়েছে, সেগুলো বিভিন্ন জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত খনন কাজ শুরু করা যায়নি। পাশাপাশি অন্য যে উপায়ে ‘জলাধার’ যেখানে ড্যাপ ঢাকা শহরের জন্য সুপারিশ রেখেছে জলাধারগুলো সংরক্ষণ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার। সেভাবে প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করে জলাধার সৃষ্টি করতে হবে।