বিশ্বজুড়েই অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়েছে। আর দেশে যত মৃত্যু হয় তার মধ্যে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৭০ শতাংশ মানুষের। এসব অসংক্রামক রোগের মধ্যে ক্যানসার, কিডনি রোগ, হৃদরোগ অন্যতম।
নারীদের ক্যানসারের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রকোপ অন্যতম। প্রতিবছর যত নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, তাদের অর্ধেকের বেশিই মারা যায়। জরায়ুমুখ ক্যানসারকে ইংরেজিতে সার্ভিক্যাল ক্যানসার বলা হয়। বাংলাদেশে ক্যানসারজনিত মাতৃমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আর প্রথম কারণ স্তন ক্যানসার। সাধারণত বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, ঘন ঘন সন্তান নেয়া, নিজের সুরক্ষা না মানা, যৌনবাহিত নানা রোগে নারীর মৃত্যু ঘটে।
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব, অনিয়মিত মাসিক, সহবাস-পরবর্তী রক্তস্রাব অন্যতম। আর এ রোগ সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছরের বয়সের মধ্যে বেশি হয়।
জরায়ুমুখ ক্যানসার যদি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে তার চিকিৎসা রয়েছে। আর প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন স্ক্রিনিং পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেপস স্মেয়ার, ভায়া। প্রতি তিন বছর অন্তর এসব পরীক্ষা করতে হয়। অ্যাডভান্স অবস্থায় ডায়াগনসিস হলে অপারেশন অথবা রেডিওথেরাপি অথবা দুটি দিয়েই চিকিৎসা করা হয়।
বর্তমানে জরায়ুমুখ ক্যানসার নিয়ে অনেক বেশি প্রচারণার ফলে প্রতিষেধক হিসেবে এর ভ্যাকসিন অনেক বেশি পরিচিত। আর এই ভ্যাকসিন জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। এই টিকা প্রায় সাড়ে সাত বছরের মতো নিরাপত্তা দেয়। টিকার পর এটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যান্য সাধারণ ভ্যাকসিনের মতোই। এই টিকা গর্ভাবস্থায়ও দেয়া যাবে। তবে নতুন করে দিতে হলে গর্ভাবস্থার পরে দিলেই ভালো।
টিকা কারা নিতে পারবেন?
টার্গেট গ্রুপ: ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী কন্যাশিশু। কমপ্লিমেন্টারি গ্রুপ: ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত। তা ছাড়া সেক্সুয়ালি অ্যাক্টিভ যে কেউ দিতে পারবে। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত দুই ডোজ। ১৫ বছরের পরে তিন ডোজ লাগবে।
সাধারণত প্রথম ডোজের ছয় মাস পর দ্বিতীয় ডোজ (অনূর্ধ্ব ১৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে)। প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ, দ্বিতীয় ডোজের ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ (১৫ বছর এবং তার ঊর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে)। তবে অল্প বয়সী মেয়েরা যাদের যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি, তাদের স্ক্রিনিং দরকার নেই।
জরায়ুমুখ ক্যানসারের এই টিকার দামও খুব বেশি নয়। প্যাপিলোভ্যাক্স নামের ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের দাম পড়বে ২৫০০ টাকা। আর এটি পাওয়া যাবে বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরসহ গাইনি বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে।
অনেকের ধারণা, একবার টিকা নেয়া হয়ে গেলে তার কিছুর দরকার নেই। কিন্তু টিকা নেয়ার পরও চিকিৎসকের কাছে রুটিন ফলোআপে থাকা উচিত। এতে এই রোগের বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।