
জয়পুরহাটের
কালাইয়ে গবাদি পশু দেওয়ার নামে প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহকের জমানো এক কোটি টাকা হাতিয়ে
নিয়ে উধাও হয়েছে সওজ (স্মার্ট অর্গানাইজেশন অব জয়পুরহাট) নামের এক এনজিও’র পরিচালক। অফিস বন্ধ করে রাতারাতি
আসবাবপত্র নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক।
জমানো টাকা
না পাওয়ার আশংকায় ভূগছেন গ্রাহকরা। কয়েকদিন ধরে অফিস বন্ধ দেখে ফেরত যাচ্ছেন গ্রাহকরা।
বাধ্য হয়ে আফছার আলী নামে এক গ্রাহক বৃহস্পতিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে,
২০২৩ সালে কালাই উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে গবাদি পশু পালনে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে উপজেলার
মাত্রাই বাজারে সওজ নামে একটি এনজিও’র কার্যক্রম শুরু হয়।
সমিতিটি চালানোর
জন্য প্রতিটি গ্রামে ১৫ থেকে ২০ সদস্যর ২/৩ টি করে সমিতি গঠন করেন একটি চক্র। প্রত্যকের
নিকট থেকে ভর্তি ফি বাবদ ১০০ টাকা এবং সাপ্তাহিক সঞ্চয় ৫০ টাকা করে জমা নেন তারা। গ্রাহকদের
জমানো অর্থের বিনিময়ে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি দেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে বেশ
কয়েকজনকে দেওয়াও হয়েছে। গত ৯ মাসে গ্রাহক সংখ্যা দাড়িয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। এসবে আকৃষ্ট
হয়ে আমানতকারীরা সেখানে সঞ্চয় জমা করেন। মাত্রাইসহ আশপাশের প্রায় শতাধিক গ্রামের পাঁচ
হাজার গ্রাহকের জমানো প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা উধাও।
শুধু তাই নয়,
যারা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তাদের মধ্যে ২০ জনের নিকট থেকে জামানত বাবদ ৩ লাখ টাকা
নেওয়া হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৯ মাস আগে উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের
আরবাব গ্রামে ১৬ সদস্যর একটি সমিতি গঠন করে এনজিও’র কর্মীরা। সেদিন নির্বাহী পরিচালক ও কালাই উপজেলার শকুনা গ্রামের বাসিন্দা
জয়নুল হোসেন এ সমিতিতে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় এনজিও’র ব্যবস্থাপক ও মাত্রাই ইউনিয়নের
বিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা মফিদুল ইসলাম এবং মাঠ কর্মী ও মাত্রাই গ্রামের বাসিন্দা সুমাইয়া
আক্তার উপস্থিত ছিল। ১৬ জনের ভর্তি ফিসহ সঞ্চয় জমা হয়েছে ৩২ হাজার ৮শত টাকা। গত সপ্তাহে
তাদের সমিতির দুইজন সদস্যকে ছাগল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা এসে অফিসের মুল গেটে
তালা ঝুলা দেখে হৈইচৈই করেন।
এরপর সমিতির
পক্ষে গ্রাহক আফছার আলী বাদী হয়ে থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এনজিও কর্মী
সুমাইয়া আকতার বলেন, আমি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। এইচএসসি পাস করে বাড়িতেই ছিলাম। পরিচালক
জয়নুল পরিচিত বলে ১০ হাজার টাকা জামানাত দিয়ে সেখানে কাজ করছি।
এখন সবাই পলাতক।
গ্রাহকরা আমার বাড়িতে ভীড় করছে। গ্রাহকের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাতো পাঁচ
হাজারের কম না, বরং বেশীই হবে। আমিও প্রতারক জয়নুলসহ জড়িত সবার শাস্তি চাই। সওজ এনজিওর
ব্যবস্থাপক মফিদুল ইসলাম জানান, ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে তিনি মাত্রাই শাখায় ব্যবস্থাপকের
দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর
বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি সমিতির সদস্যদের গরু,
ছাগল ও হাঁস-মুরগি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার রাতে সবকিছু নিয়ে অফিসের মুল গেলে
তালা ঝুলিয়ে পরিচালক পালিয়েছে। সওজ এনজিও’র পরিচালক জয়নুল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিপদে
পড়ে তিনি এলাকা ছাড়া হয়েছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহা. আতাউর রহমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজের জন্য তাদের অনুমতি দেওয়া
হয়েছে। কিন্তু সঞ্চয় বা ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা জন্য নয়। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) ওয়াসিম আল বারি বলেন, পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত
করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, সমিতির সদস্যরা অভিযোগ করেছে। ব্যবস্থা নিতে উপজেলা
সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।