সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর বুক চিরে বয়ে চলা শত শত চরবাসীর যাতায়াত আর মালামাল বহনের এক অন্যতম জনপ্রিয় বাহন ঘোড়ার গাড়ি।
দূর্গম বালুময় পথে যেখানে ইঞ্জিন চালিত গাড়ি মালামাল বহন ও যাত্রী সেবায় ব্যর্থ, সেখানে ঘোড়ার গাড়ি অনায়াসে চলে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাটি যমুনা দ্বারা বিভক্ত হয়েছে যমুনা পূর্বপাড়ের ছয়টি ইউনিয়ন নাটুয়াপাড়া, খাসরাজবাড়ি, মনসুরনগর, তেকানি, চরগিরিশ নিশ্চিন্তপুর। চরের এই ছয়টি ইউনিয়নে আলু, তামাক, ধান, বাদাম, ভুট্টা, মরিচসহ নানা শাক-সবজি উৎপাদন হয়। বালুচরের সঙ্গে মূল সড়কের যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় চরের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে বালুচরে পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে বাধ্য হয়ে ফসল বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হতো কৃষক। তাই ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় এসব এলাকায় চর ও বালুময় রাস্তা বেশি হওয়ায় এখানে মালামাল পরিবহনের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় বাহন ঘোড়ার গাড়ি।
তুলনামূলক পরিশ্রম বেশি হলেও খরচ কম হওয়ায় ঘোড়ার গাড়ি চালানোকে কাজিপুর চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার মানুষ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ঘোড়ার গাড়ি চালক হাসান আলী দৈনিক আজকের দর্পণকে জানান, ২৫-৩০ হাজার টাকার একটি ঘোড়া আর ১০ হাজার টাকার কাঠ ও বাঁশের তৈরী গাড়ি হলেই তৈরী হয় এই ঐতিহ্যবাহী বাহন।
খাসরাজবাড়ি ইউনিয়নের আরেক ঘোড়ার গাড়ি চালক সোবাহান মিয়া জানান, একটি ঘোড়াকে দৈনিক ২০০ টাকার খাবার দিলেই তাকে দিয়ে প্রায় ১ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
নদীপথের রাস্তা হওয়ায় বর্ষায় কাঁদা আর গ্রীষ্মে ধূ ধূ বালুচরে মালামাল বহনে ঘোড়ার গাড়ির জুড়ি নেই। কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এই উপজেলাটি একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ফসল আনা নেওয়ার কাজে এসব অঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির কদর অনেক বেশি।
ফসল টানা ছাড়াও ইট, বস্তা, কাঠের গুল আনা নেওয়ার কাজেও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয় এখানে।
জানা যায় প্রায় একশ বছর ধরে এসব অঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি চলার প্রচলন রয়েছে। দুই যুগ আগেও ঘোড়ার গাড়িতে মানুষ চলার চল ছিলো। কাঠের পাঠাতনে নরম আসন বিছিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতো মানুষজন। কালের বিবর্তন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন ঘোড়ার গাড়িতে মানুষ না চললেও মালামাল বহন করে আসছে।