২৩ বছর পর সিনেমা ফিরল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে। গত ২০ সেপ্টেম্বর আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’ সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে শ্রীনগরের শিবপুরে যাত্রা করে কাশ্মীরের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স। ভারতীয় মাল্টিপ্লেক্স প্রতিষ্ঠান ইনক্স ও কাশ্মীরি ব্যবসায়ী বিজয় ধরের অংশীদারত্বে দিল্লি নিযুক্ত গভর্নর মনোজ সিনহা এটি নির্মাণে নেতৃত্ব দেন।
কাশ্মীরে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো মাল্টিপ্লেক্সের পাশেও স্থাপন হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে গেট। কেবল দর্শক ও তাদের গাড়ি প্রবেশের প্রয়োজনে অল্প করে খুলে দেয়া হয় কিছুক্ষণ পরপর। এমনিতেই শিবপুর কাশ্মীরের সবচেয়ে নিরাপত্তাবেষ্টিত অঞ্চল। সেখানে প্রবেশের প্রধানতম রাস্তায়ই অবস্থিত বাদামি বাগ ক্যান্টনমেন্ট। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিফটিন কর্পসের সদর দপ্তর এ ক্যান্টনমেন্ট।
মাল্টিপ্লেক্সের গেটেই দুটি নিরাপত্তা চৌকি। তল্লাশির জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে একটা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাকে। ভবনের ভেতরেই পুলিশ ও প্যারামিলিটারি নিয়ত পর্যবেক্ষণে রয়েছে। শুরুর দিন বেশ ভিড় থাকলেও ক্রমে কমে আসে চাপ। ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাশ্মীরের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একদল তামিল ছাত্র গিয়েছিলেন মনি রত্নমের ‘পোনিয়িন সেলভান’ দেখতে। কারগিল থেকে আসা কিছু ছাত্র আর কাশ্মীরের স্থানীয় কিছু তরুণকেও দেখা যায় সেখানে। তৃতীয় প্রেক্ষাগৃহের আসন সংখ্যা ২২৩ হলেও সেখানে শো উপভোগ করেছে মাত্র ৩০ জন দর্শক। কাশ্মীর নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘বিক্রম ভেদা’ও দেখানো হয়। দেখানো হয় ২০১৭ সালের তামিল অ্যাকশন থ্রিলার ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স’-এর হিন্দি ডাব।
মাল্টিপ্লেক্সটি মূলত নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ১ অক্টোবর। প্রতিদিন কয়েকটা শো থাকে। সব মিলিয়ে ১৮ হাজার মানুষের উপভোগের সুবিধা। কিন্তু টিকিট বিক্রি হয় মাত্র ১২ শতাংশ। দর্শকের সিংহভাগই পর্যটক ও অন্যান্য প্রদেশ থেকে কাশ্মীরে পড়াশোনা করতে আসা তরুণ। তার পরও চলছে শো। যদিও রাত পৌনে ১০টায়ই নিরাপত্তার জন্য শেষ হয়ে যায় সব আয়োজন।
কাশ্মীরে প্রথম প্রতিষ্ঠিত সিনেমা হলের নাম প্যালাডিয়াম টকিজ, ১৯৩২ সালে শ্রীনগরের লাল পাঞ্জাবি শিখ ব্যবসায়ী ভাই অনন্ত সিং গৌড়ির তত্ত্বাবধানে। ষাটের দশকে এর দ্রুত প্রসার হতে থাকে। শ্রীনগরের সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণে অনন্তনাগ ও উত্তরে বারামুল্লায়। ১৯৯০ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রভাবশালী আল্লাহ টাইগার্স সব সিনেমা হল ও সরাইখানা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় শ্রীনগরের নয়টিসহ মোট ১৫টি সিনেমা হল। ১৯৯০ সালে প্যালাডিয়াম টকিজ বিধ্বস্ত হয় আগুনে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকেই ভারত সরকার সিনেমা হলগুলোকে পুনরায় উজ্জীবিত করার প্রচেষ্টায় হাত দেয়। সে সূত্র ধরে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে রিগ্যাল সিনেমাকে পুনরায় চালু করা হলেও বন্ধ হয়ে যায় প্রথম দিনেই। বন্ধ হয়ে যাওয়া সে সিনেমা হলগুলো ব্যবহৃত হতে থাকে নিরাপত্তা চৌকি ও শপিং সেন্টার হিসেবে।
কাশ্মীর আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের নেয়া পদক্ষেপের অংশ মাল্টিপ্লেক্স স্থাপন। গভর্নর মনোজ সিনহা উদ্বোধন করেছেন এটির। তিনি একে ওই অঞ্চলের বৃহত্তর আর্থসামাজিক বিপ্লবের অংশ হিসেবে মনে করেন। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারায় উদ্ধৃত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্ত্বশাসন বাতিল করে। এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর পৃথকভাবে কেন্দ্র শাসিত দুটি অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়।