রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ
দিতে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাকার্তার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। জাকার্তা থেকে ৮ সেপ্টেম্বর
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যাবেন তিনি। গতকাল শনিবার
(২ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন।
তিনি জানিয়েছেন যে রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা এবং অন্য সফরসঙ্গীদের
নিয়ে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি (বিজি ১৯১০) ফ্লাইটে সোমবার দুপুরে
হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ) ত্যাগ করার কথা রয়েছে। বিমানটি
সেদিনই সোয়া ৬টায় জাকার্তার সোয়েকার্নো-হাত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
তিনি আরও জানান,
অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা
ওয়াজেদ হোসেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও সফরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে থাকবেন।
বঙ্গভবনের এই
মুখপাত্র বলেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৩ সালের আসিয়ান চেয়ার জোকো উইডোডোর
(যিনি জোকোই নামে পরিচিত) আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে (জেসিসি)
৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ৪৩তম আসিয়ান (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংস্থা) শীর্ষ
সম্মেলনে এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। রাষ্ট্রপতি
জাকার্তার হোটেল লে মেরিডিয়ানে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অবস্থান করবেন।
এদিকে প্রবৃদ্ধির
কেন্দ্রবিন্দু প্রেক্ষিত-আসিয়ান’ থিমকে সামনে রেখে জাকার্তায় ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন তিন দিনব্যাপী
ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি
সাহাবুদ্দিন আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ১৮তম পূর্ব
এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দেবেন। গেস্ট অব চেয়ার হিসেবে আঞ্চলিক স্থাপত্যকে শক্তিশালী
করার বিষয়ে সমাপনী ভাষণ দেবেন।
এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোডো এবং থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং তিমুর-লেস্টের
আরও কয়েকজন রাষ্ট্রীয় নেতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
৬ সেপ্টেম্বর
রাষ্ট্রপতি হুতান কোটা গেলোরা বুং কার্নোতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকোই কর্তৃক
আয়োজিত গালা নৈশভোজে যোগ দেবেন। ৪৩তম আসিয়ান সম্মেলনের সময় ১২টি সভায় সভাপতিত্ব করবেন
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ড. মোমেন বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সফরে বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে
জ্বালানি ও স্বাস্থ্য সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা
ছাড়াও দুটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ৪৩তম
আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন শেষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন
ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা স্বাস্থ্যের পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে
জাকার্তা ত্যাগ করবেন। সূচি অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের
একটি বিমানে (বিজি-৫৮৫) সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরবেন রাষ্ট্রপতি।
আরও পড়ুন>> এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ায় খুশি উত্তরাবাসী
প্রসঙ্গত, আসিয়ান
হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা, যার মধ্যে ব্রুনাই
দারুসসালাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাও পিডিআর, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর,
থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং তিমুর লেস্টে বা পূর্ব তিমুর দেশসমূহ রয়েছে।
আসিয়ান শীর্ষ
সম্মেলন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক
উন্নয়ন সম্পর্কিত সদস্যদেও একটি দ্বিবার্ষিক সভা। এ ছাড়া এটি একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক
(এশিয়া) এবং আন্তর্জাতিক (বিশ্বব্যাপী) সম্মেলন হিসেবে কাজ করে, যাতে বিশ্বনেতারা বিভিন্ন
সমস্যা ও বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে, সহযোগিতা জোরদার করতে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার
জন্য এ সম্পর্কিত শীর্ষ সম্মেলন এবং বৈঠকে যোগদান করেন।
আসিয়ান সচিবালয়ের
তথ্য অনুযায়ী, পরে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের (ইএএস)
সভাপতিত্ব করবেন, যা ১০টি আসিয়ান দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ফেডারেশন, নিউজিল্যান্ড,
অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতসহ ১৮ সদস্য নিয়ে গঠিত।
ওয়েবসাইটে সংবাদ
বিজ্ঞিপ্তিতে বলা হয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ফোরামের নেতারা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী,
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিচালক এবং বিশ্বব্যাংকও জাকার্তায়
৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
আরও পড়ুন>> নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে রাশিয়াসহ তিন দেশের আমন্ত্রণ বাতিল
৪৩তম আসিয়ান
শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ চীন সাগর, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত অঞ্চল
(এসইএএনডব্লিউএফজেড), আসিয়ান মেরিটাইম আউটলুক, ইন্দো প্যাসিফিকের আসিয়ান আউটলুক (এওআইপি)
সম্পর্কিত আচরণবিধি এবং মিয়ানমারের বিষয়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা
করা হবে।
জাকার্তায় ৪৩তম
আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও প্রণয়ন করবে, যেমন আসিয়ান অবকাঠামো
শক্তিশালীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, সুনীল অর্থনীতি এবং সবুজ অর্থনীতি। সেই সঙ্গে ডিজিটাল
অর্থনীতি এবং পেমেন্ট ইকোসিস্টেম সম্পর্কিত চুক্তির বিষয় রয়েছে।