দুইদিন আগে সোমবার মা-বাবাকে ফোন করেছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে কোনো রকম
চিন্তা না করতে বারবার বারণ করেন। শেষে বলেছিলেন, খু্ব ভালো আছেন। অসুবিধা হচ্ছে না
কোনো। সেই ভালো থাকা মানুষটি বুধবার হঠাৎই নাই হয়ে গেলেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে স্থানীয়
সময় বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে একটি গোলা এসে আঘাত করে অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশের
জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে। নিহত হন ইঞ্জিনিয়ার
হাদিসুর রহমান (৩২)। তিনি ছিলেন ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার।
ইউক্রেনের বন্দরে থাকা ওই জাহাজের আরেক
একজন ইঞ্জিনিয়ার বলেন। গোলার আঘাতে জাহাজের একটা অংশে আগুন লেগে যায়। যেখানে গোলাটা
আঘাত করে, ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলেন তিনি। আগুন তার শরীরেরও লেগে যায়।
মো. হাদিসুর রহমানের বাড়ি বরগুনার বেতাগী
উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক মাস্টার। মা-বাবার একমাত্র
সন্তান তিনি। ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হাদিসুরের মা-বাবা।
চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার
পর ২০১৮ সালে যোগ দেন ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি
ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায় জাহাজটি। সেদিনই রাশিয়ার হামলা শুরু হয়। বন্ধ হয়ে
যায় বন্দরের সব কার্যক্রম ।
‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’সহ ওই বন্দরে
আটকে পড়ে বেশ কিছু জাহাজ। ক্যাপ্টেন জি এম নুর ই আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ মোট
২৯ বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন জাহাজে।
তুরস্ক হয়ে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দর থেকে
জাহাজটির ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হামলার কারণে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বন্দর
ছাড়ার অনুমতি না থাকায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে একই স্থানে ভাসছে।
অলিভিয়া বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায়
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাড়াও পাচ্ছেন না তারা। এর আগে, জাহাজটিতে আটকে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা
জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও জাহাজে পর্যাপ্ত খাবার থাকায় তাদের দুশ্চিন্তা
কম।
নাবিকদের ধারণা, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন
আটকে থাকতে হতে পারে। সে বিবেচনায় খাবার বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন নাবিকরা। বাংলাদেশ
থেকে উদ্বিগ্ন স্বজনরা নাবিকদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন। তার মধ্যেই এই মর্মান্তিক
ঘটনার সাক্ষী হলেন তারা