প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার বিধ্বস্ত খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলা ও গাতিরঘেরী নামক স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরের জোয়ারের আগে বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে না পারলে খেতের ফসল, ঘরবাড়ি সব লোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, কয়রা উপজেলার হরিণখোলা ও গাতিরঘেরীর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের নিয়ে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া কয়রায় হোগলা, দোশহালিয়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালী, গাববুনিয়ার, আংটিহারা, ৪ নম্বর কয়রা সুতির গেট ও মঠবাড়ির পবনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের স্ব-স্ব এলাকার বাঁধের দিকে খেয়াল রাখার জন্য বলা হয়েছে । সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ১ হাজার ৯১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি এই বেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। এখন এই ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের পরিমাপ আরও বেশি। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে খুলনা অঞ্চলে রবিবার দুপুর থেকেই আকাশ মেঘলাসহ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত ১২টার পর থেকে দমকা বাতাসের সঙ্গে মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার। তিনি জানান, রবিবার রাত ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুর ১২টার পর থেকে বৃষ্টিপাত আরও বেড়েছে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) রণজিৎ কুমার সরকার জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি এড়াতে খুলনা জেলার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জনের জন্য ৪০৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ উপজেলায় ১১৮টি, কয়রা উপজেলায় ১১৭টি, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২৭ টি, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২৫ টি, পাইকগাছা উপজেলায় ৩২ টি, তেরখাদা উপজেলায় ২২ টি, রূপসা উপজেলায় ৩৯ টি, ফুলতলা উপজেলায় ১৩ টি ও দিঘলিয়া উপজেলায় ১৬টি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, বিকাল ৪টা থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেবে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জরুরি শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, সাইক্লোন শেল্টারে যারা আসবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আগতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কাজ চলছে।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায়-সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলায় ৬৫ জন মৃত্যুবরণ করে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।