মোহাম্মদ ফারুক, কক্সবাজার
কক্সবাজারে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর শহরের লালদিঘি পশ্চিম পাড়ের ঋষি সম্প্রদায়ের ২১ জনকে বিনা ভাড়ায় স্থায়ীভাবে দোকান উপহার দিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে লালদিঘির উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগী হিসেবে তাদের স্থায়ী দোকান উপহার দেয়া হয়েছে । এতেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কক্সবাজার উন্নয়ন র্কতৃপক্ষ (কউক)।
কউক সূত্রে জানা গেছে, লালদিঘির পশ্চিম পাড়ে শতবছর ধরে বংশ পরম্পরায় ঝুপড়ি দোকানে জুতা পালিশ ও সেলাইয়ের কাজ করে আসছিলো ঋষি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠি। লালদিঘির উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বর্ধনে ঋষিদের অপসারণ না করেই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় কউক। এর অংশ হিসেবে পুকুর পাড়ের নির্মিত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বর্ধন স্থাপনায় তাদের জন্য দোকান রেখেই বিশেষ নকশা প্রণয়ন করা হয়। সে মোতাবেক ওইখানে থাকা ২১জন স্থায়ী ঋষির জন্য ২১টি পাকা ও সুদৃশ্য দোকান তৈরি করা হয়। তাদের হাতে গত ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দোকানগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থায়ীভাবে দোকান পাওয়া বুট পালিশওয়ালা নিধন দাস বলেন, এই পেশা আমার বাপ, দাদার পেশা, এই জায়গাতে আমার পূর্বপুরুষরা এই কাজকরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তাদের ন্যায় আমিও বিগত ২৫ বছর ধরে এই পেশাতে আছি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, বিশ্বের কোথাও বুট পালিশ মার্কেট আছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশে কক্সবাজার শহরে আমরা তাদের জন্য এই প্রথম স্থায়ীভাবে বিনা ভাড়ায় জীবিকা নির্বাহ করার জন্য জায়গা করে দিয়েছি।
দোকান পাওয়া বুট পালিশওয়ালা হরে কৃষ্ণ দাস, মুখেশ দাস, অরবিন্দু দাস বলেন, আমরা ফোরকান স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। ওনি আমাদের ডেকে এই উপহার দিয়েছেন। আমাদের মাথার উপর ছাদ ছিলনা ,রোদে শুকেয়েছি, বৃষ্টিতে বিজেছি এখন আমদের মাথার উপর ছাদ হয়েছে।
কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক মইনুল হাসান পলাশ জানান, শহরের লালদিঘির পাড়ে ৫০/৬০ বছর ধরে রাস্তার পাশে ভাংগা ঝুপড়িতে বসে, জুতো পালিশ আর জুতো সেলাইয়ের কাজ করেন হতদরিদ্র ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ। একজন লে.কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ এই প্রথম তাদের নিয়ে ভাবলেন। তাদের ডেকে নিয়ে গেলেন নিজের অফিসে। জানতে চাইলেন,কি করা যায়? অবশেষে তাদের জন্য বানিয়ে দিলেন
“বুট পালিশ মার্কেট”। এ এক অভিনব উদ্যোগ। মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত!
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাচ্ছি। নানা বাধাঁ অতিক্রম করে কক্সবাজারকে সাজাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঐতিহ্যের ওই লালদিঘির পাড়ে ঋষিদের পেশাকে সম্মান জানিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করার জন্য ওই দোকানগুলি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।