কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে রয়েছে ১৬টি নদনদী। এসব নদনদীর অববাহিকার রয়েছে অন্তত সাড়ে চারশত চর ও দ্বীপ চর। এসব চরাঞ্চলের বেশীর ভাগ চরের বালু মাটিতে অনান্যবারের ন্যায় এবারও বাদাম চাষ করেছেন কৃষকরা। ফলনও হয়েছে সন্তোষজনক। চরের জেগে ওঠা বালু মাটি বাদাম চাষ উপযোগী। এ কারণেই এখানকার কৃষকরা লাভের আশায় ফসলের প্রকারভেদ অনুযায়ী সাদা ধবধবে বালু মাটির বুকচিড়ে বাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
বাদাম চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালু মাটি বাদাম চাষের জন্য উপযোগী। বাদাম রোপণ করা থেকে শুরু করে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় তিন মাস। প্রতি বছর বন্যায় ব্যাপক হারে ভাঙনের ফলে মাটি সরে গিয় জমিতে বালি মাটি হওয়ায় অন্য কোন ফসল হয় না সেখানে। তবে কিছু কিছু জায়গায় দোআশ মাটি থাকায় গমের ফলন হয়। অনান্য ফসলের চাষ ভালো ফসল না হলেও বালু মাটিতে বাদাম চাষ ভালো হয়। আগের চেয়ে বর্তমানে বাজারে বাদামের চাহিদা বেশী হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছে চরাঞ্চলের কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় বাদাম চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৩শ ৭৫ হেক্টর জমিতে। তবে অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর, উলিপুর ও চিলমারীতে বাদামের আবাদ বেশি হয়েছে।
চিলমারীর নয়ারহাট এলাকার বাদাম চাষী আকবর মোল্লা বলেন, আমি এবার দুই বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করেছি। ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে। বাদাম চাষে বিঘা প্রতি সবমিলিয়ে খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মত। এক বিঘা জমিতে বাদাম উৎপাদন হবে ১৫-১৬ মণ। বাদামের মৌসুমে প্রায় ২হাজার টাকা প্রতি মণ বাদাম বিক্রি করা যায়। আশা সবকিছু ঠিকটাক থাকলে দুই বিঘা জমির বাদাম ৭০-৭৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো।
জেলা সদরের চর যাত্রাপুরের আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করেছি। এক বিঘা জমিতে প্রায় ১০ কেজির মত বীজ লাগে। বাদামের বীজ রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে তিন মাসের মত সময় লাগে। বাদাম আবাদে লোকসান নাই বললে চলে। কোন প্রকার সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। এক বিঘা জমির বাদাম ৩০-৩৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। আর এক বিঘা জমিতে সবমিলিয়ে খরচ হয় মাত্র ৪-৫ হাজার টাকা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, বাদাম লাভজনক আবাদ। কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার মধ্যে উলিপুর, চিলমারী ও সদরে বাদামের আবাদ বেশি হয়। ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। আশা করছি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কৃষকরা বাদাম বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন।