দেশে কোরবানির পশুর কোনও সংকট নেই। তাই কোরবানির পশু আমদানিও করতে হবে না। বরং অতিরিক্ত পশু রয়েছে এবার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, এ বছর কোরবানির জন্য পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। গতবছরের তুলনায় এ বছর ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি পশু বেশি রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, এ বছর চাহিদার তুলনায় ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারও দেশে উৎপাদিত গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। দেশে প্রাণিসম্পদের উৎপাদন এতটা বেড়েছে যে আমরা কোনভাবেই দেশের বাইরের প্রাণির উপর নির্ভরশীল হবো না। অবৈধভাবে দেশে পশু এলে দেশের অর্থ দেশের বাইরে চলে যায়। অবৈধ উপায়ে পশু বিদেশ থেকে আসায় সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যে পশু আসে সেটির স্বাস্থ্যগত অবস্থাও জানা যায় না। এছাড়াও দেশের খামারে যারা পশু উৎপাদন করছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয়গুলো কঠোরভাবে দেখা দরকার। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে কোনভাবেই গবাদিপশু অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে—বিষয়টি দেখবার জন্য।
এদিকে এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, দেশে কোরবানির পশুর কোনও সংকট নেই। তাই কোরবানির পশু আমদানিও করতে হবে না। বরং অতিরিক্ত পশু রয়েছে এবার। কোরবানির হাটে এ বছর কোনভাবেই রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে গত বছরের মতো এবারও সারাদেশে পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, কোরবানির পশু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাজারজাত করার সুবিধার্থে অন্যান্য বছরের মতো এবারও রেলে গবাদিপশু পরিবহন করা হচ্ছে। যে অঞ্চলে গবাদিপশুর উৎপাদন বেশি সে অঞ্চল থেকে যে অঞ্চলে উৎপাদন কম সে অঞ্চলে রেলের মাধ্যমে পশু পরিবহন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রেল বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে। এতে কম খরচে পশু পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছেন খামারিরা। দেশের সর্বত্র যাতে কোরবানির পশু পর্যাপ্ত থাকে সে অনুযায়ী পশু পরিবহনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
খামারিরা যাতে পছন্দ অনুযায়ী হাটে কোরবানির পশু বিক্রি করতে পারে এবং জোর করে কেউ পথে পশু নামাতে না পারে সেজন্য খামারিরা চাইলে ৯৯৯ এ যোগাযোগ করতে পারবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছে সূত্র।
এ বছর হাটে যাতে কৃত্রিম সংকট না হয়, সে জন্য হাটে আনার পথে, বাড়িতেও পশু বিক্রি করা যাবে। তবে রাস্তায় হাট বসানো যাবে না। এ ছাড়া ডিজিটাল হাটের মাধ্যমেও পশু বিক্রি করা যাবে।