চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি পানি গ্রহণের সুবিধা, দুটি জলাশয় এবং জল সঞ্চালনসহ একটি দিনে ৬০ মিলিয়ন লিটারের জল শোধনাগার নির্মাণের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
কোরিয়ার রপ্তানি-আমদানি ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) উন্নয়ন তহবিল দ্বারা সরবরাহিত কোরিয়ান ইডিসিএফ ঋণের সাথে ভান্ডলঘুড়ি জল সরবরাহ প্রকল্প নামে বিতরণ প্রধান পাইপলাইন প্রকল্প। চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ সেবাকে আরও উন্নত করার জন্য, চট্টগ্রাম ওয়াসন ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে ২-৩ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়ার কথা বলেছে ওয়াসা। পটিয়ার শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশ থেকে ২৪ মিটার গভীরে ২৯০ মিটার পাইপলাইন বসাচ্ছে ওয়াসা। খালের গভীরে ১.৫ মিটার টানেলের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানি সরবরাহ পাইপ। বিশাল এ কর্মযজ্ঞ শুরু হয় ২০২২ সালের অক্টোবরে। আগামী সেপ্টেম্বরে এ ক্রসিংয়ে পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হবে বলে জানায় চট্টগ্রাম ওয়াসা।
জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছেন। এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ওয়াসার পানি উৎপাদন বাড়বে দৈনিক আরো ৬ কোটি লিটার। যা সরবরাহ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে। প্রকল্পের আওতায় ৬ কোটি লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পানি শোধনাগার, প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন, কনভয়েন্স ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন এবং কোরিয়ান ইপিজেড ও পটিয়ায় দুইটি পানির রিজার্ভার নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে পানির চাহিদা চিন্তা রেখে ওয়াসা নদীর ওপারে ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। শেখ হাসিনা পানি সরবরাহ প্রকল্প ১ ও ২ এবং শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্পের পর ওয়াসার নতুন এ প্রকল্পটি উৎপাদনে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আগামী নভেম্বরে ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি উৎপাদনে যাবে। কর্ণফুলী নদীর ওপারে শিল্প মালিক ও গ্রাহকরা ব্যাপক উপকৃত হবেন। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি চালুর পর নদীর ওপারে ব্যাপক শিল্পায়ন ও বসতি বাড়বে। তাই সেখানে পানির চাহিদাও বাড়বে।
বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা কিছু অংশে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, সরকারি ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি সরবরাহের জন্য ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে এই প্রকল্পের জন্য পানি শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে অবস্থিত শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারায় ১৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের অন্যান্য কাজগুলোও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ওয়াসাকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের পার্ট-১ এর অধীনে গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগের কাজ চলছে। এরপর শুরু হবে পার্ট-২ এর অধীনে গ্রাহক সংযোগ। এসব এলাকায় পানির চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি লিটার। প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যেতে পারে।