চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া অংশে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। যার ৬০ ভাগের নেই যথাযথ ফিটনেস। এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে হাইকোর্টের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোনো তদারকি না থাকায় এসব অবৈধ অটোরিকশা সহজেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ চালকের লাইসেন্স নেই। সড়কে চলে প্রতিযোগিতা। কে কার আগে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।
সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন অভিযান না থাকার কারণে অটোরিকশা চালকরা কাপ্তাই সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বেশিরভাগ গাড়িতেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রীরা। অধিকাংশ গাড়ির ফিটনেস নেই। অটোরিকশা ইন্ডিকেটর লাইট ঝুলে পড়েছে। আবার কোনোটার সামনের এক অংশই ভাঙা। পেছনের বডি ঝুলে আছে। টায়ারেরও নিয়ন্ত্রণ গতিপথ অনুসরণ সঠিক নেই। ভেতরে ৩ জনের জন্য বরাদ্দ রাখা সিটগুলো বসার উপযোগী হলেও জোড়াতালি দেওয়ার আর জায়গা নেই। আবার সামনে ড্রাইভারে সিটে দু'পাশে সুযোগ বুঝে ড্রাইভারসহ চারজন চাপিয়ে বসে চলে গাড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে লক্কর-ঝক্কর অটোরিকশা। চালকের আসনে যিনি বসে আছেন তারও নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। টাকা দিলে সব ম্যানেজ হয়ে যায়। সিএনজি অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব মতে, রাঙ্গুনিয়ায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে অটোরিকশা চলে প্রায় ১২ হাজারের অধিক। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ গাড়ির ফিটনেস নেই। এ ছাড়া এ রুটের কিছু কিছু যাত্রীবাহী বাসের বয়স ১৫-২০ বছর ছুঁইছুঁই। কিন্তু গাড়ির মালিক, ট্রাফিক বিভাগ কারও যেন সেদিকে দেখার সময় নেই। সবাই ছুটছেন টাকার নেশায়। ভাঙাচোরা, বিপজ্জনক যানবাহন চলাচল বেড়েই চলেছে। সব মিলিয়ে লক্কর-ঝক্কর মার্কা কয়েক হাজার এসব অটোরিকশা কাপ্তাই সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে নিজেদের প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করছে যাত্রীরা। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গেল বছরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫০টিরও বেশি। এতে নিহত হয়েছে ১৫ জন। আহতদের তালিকায় শতাধিক যাত্রী। সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কন্যার জন্ম নিবন্ধন আনতে গিয়ে কাপ্তাই সড়কে প্রাণ হারান পাপন বড়ুয়া (৪০) নামে এক প্রকৌশলী। এভাবেই মৃত্যুকে নিত্যদিনের সঙ্গী করে এ সড়কে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজার হাজার যাত্রী। এদিকে কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া অংশে দেখা যায়, প্রতিটি বাজারের মোড়ে অবৈধ কিছু সিএনজি স্ট্যান্ড। যে স্ট্যান্ডগুলো সড়কে কিছু অংশ দখল করে যাত্রী ওঠানামার ব্যবসা করছে। যেখানে নিজের ইচ্ছেমতো দাঁড়িয়ে নেওয়া হয় যাত্রী। এসব অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোর কারণে যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।
কাপ্তাই সড়কে চলাচল করা যাত্রী মো.আজগর হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক বিভাগ যদি সঠিকভাবে তদারকিতে নামে তাহলে অটোরিকশার দাপট বন্ধ হবে। অন্যদিকে গাড়ির মালিক, শ্রমিক ও পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, গাড়ি রাস্তায় চালাতে ঘাটে ঘাটে মাসোহারা দিতে হয়। তার মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির নামে গাড়ির ড্রাইভার থেকে চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা আদায় শেষে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অনুপাতে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার এসব গাড়ির ভিড়ে সিএনজি অটোরিকশা কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রতিটি স্টেশনে যানজট লেগে থাকে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, বিআরটিএতে কম্পিউটারাইজড ফিটনেস ব্যবস্থাপনা চালুর পর থেকে চোরাগোপ্তা পথে ফিটনেস সার্টিফিকেট ম্যানেজ করার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু এতে কোনো ভোগান্তি নেই তাদের। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে নিরাপদে চলাচল করছে বিপজ্জনক ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলো।