কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে
দুই বছর পূর্ণ করেছেন অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক
ও স্নাতকোত্তর শেষে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের র্স্টার্লিং বিশ্ববিদ্যালয়ে
পিএইচডি এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পোষ্ট ডক্টরাল ডিগ্রি লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সফলতা অর্জন করেছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক
পর্যায়ে তার ইমেজ বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং অর্জনগুলো:
এক. গবেষণা ও আন্তর্জাতিক জার্নাল এ মানসম্পন্ন
প্রবন্ধ প্রকাশনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য মর্যাদাসম্পন্ন ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও
স্বীকৃতি চালু করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে অর্জিত তহবিলের অর্থ দিয়ে
এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই অ্যাওয়ার্ড ১৭ জন শিক্ষককে প্রদানের
মাধ্যমে শুরু হয়। এর ফলে শিক্ষকদের মধ্যে, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ও মধ্যম পর্যায়ের শিক্ষকদের
মধ্যে মানসম্পন্ন গবেষণা ও প্রকাশনার প্রতি উৎসাহ ও অর্জন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ৫২
জন শিক্ষক ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এর জন্য আবেদন করেন। এখানে উল্লেখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে
মোট ২৬২ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন।
দুই. মানসম্পন্ন গবেষণা ও প্রকাশনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানের বিদেশি প্রতিষ্ঠান
ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।
তিন. প্রথমবারের মত মর্যাদাপূর্ণ ভাইস
চ্যান্সেলর বৃত্তি চালু করা হয়। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমরাই প্রথম
এই ধরনের বৃত্তির উদ্যোগ গ্রহণ। দুই বছরে ৭০৩ শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি প্রদান করা হয়।
চার. শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ
ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ২০২৩ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে স্পোর্টস
বৃত্তি প্রচলন করা হয়। ষোল জন খেলোয়াড়কে বৃত্তি প্রদান করে এই বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম
শুরু করা হয়।
পাঁচ. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতোপূর্বের
দীর্ঘ সেশনজট হ্রাস করতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি একাডেমিক
ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করা হয়।
ছয়. যে সকল শিক্ষক উচ্চতর ডিগ্রি করার
পরেও দেশে ফিরে আসেননি, কিন্তু বিদেশে থেকে পদ ধরে রাখার কারণে এখানে শিক্ষক সঙ্কট
তৈরি হয়েছে তাদের ৮ জনের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা বাবদ ১.৫৮ কোটি টাকা ফিরিয়ে
এনে পদগুলো শূন্য করা হয়েছে।
সাত. স্বাস্থ্যকর ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার
জন্য তিন ধরনের বর্জ্যের জন্য তিন রঙের (লাল সাধারণ বর্জ্যরে জন্য, হলুদ রিসাইকেল বর্জ্যরে
জন্য, এবং সবুজ কম্পোস্ট এর জন্য) অপসারণযোগ্য বিন স্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীদের মানসিক
স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নিয়মিতভাবে কাউন্সেলিং প্রদানসহ র্যাগিং এর বিরুদ্ধে সচেতনতা
ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আট. সর্বক্ষেত্রে অটোমেশন (ডি-নথি, ওয়েবসাইট,
অ্যাপ, ইআরপি, ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক, পেমেন্ট গেটওয়ে) সেবার ব্যবস্থা শুরু করেছি।
নয়. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতিমুক্ত
প্রকিউরমেন্ট ও অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের সংস্কৃতি বন্ধ করা হয়। ৯০-৯৫%
প্রকিউরমেন্ট টেন্ডার প্রক্রিয়া ইজিপি-এর মাধ্যমে সম্পাদনের ব্যবস্থা করা হয়।
দশ. দায়িত্ব গ্রহণের পরে ৬ মাসের মধ্যে
দুর্নীতির কারণে ২০১৪ সাল থেকে চলমান স্থবির একটি উন্নয়ন প্রকল্প কঠোর পরিশ্রম করে
সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা।
এগারো. ‘এপিএ’তে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অবস্থান ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২তম থেকে ১০ম স্থানে উন্নীত করা।
বারো. স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক
গড়ে তোলার জন্য বিজয় দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এলাকার দরিদ্র জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধু
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের সহায়তায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প গঠন করে ১,০০০ প্রান্তিক
লোককে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।
এ বিষয়ে উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন
বলেন, যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি লিডিং ও মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়
হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সফলতা অর্জন
করেছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার ইমেজ বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছি।