জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২০০৭ সালে
স্কুল ছাত্র রমজান আলীকে (৮) হত্যার দায়ে আজহারুল ইসলাম রিপন ও আইয়ুব আলী নামের দুজনকে
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন কুমিল্লার আদালত। রবিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লার
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, কুমিল্লা নগরীর
বিষ্ণুপুর ভূইয়া বাড়ীর মোঃ বিল্লাল হোসেনের ছেলে মোঃ আজহারুল ইসলাম রিপন (পলাতক) এবং
একই জেলার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণগসার গাজী বাড়ী মৃত সৈয়দ আব্বাস এর ছেলে আইয়ুব আলী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত
বিরোধের জের ধরে ২০০৭ সালের ১ জুলাই সকাল ১০টার দিকে রমজান আলী খেলাধুলা করতে ঘর থেকে
বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরদিন (২ জুলাই) বুড়িচং থানায় ডিজি করাসহ আশপাশের এলাকায় মাইকিং
করা হয়। ৩ জুলাই মাইকিংয়ে সন্ধানকারী মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাত ব্যক্তি (আসামি আজহারুল
ইসলাম রিপন) মোবাইল করে জানায়, রমজান আলী ও ভাতিজা সোহাগ ও মাহাবুবদেরকে খুন করার জন্য
তিন লাখ টাকা জমি বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা রাজী না হওয়ায় আইয়ুব আলী গং
রমজাম আলীকে ক্যান্টনমেন্ট এর পারহাইজ এর দিকে নিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে আসামি আজহারুল
ইসলাম রিপন এর দেখানো মতে রমজান আলীর লাশ উদ্ধার করে বুড়িচং থানাপুলিশ।
এ ব্যাপারে ২০০৭ সালে ৩ জুলাই নিহতের পিতা
বুড়িচং উপজেলার নারায়ণগসার গাজী বাড়ীর মৃত আব্দুল জব্বার এর ছেলে মোঃ হাবিল মিয়া বাদী
হয়ে একই গ্রামের মৃত সৈয়দ আব্বাস এর ছেলে আইয়ুব আলী ও সোলাইমান এর ছেলে মাসুমকে আসামি
করে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার বিধানমতে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সদীপ কুমার দাস ও আইয়ুব খান ২০০৭ সালের ১২ আগস্ট আসামি আজহারুল
ইসলাম রিপনকে আটক করে।
ঘটনার তদন্তপূর্বক নগরীর বিষ্ণুপুর ভূইয়া
বাড়ীর মোঃ বিল্লাল হোসেনের ছেলে আজহারুল ইসলাম রিপন এবং একই জেলার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণগসার
গাজী বাড়ীর মৃত সৈয়দ আব্বাস এর ছেলে আইয়ুব আলী ও সোলাইমান এর ছেলে মাসুম ও আবুল হাসেম
এর ছেলে রনি (শরিফুল ইসলাম) এর বিরুদ্ধে রাষ্টপক্ষে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত
হওয়ায় ২০০৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দঃ বিঃ ৩০২/৩৪ ধারার বিধানমতে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল
করেন। যার নং- ২৯।
২০০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে
দণ্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় চার্জগঠন শেষে রাষ্ট্রপক্ষে মানীত ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫
জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানির পর আসামি আজহারুল ইসলাম রিপন স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি দেন।
আজ আজহারুল ইসলাম রিপন ও আসামি আইয়ুব আলীর
বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও
প্রত্যককে বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। অপর দুই
আসামি রনি ও মাসুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস প্রদান করেন
আদালত। রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আইয়ুব আলীসহ অপর দুই আসামি আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত
ছিলেন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের
বিজ্ঞ আইনজীবী এপিপি মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমরা (বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ) আশা করছি উচ্চাদালত
এ রায় বহাল রেখে শীঘ্রই বাস্তবায়ন করবেন। এরফলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আসামি
পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মোঃ মফিজুল ইসলাম।