কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া সমৃদ্ধ
ইবাদত। এটি আল্লাহ তাআলার নামে পশু জবেহ করার মাধ্যমে আদায় করতে হয়। অনেকেই কুরবানির
পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়া জানেন না। হাদিসে এ সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা।
কুরবানি পশু জবেহ করার জন্য রয়েছে দিকনির্দেশনা।
পশু জবেহ করার সময় দোয়া পড়তে হয়। পশু জবেহ করার পরও রয়েছে দোয়া।
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে
এসেছে, 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজের কুরবানির পশু তাঁর
নিজ হাতে জবাই করেছেন।'
আরও পড়ুন: গোঁফ ভিজিয়ে পানি পান কি হারাম?
এ ছাড়াও বিভিন্ন হাদিস থেকে যার যার কুরবানি
তার নিজ হাতে করার উৎসাহ পাওয়া যায়। আর এটি উত্তম। তবে অন্যের মাধ্যমে কুরবানি করা
হলেও তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কুরবানি আদায় হয়ে যাবে।
কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম
কোরবানি জবাই করার কিছু সুস্পষ্ট নিয়ম-নীতি
রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসের উঠে এসেছে নিজ হাতে নিজের কুরবানী করার কথা হাদিসে এসেছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজের কুরবানির পশু তাঁর নিজ হাতে
জবাই করেছেন। কুরবানির পশু জবাইয়ের রয়েছে নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া। আমাদের দেশের অধিকাংশ
মানুষ কুরবানীর পশু জবাই করার নিয়ম ও পদ্ধতি জানেন না। যার কারণে তারা নিজ হাতে নিজের
পশু কুরবানী করেন না। কিন্তু কুরবানীর পশু জবাই করার নিয়ম পদ্ধতি এবং দোয়া অত্যন্ত
সহজ বাংলা এবং আরবি দুটি মাধ্যমে দোয়া এবং পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। নিচে কোরবানির
পশু জবেহ করার কিছু নিয়ম পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
১. পশু জবেহ করার সময় ‘بِسْمِ الله: বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা
শুরু করতে হবে। বিসমিল্লাহ বলেই ছুরি চালানো শুরু করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো
নামে যেন পশু জবেহ করা না।
২. পশু জবেহ করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল
রাখতে হবে যে, পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী আর দুই পাশে থাকা দুটি নালী কেটে দেয়া। এ
নালীগুলে কাটা হয়ে গেলেই পশু জবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
৩. পশু জবেহ করার জন্য ছুরি ভালোভাবে ধার
দিয়ে নিতে হবে। যাতে জবেহ করার সময় পশুর কষ্ট না হয়। অনেকে একটি ছুরি দিয়ে একাধিক পশু
কুরবানি করে থাকেন। সেক্ষেত্রে শেষ দিকে ছুরির ধার কমে যায়। তাই ছুরিতে ধার দিয়ে নেওয়া
উত্তম। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পশু জবেহ করার আগে ছুরি-চাকুতে ভালোভাবে
ধার দিয়ে নেয়া।’ (মুসলিম)
৪. একটি পশুর সামনে অন্য পশুর জবেহ না
করা। পশুর সামনে ছুরি-চাকুতে ধার না দেওয়া। এতে পশু ভয় পেয়ে যায়। এটি পশুকে কষ্ট দেওয়ারও
শামিল।
আরও পড়ুন: পশুর যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি হয় না
কুরবানির পশু জবাই করার পদ্ধতি
কিছু দিক নির্দেশনার মাধ্যমে কোরবানির
পশু জবাই করতে হবে এজন্য রয়েছে অনেক রকমের পদ্ধতি। যা অনুসরণ করে আপনি আপনার কোরবানির
পশু জবা করতে পারবেন। এতে করে আপনার কুরবানী কোন রকম ভুল-ভ্রান্তি ছাড়াই সম্পন্ন হবে
ইনশাআল্লাহ।
১. কুরবানি করার সময় পশুকে পশুর বাম কাতে
শোয়ানো হবে। যেন উক্ত সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকে। এতে করে চুরি চালানোর সময়
পশু তার গলা দেখতে না পায়।
২. গরু বা বড় পশুর ক্ষেত্রে আগে ভালো ভাবে
পা বেঁধে নেওয়া, যাতে করে জবাই করার সময় নড়াচড়া করতে না পারে।
৩. সাধারণত ৩ বার চুরি চালানোর মধ্যে দিয়ে
কোরবানির পশু জবাই করা হয়ে থাকে, তবে ক্ষেত্র বিশেষ আর বেশিবার চুরি চালানো যাবে।
৪. পশু জবাই শেষে, যখন একদম নিস্তেজ হয়ে
পরবে অর্থাৎ জীবন চলে যাবে তারপর চামড়া ছাড়াতে হবে। ধারালো চুরি দ্বারা প্রথমেই পায়ের
নলী কেটে দিতে হবে।
পশু জবাইয়ের দোয়া
কুরবানির পশু জবেহ করার জন্য শোয়ানোর পর
দোয়া পড়া। দোয়াটি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যদিও অনেকে দোয়াটির সনদের ব্যাপারে
মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়াগুলো পড়ে কুরবানি করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ
বলে নালীগুলো কেটে দিলেই কুরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো-
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি
ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন।
ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা
লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা
মিনকা ও লাকা।
২. যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট
এ অংশটুকু পড়বেন-
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার,
আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।
৩. নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে পশু জবেহ
করার পর এ দোয়া পড়া-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি
কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’
৪. অন্য কেউ কুরবানি বা অন্য কারো কুরবানি
করলে এ দোয়া পড়া-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা
মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’
উল্লেখ্য, যদি কেউ একাকি কুরবানি দেয় এবং
নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কুরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিনকা-মিনকুম’ বলে যারা কুরবানি
আদায় করছে তাদের নাম বলা।
শেষের কথা:
কোরবানির পশু গরু ও ছাগল জবাই করার নিয়ম,
পদ্ধতি ও দোয়া আরবী এবং বাংলা অর্থসহ দেখেছেন এবং জেনেছেন ইতোমধ্যেই। আল্লাহ তাআলা
মুসলিম উম্মাহকে উপরে বর্ণিত নিয়মে কুরবানির পশু জবেহ করার তাওফিক দান করন। একই সাথে
সকলের কুরবানিকে কবুল করুন, আমিন। উল্লেখ্য যে, আপনি যে অর্থ বা টাকা দিয়ে কোরবানির
পশু ক্রয় করবেন তা অবশ্যই হালাল হতে হবে। হালাল বিধায় কোরবানি কবুল হবে না।