টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলাসহ প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বাড়ছে। কয়েকদিনের অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে এসব নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা। তবে পানি বৃদ্ধি পেলেও সহসাই বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো জানায়, দেশে ও উজানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘন্টায় ধরলা নদী কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে এবং দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকাল ৯ টা থেকে শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ৯ টা পর্যন্ত গত ৭২ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং একই সময়ে চিলমারী পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাড়ছে দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলার পানিও। তিস্তার পানি একই সময়ে কাউনিয়া পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃষ্টিপাত ও ঢলের কারণে আগামী কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ব্রহ্মপুত্র সহ জেলার কোনও নদ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস নেই বলে জানিয়েছে পাউবো।
এদিকে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় জেলার কয়েকটি চরের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় এসব নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জেলা সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমনের চর এলাকার গৃহবধু সবজন বলেন, 'দুই দিন থাকি (থেকে) ধরলার পানি বইলবের নাগছে (বৃদ্ধি পাচ্ছে)! বানের (বন্যার) সম্ভবনা (সম্ভাবনা) আছে। এই জন্ন্যে (জন্য) ছওয়া পোয়াক (ছেলে-মেয়েকে) নিয়ে খুব টেনশনে আচোং (আছি)!
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর হামিদুল বলেন, ‘পানি বাড়তাছে। অহনও বাড়িঘরে ঢুকে নাই। কিন্তু দুই একটা নিচা চরে পানি উঠছে। ভাঙনও আছে।’
ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়নের চর বালাডোবা ও মুসার চর থেকে বিগত বন্যার পানি ভালোভাবে নেমে যাওয়ার আগেই আবার পানি বাড়ছে। এতে করে এসব চরে আবারও পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। শনিবার সকালে যেভাবে পানি বাড়তে দেখা গেছে তাতে এমনটা চলতে থাকলে এসব চর আবার প্লাবিত হতে পারে।’
ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাপারীপাড়ার নতুন চর এবং ৬ নং ও ৮ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি চরের গ্রামীণ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তবে এখনও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে নাই’ পরিস্থিতি বর্ণনায় যোগ করেন এই ইউপি সদস্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ নদনদীর পানি বাড়ছে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পূর্বাভাসও নেই। কয়েকদিন বৃদ্ধি পাওয়ার পর আবারও পানি নেমে যাবে।’