তীব্র জ্বালানি সংকটের মধ্যে এবার লেবাননের তেলের ডিপোতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। লেবানন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, জাহরানিতে একটি তেলের ট্যাংকে আগুন লেগেছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য ট্যাংকে যেন আগুন ছড়িয়ে না পড়ে সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে।
লেবাননের আল জাদিদ টেলিভিশন জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। গত সেপ্টেম্বরে ইরাক থেকে ১৬ হাজার টন তেল এনে জাহরানিতে রাখা হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যকার সমঝোতায় তেল আমদানির এটিই ছিল প্রথম চালান। গত মার্চে লেবাননের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছিলেন, বিশেষজ্ঞরা জাহরানি তেল স্থাপনায় ঝুঁকি দেখতে পেয়েছেন। এ ছাড়া গত বছরের আগস্টে বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কারণে দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রায়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই বিস্ফোরণে ২০০ মানুষ নিহত হয়েছিল।এদিকে গত ১৮ মাস ধরে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে লেবানন। জ্বালানি ঘাটতির কারণে সেই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।
পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকায় দেশটির জাহরানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের তাপবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে দেইর আম্মার প্ল্যান্টও বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে, দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের স্থিতিশীলতায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, বিদ্যুৎ নেই। কোনোকিছু
তৈরি করতে পারছি না। আমাদের রাজনীবিদের কারণেই এই পরিস্থিতি। বাসার লিফট বন্ধ। এসি
ফ্রিজ সব বন্ধ। ঘুমাতে পাড়ছি না। বাধ্য হয়ে গাড়িতে ঘুমাতে হচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছি
না।
এই সংকট দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যের
মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, মুদ্রার মানের ব্যাপক পতন হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ কোম্পানি
বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো অস্থায়ীভাবে চালানোর জন্য সেনাবাহিনীর জ্বালানি তেলের রিজার্ভ
ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
তবে শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পথ দেখছে না। লেবাননের অর্থনীতি আমদানি করা জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার অভাবের কারণে বিদেশি জ্বালানি সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে আমদানি হ্রাস পেয়ে সংকট আরও গভীর হয়েছে। তার মধ্যে তেল ট্যাংকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।