নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের প্রকাশ মুন্সি মেম্বারকে (৫০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সদরের কাদির হানিফ ইউনিয়ন থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও চরজব্বার থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার আবুল খায়ের প্রকাশ মুন্সি মেম্বার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চরকাজী মোখলেছ গ্রামের মৃত গোলাপের রহমানের ছেলে। তিনি চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তোভোগী নারীর দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এর আগে দুপুরে ভুক্তোভোগী নারী (৩০) বাদী হয়ে সূবর্ণচরের চরজব্বর থানায় মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও নগদ টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনায় মামলা করেছেন। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল খায়ের প্রকাশ মুন্সি মেম্বারকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় অপর আসামিরা হলেন, চর কাজী মোখলেছ গ্রামের মৃত বশির আহম্মদের ছেলে মো. হারুন (৪২) ও অপরজন অজ্ঞাত।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে ভুক্তোভোগী মা-মেয়ের চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের গাইনি সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আবদুল মন্নান শাকিল মা-মেয়েকে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নির্যাতিতা মা-মেয়ে খুবই অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপস্) বিজয়া সেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী প্রধান আসামি আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বারের স্বভাব-চরিত্র ভালো নয়। তাকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টায় বাড়িতে মা-মেয়েকে একা পেয়ে সিঁদকেটে একজন দরজা খুলে দেয়। পরে আরও দুইজন ঘরে ঢুকে তিন সন্তানের জননী (৩০) ও তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের (১২) ওপর নির্যাতন চালায়। পরে ৯৯৯-এ কল পেয়ে চরজব্বর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বার দীর্ঘদিন থেকে তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। মাঝে মধ্যে টেলিফোন করে কুপ্রস্তাব দিতেন। কথা না শুনলে খারাপ পরিণতির হুমকি দিতেন। সোমবার রাতে পুরুষহীন বাড়িতে সিঁদকেটে ঘরে ঢুকে হাত-মুখ বেঁধে মাকে দুজন এবং মেয়ের অপরজন ধর্ষণ করেন। পরে মা-মেয়ের নাকে কানের স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টকা নিয়ে আসামিরা চলে যান।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামী (৪২) বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিনমজুরি করে দিনযাপন করি। কয়েকমাস আগে ওই এলাকায় পাঁচ শতক জমি কিনে বাড়ি করি। আসামিরা খুবই খারাপ প্রকৃতির। আমি এ জঘন্যতম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের ফাঁসি চাই।
চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মন্নান বলেন, মা-মেয়েকে ধর্ষণের ন্যাক্কাজনক ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বারের বিষয়টি সূবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. চৌধুরীকে জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাগ্গ্যা গ্রামের এক গৃহবধূকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে। সেই মামলার রায় ঘোষণা করা হয় সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি)। রায়ে সাবেক মেম্বার রুহুল আমিনসহ ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া মামলার আরও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক। সেই রায় ঘোষণার দিনগত রাতে এমন ঘটনায় এলাকাবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।