আজঃ শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শিরোনাম

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে ঝিটকার ‘হাজারি গুড়’

প্রকাশিত:সোমবার ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

মানিকগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে ঝিটকার হাজারি গুড়র নাম। এ গুড়ের সুনাম রয়েছে এশিয়া থেকে ইউরোপ মহাদেশে।

শুধু তাই নয় গুড় তৈরি নিয়ে রয়েছে নানা রূপকথা।

জানা যায়, কয়েকশ বছর আগে ঝিটকা এলাকায় হাজারি প্রামানিক নামে এক গাছি ছিলেন। তিনি খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করতেন। একদিন বিকেলে তিনি খেজুর গাছে হাঁড়ি বসিয়ে নামা মাত্রই এক দরবেশ এসে হাজির হন তার সামনে এবং কাঁচা রস খেতে চান তার কাছে। তখন তিনি বলেন সবেমাত্র গাছে হাঁড়ি বসিয়েছি এতো অল্প সময়ে বড় জোর ১০-১৫ ফোঁটা রস হাড়িতে পড়েছে তবুও দরবেশ রস খেতে চান। তখন হাজারি প্রামানিক খেজুর গাছে ওঠেন এবং দেখতে পান সারারাত ধরে যতো রস পড়তো সে পরিমাণ রসে হাড়ি ভরে গেছে। গাছি হাড়ি ভরপুর রস নিয়ে নিচে নেমে ওই দরবেশকে রস খাওয়ান এবং পা জড়িয়ে ধরেন।

গাছিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে দরবেশ বলেন, কাল থেকে তুই যে গুড় তৈরি করবি তা সবাই খাবে এবং তোর গুড়ের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। তোর সাত পুরুষ এ গুড়ের সুনাম ধরে রাখবে বলেই দরবেশ দ্রুত চলে যান। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওই দরবেশকে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকেই গুড়ের নামকরণ করা হয় হাজারি গুড়

রানি এলিজাবেথকে নিয়ে প্রচলিত কল্পকাহিনী:

যুগটি ছিলো ভারত বর্ষের সম্রাট আকবরের স্বর্ণযুগ। তখন ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথ ভারতবর্ষ সফরে আসেন। শত বছরের জনশ্রুতি মতে, মানিকগঞ্জ অঞ্চলের গুড়ের ঘ্রাণ ও স্বাদে মুগ্ধ হয়েছিলেন রানি, গুড় হাতে নিয়ে একটু চাপ দিতেই হাজার টুকরো হয়ে গিয়েছিল। রানি এলিজাবেথ গুড় খেয়ে এতই মজা পেয়েছিলেন যে, গুণমুগ্ধতা প্রকাশ করতে আগ্রহী হয়ে হাজারি নামে একটি সিলমোহর তৈরি করে দিয়ে গেছেন এবং তিনি নিজেই ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এ গুড়ের নাম।

হাজারি গুড় তৈরির পদ্ধতি:

বিকেল ও সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত্বে যেকোনো সময় গাছি হাড়ি বসান খেজুর গাছে। পৌষের প্রথম থেকেই আসমান ছোঁয়া খেজুর গাছ থেকে ভোর বেলায় গাছি মাটির তৈরি হাড়িতে করে রস নামায়। রস নামানোর পর তা নিয়ে যাওয়া হয় গাছি বাড়িতে তারপর রস নামিয়ে ছেকে ময়লা পরিস্কার করে আদি প্রক্রিয়ায় টিনের তাফালে (পাত্র) করে মাটির চুলায় রস জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হয়। রসের ঘনত্ব বেড়ে গেলে একটি মাটির হাড়িতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘুটে ঘুটে তৈরি করা হয় সাদা রঙের হাজারি গুড়।


হাজারি গুড়ের মূল্য:

প্রচুর চাহিদা ও উৎপাদন কম হওয়ায় হাজারি গুড়ের ক্রেতা সব সময় থাকে গাছি বাড়িতে। এক কেজি গুড় নিতে অর্ডার করতে হয় সপ্তাহ খানেক আগে। ১২ লিটার রসে প্রায় এক কেজি গুড় তৈরি হয় যে কারণে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ক্রেতা আসেন সেই ঐতিহ্যবাহী গুড় নিতে। অন্য গুড়ের তুলনায় হাজারি গুড়ের দাম বেশি। স্বাদও অন্য কোনো গুড়ের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। বর্তমানে প্রতি কেজি হাজারি গুড় বিক্রি হয় ১৪৫০-১৫০০ টাকায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শীতের প্রথম থেকেই খেজুর গাছ কাটা থেকে শুরু করে কাচা রস নামাতে ব্যস্ত পার করছেন গাছিরা। ভোর থেকে শুরু হয় রস নামানোর কাজ। গাছি রস নামিয়ে নিয়ে যান হাজারি বাড়ি। এরপর হাজারি পরিবারের গৃহিণীরা রস ছেকে টিনের পাত্রে (তাফেল) ঢালেন। তারপর মাটির তৈরি চুলায় জ্বাল দেওয়া হয়। রসের ঘনত্ব বাড়লে মাটির তৈরি পাত্রে ঢেলে হাতল দিয়ে ঘোটা হয়। পরে তা একটি পাত্রে পরিমাণ মতো করে ঢেলে হাজারি গুড় তৈরির কাজ সম্পন্ন কনেন হাজারি পরিবারের পুরুষরা।

মকবুল হোসেন হাজারির ছেলে ৯৩ বছর বয়সী আবুল কাশেম হাজারি বলেন, আমার দাদার কাছে শুনেছি এই হাজারি গুড় তার দাদার বাবা নাকি প্রথম তৈরি করেন তারপর থেকে আমরা বংশ পরাক্রমে এ গুড় তৈরি করে আসছি। আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় এখন আর অনেক গুড় তৈরি করতে পারছিনা। অন্যদিকে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা হাজারির সিল ব্যবহার করে নকল গুড় তৈরি করে বাজারে ছাড়ছেন।

আবুল কাশেম হাজারির ছেলে শাহিন হাজারি বলেন, ছোট বেলায় যে পরিমাণ খেজুর গাছ ছিলো সেই তুলনায় এখন গাছ নেই বললেই চলে। এ বছর ১৪০টি খেজুর গাছ কেটেছি। প্রতিটি গাছ আকার ভেদে ৫০০- ১০০ টাকা করে দিয়েছি। ভোরে গাছ থেকে রস নামিয়ে গুড় তৈরি প্রক্রিয়া করছি এবং প্রতি ১২ লিটারের প্রায় এক কেজি করে গুড় তৈরি করতে পারছি। সকাল থেকে গুড় নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক আসছে কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় সবাইকে গুড় দিতে পারছি না। অনেকে আবার এক মাস আগেই অর্ডার দেন। এখন প্রতি কেজি গুড় ১৪৫০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করছি।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, জেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঝিটকার হাজারি গুড়। সে কারণে নতুন করে খেজুর গাছ লাগানো ও গাছিদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবং ঐতিহ্য বহন করায় সরকারিভাবে মানিকগঞ্জ জেলাকে হাজারি গুড়ে ব্রান্ডিং করা হয়েছে।


আরও খবর
ইতিহাসে আজকের এই দিনে

শুক্রবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৪

২৫ জানুয়ারি : ইতিহাসে আজকের এই দিনে

বৃহস্পতিবার ২৫ জানুয়ারী ২০২৪




বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: ২৩ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর

প্রকাশিত:শুক্রবার ০১ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০১ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া ৪৪ জনের মধ্যে ২৩ জনের মৃতদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার (০১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মৃতদেহ হস্তান্তরের এই সংখ্যা জানিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে মোট ৪৪টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৩টি মৃতদেহ নিহতদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল থেকে ১৫টি এবং বার্ন ইন্সটিটিউট থেকে ৮ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার (০১ মার্চ) ভোর ৫টা ৪১ মিনিটে মৃতদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার রাত ২টার পর থেকে মৃতদেহ হস্তান্তরের জন্য নিহতদের স্বজনদের তথ্য চায় ঢাকা জেলা প্রশাসন। তথ্য সংগ্রহ সাপেক্ষে মৃতদেহ শনাক্তের পর মৃতদেহ হস্তান্তর শুরু হয়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট ভবনে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এতে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন।


আরও খবর



জামিন পেলেন সাংবাদিক রানা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১২ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১২ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
মো. নাজমুল হোসাইন, শেরপুর

Image

দেশ রূপান্তর পত্রিকার শেরপুরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম‍্যাজিস্ট্রেট জেবুন নাহার এ জামিনের আদেশ দেন।

এর আগে শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিনের কাছে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা আবেদন করেন। তিনি ওই আবেদনের রিসিভড কপি চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন ওই ইউএনও। এ সময় তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিক রানাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।


আরও খবর



বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

প্রকাশিত:রবিবার ১৭ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৭ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৭ মার্চ) সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এ শ্রদ্ধা জানান তিনি। এ সময় কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন সরকারপ্রধান।

পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আবারও শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় সরকারপ্রধানের সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেই সঙ্গে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ছাড়াও শিশু সমাবেশে অংশ নেবেন তারা।

অন্যদিকে, জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০) খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার ও সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।

এছাড়াও আগামীকাল সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে দলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন।


আরও খবর



বাপ-দাদার শেখানো পেশায় যাদের জীবন জীবিকা

প্রকাশিত:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | অনলাইন সংস্করণ
মামুন হোসেন, পাবনা

Image

এক সময় মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, ঘটি, মটকা, সরা, চারি, কাসা, কলস, ব্যাংক, প্রদীপ, পুতুল, কলকি, দেবদেবীর মূর্তি ও ঝাঝরের বিকল্প ছিল না তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তনে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল আর অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা রকম আধুনিক সামগ্রী। তাই বর্তমানে বাজারে চাহিদা কম থাকায় এবং কাঁচামালের চড়ামূল্য ও পুঁজির অভাবে টিকতে না পাড়ায় সংকটে পড়েছে পাবনার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা।

মৃৎশিল্পীরা জানান, বর্তমান মানুষের ব্যবহারিক জীবনে মৃৎশিল্পের তেমন কোন আর ভূমিকা নেই। প্রযুক্তি বিকাশের এ যুগে এই শিল্পের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধিত না হওয়ায় বর্তমানে এই পেশায় টিকে থাকা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে কালের আবর্তে বাপ-দাদার পেশা হারিয়ে যেতে চললেও এখনোও টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনা চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের গৌড়িপুর পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পীরা।

সরেজমিনে গৌড়িপুর পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতেই মাটির হাঁড়ি পাতিল তৈরি করে রোদে শুকাতে দিচ্ছে কুমাররা, কেউ বা ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন সামগ্রী তৈরীতে, কেউ বা করছেন রং এভাবেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে তাদের কর্মব্যস্ততা।

পালপাড়ায় গিয়ে কথা হয় মায়া রাণীর সাথে তিনি জানান, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মাটির তৈজসপত্র তৈরী করে আসছেন তিনি। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন কোন চাহিদা নেই, তাই শীত মৌসুমে পিঠাপুলির সামগ্রী তৈরী করেই কোনোমতে চলছে তার সংসার।

এমনিতেই ব্যবসা চলে কম তার উপরে নেই রাস্তাঘাট তাই গৌড়িপুর পালপাড়া থেকে নিমাইচড়া বাজার পর্যন্ত পাকা সড়কের দাবি জানান তিনি।

মৃৎপাত্র পোড়ানোর সময় কথা হয় দুলাল পালের সাথে কথা হইলে তিনি জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে বাপ-দাদার শেখানো পেশায় কাজ করছেন। আগের দিনে বাজারে মৃৎপাত্রের প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন অনেকটাই কম। অন্য কোন কাজ না জানায় এই পেশাই আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

দুলাল পাল আরও বলেন, পেশাগত প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণ পাননা তারা। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্পকে বাঁচাতে সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন।

কথা হয় বিকাশ পাল, সম্বল পাল, দরদী পাল ও সুবর্ণা পালের সঙ্গে, তারা এই প্রতিবেদককে জানান, এক সময়ে এই গ্রামে মৃৎশিল্পের রমরমা ব্যবসা ছিল। আগে গৌড়িপুর গ্রামে প্রায় ১১০টি ঘর মৃৎশিল্পের কাজ করতো কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ পালরা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় এখন ১০-১৫ টি ঘরে প্রায় ৩০-৩৫ জন পাল এই কাজের সাথে জড়িত বলে জানান তারা।

তারা আরও জানান, মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সরকারি কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা বা প্রণোদনা কোন দিন পেয়েছেন কি না তা তাদের জানা নেই। তারা বলেন, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও মৃৎশিল্পীদের শিল্প জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যদি আধুনিক করে গড়ে তোলা যায় তা হলেই কেবল গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

কথা হয় গোপাল চন্দ্রপালের সঙ্গে তিনি বলেন, আগের দিনে মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন এঁটেল মাটি, রঙ, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি ছিল সহজলভ্য। কিন্তু বর্তমানে এসব প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা এখন হিমশিম খাচ্ছেন। তারা জানান, পূর্বে যেখানে বিনামূল্যে মাটি সংগ্রহ করা যেত বর্তমানে সেই মাটি ১০-১২ হাজার টাকায় কিনতে হয়। আগে খড় কিনতে তাদের কোন টাকা পয়সা লাগতো না, এখন সেই এক বুঝা খড় ৩০০ টাকায় কিনতে হয় তাদের।

গোপালচন্দ্র পাল বলেন, বর্ষা মৌসুমে তাদের হাতে তেমন কোন কাজ না থাকায় সে সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি সংগ্রহ করে থাকেন তারা। তবে অনেক সময় মাটি কিনতে আইনি জটিলতায় পড়তে হয় তাদের।

বাড়ির উঠোনে পাত্রগুলোতে রং করতে দেখা যায় উজ্জ্বল কুমার পালকে, তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সাধারণত মৃৎপাত্রগুলো কুমার পরিবারের নারী-পুরুষ উভয়ে মিলেমিশে তৈরি করে থাকেন। এই তৈরিকৃত সামগ্রী বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কিনেন। অনেকে আবার বাড়ি বাড়ি ফেরি করেও বিক্রি করেন। বর্ষা মৌসুমে কাজ বন্ধ থাকায় কুমারদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ যায়। সে সময় কুমাররা সারা বছর কাজ করার জন্য এঁটেল মাটিসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে নেমে পড়েন। শুধু পাবনা নয়, গোটা দেশে এ পেশায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কারও যেন কোন মাথাব্যথাই নেই।

বাড়ির উঠোনে মাটির পাত্র তৈরি করছেন অনিতা পাল ও প্রার্থনা পাল তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আগের দিনে তাদের ব্যবসা অনেক ভালো চলতো বর্তমানে মানুষ প্লাস্টিক, এ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করায় এখন কম চলে। তারা বলেন, আগে কলসিসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরী করলেও বর্তমানে তা ব্যবহার কম হওয়ায় এখন শুধু ঝাঁঝর, কাসা, হাঁড়ি পাতিল তৈরী করে থাকেন তারা। 

এবিষয়ে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভিন সুলতানা মুক্তি বলেন, তারা কখনও আমার কাছে কোন দাবি নিয়ে আসেনি। আমি আমার এলাকার অনেক সড়কের কাজ করেছি, তাদের সড়কের বিষয়েও কাজ করার চেষ্টা করবো এবং আমি সবসময় তাদের পাশে থাকবো।


আরও খবর



সাকিবকে টপকে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার তামিমের

প্রকাশিত:শনিবার ০২ মার্চ 2০২4 | হালনাগাদ:শনিবার ০২ মার্চ 2০২4 | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

আগেই জানিয়েছিলেন বিপিএলের পরেই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। যদিও একবার অবসরে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তবে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেও বিশ্বকাপের ফ্লাইটে চড়া হয়নি। এরপরই তাকে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। বলা হচ্ছিল তামিম শেষ হয়ে গেছেন, ফুরিয়ে গেছেন। সেই বুড়ো তামিমই কিনা হলেন এবারের বিপিএলের সিরিজ সেরা তারকা।

ফাইনালের আগে দারুণ ছন্দে ছিলেন তামিম। ফরচুন বরিশালের জার্সি গায়ে ১৪ ম্যাচে করেছিলেন ৪৫৩ রান। সেরা ব্যাটারের দৌড়ে তামিমের প্রতিপক্ষ ছিল কুমিল্লার তরুণ ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়। এ দুজনের মাঝে রানের ব্যবধান ছিল মাত্র ৬। সেখান থেকে হৃদয় আজ ব্যাট হাতে ছিলেন নিষ্প্রভ। ১০ বলে খেলেন ১৫ রানের ইনিংস। তাই খুব বেশিদূর এগুতে পারেননি হৃদয়।

কুমিল্লার দেয়া টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে ২৬ বলে ৩ ছক্কা ও সমান চারে খেলেন ৩৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। এতে করে ১৫ ম্যাচ থেকে তামিমের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৪৯২ রান। এতে করে হৃদয়কে টপকে হয়ে যান ২০২৪ বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আর ম্যাচ শেষে পুরো বিপিএলের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিজের করে নেন তিনি।

২২ গজে ব্যাট হাতে যে তামিম ফুরিয়ে যাননি বিপিএলের এবারের আসরে সেটা বারবার প্রমাণ করেছেন। বড় ইনিংস নিয়মিত না এলেও দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৭১ রানের চমৎকার ইনিংস উপহার দেন। টুর্নামেন্টে এরপর আরও দুটি ফিফটির দেখা পান তিনি। এলিমিনেটরে চট্টগ্রামের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৪৩ বলে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস।

বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান, বিপিএলে সর্বোচ্চ রানসহ প্রায় অনেক রেকর্ডই নিজের করেছেন চট্টগ্রামের এই ওপেনার। আজ ফাইনালে নামার আগে তামিমের সামনে দুটি রেকর্ডের হাতছানি ছিল। তার মধ্যে একটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তিনি।

বিপিএলের প্রথম আসর থেকেই টুর্নামেন্টে খেলে যাচ্ছেন তামিম। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক এ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে তিনি নিয়মিত মুখ। বিপিএলের হয়ে যাওয়া দশটি আসরে আটটি আলাদা দলের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন দেশসেরা এ ওপেনার। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে এ ক্রিকেট আসরে দুই সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছেছেন। বিপিএলের ফাইনালেও রয়েছে তার সেঞ্চুরি। ২০১৯ সালে বিপিএলের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তার হাঁকানো ১৪১ রানের দাপুটে ইনিংস দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে রেকর্ড।

বিপিএলের ২০১৬ আসরে চট্টগ্রাম ভাইকিংসের হয়ে তামিমের ব্যাট থেকে এসেছিল ৪৭৬ রান। ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার হয়ে পুরো টুর্নামেন্টে দ্যুতি ছড়িয়ে করেন ৪৬৭ রান। এ টুর্নামেন্টের এক মৌসুমে দেশের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তার এই দুই ইনিংস ছিল তিন ও চার নম্বরে। আজকের ফাইনালে সেটাকেই টপকে গেলেন তিনি।

ফাইনাল ম্যাচের আগে ১৪ ম্যাচে তামিমের ছিল ৪৫৩ রান। ফাইনালে ২৬ বলে ৩৯ রান করায় ১৫ ম্যাচে তার সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৪৯২ রান। যা চলতি আসরে রান সংগ্রাহকদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া তার ব্যক্তিগত রান সংগ্রহের দিক দিয়ে আট বছরের পুরোনো রান টপকে নতুন রেকর্ড গড়েন। এর মধ্যে বিপিএলে এক মৌসুমে তামিমের ৪৯২ রানেই সর্বোচ্চ। বাংলাদেশি হিসেবে তার সামনে আছেন কেবল নাজমুল হাসান শান্ত। তিনি ২০২৩ সালের নবম আসরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ১৫ ম্যাচে ৫১৬ রান সংগ্রহ করেন।

অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বিপিএল শিরোপা নিশ্চিতের দিনে সিরিজ সেরার পুরস্কারটাও পেলেন তামিম। বয়স বাড়লেও তামিম যে ফুরিয়ে যাননি তাই যেন প্রমাণ করলেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে।


আরও খবর
ডি মারিয়াকে হত্যার হুমকিদাতা গ্রেফতার

বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪