রুশ বাহিনীর গোলা
থেকে বাঁচতে আজ ভস্টল ইস্পাত কারখানার নীচে বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন মারিয়ুপোলের হাজার
খানেক মানুষ। বন্দর-শহরটি রাশিয়ার দখলে যাওয়ার পরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনও হামলা যেন না-করা হয়। শুধু কারখানা থেকে বেরনোর সব পথ বন্ধ
করে দেওয়া হোক।
বাস্তব পরিস্থিতি
তার থেকেও ভয়ঙ্কর। উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে, কারখানার প্রতিটি ব্লকের ছাদে বড় বড়
গর্ত। আকাশপথে বোমা ফেলে কার্যত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুরো অঞ্চল। কারখানার ভিতরে এক-এক
জায়গা ধসে গিয়েছে। এক-একটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপ। ভরেজিমেন্টের আশঙ্কা, মাটির নীচে আদৌ কেউ বেঁচে আছে
কি না সন্দেহ! কমান্ডার শিতোস্লাভ পালামার বলেন, ৪ মাসের বাচ্চাও ছিল ওখানে। ১৬ বছরের
কিশোরও ছিল। ওরা এমন ভাবে আটকে, বেঁচে থাকলেও উদ্ধার করতে যাওয়ার কোনও পথ নেই।
পূর্ব ইউক্রেনের
ডনবাস অঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-শহর মারিয়ুপোল। যুদ্ধের গোড়া থেকে এটিকে
দখল করতে মরিয়া ছিল রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেনের বাহিনী ও সাধারণ মানুষের প্রতিরোধে প্রায়
দু’মাস লেগে গিয়েছে লক্ষ্যপূরণে। পরিণতি হিসেবে
রোজই শোনা যাচ্ছে, রুশ হামলার নৃশংস বয়ান। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি
আজ বলেন, ‘‘ডনবাসে যাতে কোনও প্রাণ না-বাঁচে, তা নিশ্চিত করতে
বদ্ধপরিকর রাশিয়া।
আজ ডনবাস এলাকায়
পোপাসনায় দু’টি উদ্ধারকারী বাস পাঠানো হয়েছিল।
খোঁজ নেই কোনওটির। সেনাকর্তা মিকোলা খানাতোভ জানিয়েছেন, একটি বাস রুশ হামলার মুখে পড়েছে।
এটুকু খবর তাদের কাছে আছে। কিন্তু দ্বিতীয় বাসটির সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। মিকোলা
জানান, স্থানীয় এক ইতিহাসের শিক্ষক বাসটি নিয়ে উদ্ধারে গিয়েছিলেন।
আর একটি বাসও
পাঠানো হয়েছিল। সেটি ৩১ জনকে উদ্ধার করে এনেছে। নিখোঁজ বাস দু’টিকে খোঁজার চেষ্টা করারও উপায় নেই। ইউক্রেন
প্রশাসন জানিয়েছে, গোটা ডনবাস এলাকা জ্বলছে। উত্তর-পূর্বে খারকিভ শহরেও হামলা চলছে।
একটি হাসপাতালে বোমা ফেলে শত্রুরা। দু’টি ন’তলা আবাসনেও আকাশপথে হামলা করা হয়।
আগুন ধরে যায়
বাড়ি দু’টিতে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিজেরাও
ঘোষণা করেছে, তারা ডনবাস এলাকায় একাধিক ইউক্রেনীয় সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
আজ জানা গিয়েছে, রাশিয়ার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ‘কিভের ভূত’। ২৯ বছর বয়সি স্টেফান তারাবালকাকে এই
নামেই ডাকা হত। একা ৪০টি রুশ যুদ্ধবিমানকে ঘায়েল করেছিলেন এই ফাইটার পাইলট। গত ১৩ মার্চ
তাঁর মিগ-২৯-কে গুলি করে নামায় রুশ বাহিনী। তারাবালকাকে ইউক্রেনীয়রা ভালবেসে বলতেন
‘ঈশ্বরের পাঠানো
রক্ষক’।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের আজ ৬৬তম দিন। কার্যত ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে দেশটা। মস্কো অবশ্য এই গোটা পর্বকে বলে চলেছে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’। পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলোর আশঙ্কা, এ ভাবে আর বেশি দিন নয়। সামনেই ৯ মে রাশিয়ার বিজয় দিবস। ওই দিন যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে ক্রেমলিন। গত দু’মাসে সেই অর্থে ইউক্রেনের খুব অল্প অংশ দখল করতে পেরেছে রাশিয়া। তারা যুদ্ধ ঘোষণা করলে রাশিয়ার মিত্র দেশগুলোও অংশ নেবে লড়াইয়ে। এখন শুধুমাত্র পুতিনের অঙ্গুলি হেলনের অপেক্ষা।