মাটি ছাড়াই তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক কংক্রিট
ইটের ব্লক। দেখতে সুন্দর, টেকশই ও পরিবেশ বান্ধব। এসব কংক্রিটের ব্লক সরকারি প্রতিষ্ঠানের
পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও শুরু হয়েছে ব্যবহার। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বাইপাস সড়কের
ধলাগাছ মোড় সংলগ্নে বসানো হয়েছে এই ব্লক ইট তৈরির মেশিন। প্রতিঘন্টায় সেখানে তৈরি হচ্ছে
এক হাজার থেকে এক হাজার ২শ' ইট।
এলাকাবাসীরা জানান, পরিবেশবান্ধব ও জমির
মূল্যবান মাটি নষ্ট না করেই জার্মান প্রযুক্তিতে আগুনে না পুড়িয়ে, পাথর গুঁড়া ও সিমেন্ট
দিয়ে অত্যাধুনিক ভাবে তৈরী হচ্ছে ব্লক ইট। শ্রমিকরা কারখানার পাশে স্তুপ করা পাথর,
সিমেন্ট, সিলেকশন সেন্ড ট্রলিতে এনে হপারে ঢেলে দেন। পরে মিক্সার মেশিনে অন্যান্য উপকরণ
মিশ্রিত করে কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে ভাইব্রো মাল্টি ক্যাভিটি মোল্ডিং মেশিনের মাধ্যমে
তৈরি করা হয় এই ইট। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সারি সারিভাবে মেশিন থেকে বেরিয়ে আসে
পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট। এই অত্যাধুনিক ইট কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে। এ কারখানায়
১৫/২০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক সৈয়দপুরের কলিম মোড়
এলাকার হাজী হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকার পূর্বাচলে এই ব্লক ইট তৈরির স্থান সংকুলান
না হওয়ায় তিনি কারখানাটিকে এখানে নিয়ে আসেন এবং কংক্রিটের ইটের ব্লক তৈরির কাজ শুরু
করেন।
তিনি বলেন, এইচএইচএ কংক্রিট অ্যান্ড ব্রিকস
লিমিটেড কংক্রিট ইটের ব্লক বের করে প্রথমে একটু সন্দেহ ছিলো এটি চলবে কিনা। কিন্ত দিন
দিন চাহিদার কারণে অনেকটা আশাবাদি। এই ব্লকের ইট একদিকে পরিবেশ দূষণ কমাবে, অন্যদিকে
ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে কৃষি জমি ও বনাঞ্চল।
ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. রেজা আজকের
দর্পণকে জানান, এখানে চার ধরণের কংক্রিট ইটের ব্লক তৈরি করা হয়। এগুলো হচ্ছে বিল্ডিং
বাড়ির জন্য কংক্রিট ইট, ব্লক ইট ও রাস্তা তৈরির কাজের জন্য ইউনি ব্লক ও হলো কার্বস্টল
ব্লক। বিল্ডিং তৈরির ব্লক অনেকটা সিমেন্টের কালারের মতো আর রাস্তা তৈরির ব্লক রঙিন
ধূসর হয়ে থাকে। রঙিন ব্লকটি সরকারি রাস্তার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সৈয়দপুরের বিদ্যুৎ
উন্নয়ন বোর্ডের কাজেও এই ইটের ব্যবহার হচ্ছে।
তিনি জানান, এসব ইটের ব্লক তৈরির পাথর
ও বালু আনা হচ্ছে পঞ্চগড়ের ভজনপুর থেকে। এই কারখানাটি ২০২৩ সালের গোড়ার দিকে উৎপাদন
শুরু করে। ২২ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, মাটির তৈরির ইটের পিএসআই থাকে ৮০০ থেকে ১০০০ আর এসব ব্লকের পিএসআই
১৮০০ থেকে ২৫০০০। ফলে এগুলো খুবই টেকশই, পরিবেশ বান্ধব, অর্থ সাশ্রয়ী। প্রতি হাজার
বিক্রি হচ্ছে ১১ হাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকায়।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশলী এম আর রাজু আজকের
দর্পণকে জানান, মাটির তৈরি পোড়া ইটের বিকল্প হিসেবে কংক্রিটের ইট কৃষিবান্ধব, পরিবেশবান্ধব।
তাই ইটের বিকল্প হিসেবে বাড়ছে কংক্রিট ব্লকের ইট ব্যবহার। এলজিইডির রাস্তার কাজে কংক্রিটের
তৈরি ইউনি ব্লক ব্যবহার শুরু হয়েছে।