শরীয়তপুর থেকে সাইফ রুদাদ
শরীয়তপুর জেলা বাংলাদেশের অন্যতম একটি জেলা হলেও জেলার মানুষের বিনোদনের জন্য সরকারিভাবে নেই কোনো পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র। নদী ভাঙন, বন্যাসহ প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ কবলিত অঞ্চল হওয়ায় জেলার শিক্ষার হার কম। রাত পোহালে যে অঞ্চলের মানুষের শেষ সম্বল বসত বাড়িটুকুও নদীতে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি সে জেলার মানুষের বিনোদনের কথা চিন্তা করে পদ্মা নদীর তীরে ডা. আলমগীর মতি প্রায় ৭০ একর জমির উপর নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন মডার্ণ ফ্যান্টাসী কিংডম এন্ড মিনি চিড়িয়াখানা।
২০০৫ সালে নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে পার্কটি তৈরী করে এলাকার এক শ্রেণীর মানুষের সমালোচনার মুখে পড়েন ডা. আলমগীর মতি কিন্তু নিন্দুকের কথায় কান না দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে পার্কটিকে সুসজ্জিত করেছেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঔষধি, ফল-ফুল গাছ দিয়ে। পার্কটির সৌন্দর্য আরও বেশি বৃদ্ধি করেছে মিনি চিড়িয়াখানার ৫০ প্রকারের বেশি পশু-পাখি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরিণ, কুমিড়, ভাল্লুক, বানর, মেছ বাঘ, সজারু, শিয়াল, বন বিড়াল, কাঠ বিড়ালী, গাড়ল, তিতির, কালিম পাখি, উটপাখি, ইমুপাখি, ময়ুর।
মডার্ণ ফ্যান্টাসী কিংডম এন্ড মিনি চিড়িয়াখানার ইকো পার্ক অংশটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্যসহ অন্যান্য খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভাস্কর্য রয়েছে।
শিশু থেকে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ ও সুস্থ্য বিনোদনের জন্য জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, একুরিয়াম, লেক, চীনের গ্রেট ওয়াল, ঝুলন্ত ব্রিজ, সুইমিংপুল, আইফেল টাওয়ারসহ মনোরম পরিবেশ হিসেবেই পরিচিত পার্কটি করোনা কালেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাময়িকভাবে চলমান রয়েছে।
শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজসমূহের শিক্ষা সফর, পারিবারিক ট্যুর, বনভোজন ইত্যাদি পার্কটিতে যেন প্রতিদিনের কাণ্ড। প্রথমদিকে জেলার এক শ্রেণীর মানুষ পার্কটিকে সহজভাবে নিতে না পারলেও এখন তাদের বিনোদনের একমাত্র স্থান মডার্ণ ফ্যান্টাসী কিংডম এন্ড মিনি চিড়িয়াখানা।
ডা. আলমগীর মতি শুধু বিনোদনের চিন্তাই করেননি জেলার মানুষের কথা ভেবে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা-শরীয়তপুর সেন্ট্রাল লায়ন্স আই হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, স্কুল, দুস্থ্য নারী সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ একটি অঞ্চলের মানুষের যা কিছু চাহিদা সবই পূরণের চেষ্টা যেন তার।
মডার্ণ ফ্যান্টাসী কিংডম এন্ড মিনি চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বদরুল হায়দার জানান, সময়টা ভালো যাচ্ছে না, করোনা কালে অধিকাংশ সময় পার্ক বন্ধ থাকে। বিভিন্ন পশু-পাখির খাবার দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তারপর প্রায় ১০০ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. আলমগীর মতি সবকিছু স্বাচ্ছন্দেই সামলান কারণ তিনি মানুষকে বিনোদন দিতে ও সুস্থ্য রাখার জন্যই এসবের আয়োজন করেছেন। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে পার্কটির কারণে এলাকার যুব সমাজ মাদকমুক্ত হয়েছে অনেকটাই, কিশোর গ্যাঙের মতন কোনো বাহিনী তৈরী হচ্ছে না এখানে। ভবিষতে স্যারের পরিকল্পনা আরও অনেক বড়।