মেধাবী কর্মী আকর্ষণে নিজেদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। এ তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ডেনমার্ক। নতুন সমীক্ষা অনুসারে, সর্বোচ্চ মেধাভিত্তিক সক্ষমতার দেশ হিসেবে চতুর্থ স্থানে নেমে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে চীন এক ধাপ এগিয়ে ৩৬তম অবস্থানে উঠে এসেছে। দেশটি বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভালো পারফরম্যান্সের মাধ্যমে রেকর্ড অবস্থান নিশ্চিত করেছে। অলাভজনক ব্যবসায়িক স্কুল ইনসিয়াডের সাম্প্রতিক গ্লোবাল ট্যালেন্ট কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স (জিটিসিআই) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মেধাভিত্তিক সক্ষমতায় শীর্ষ দশে থাকা বাকি দেশগুলো হলো সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য। প্রতিবেদনটি তৈরিতে জিটিসিআইয়ের একাডেমিক ডিরেক্টর ও ইনসিয়াডের জ্যেষ্ঠ অ্যাফিলিয়েট প্রফেসর অব স্ট্র্যাটেজি ফেলিপে মন্টেইরো এবং ইনসিয়াডের বিশিষ্ট ফেলো ও পোর্টুলানস ইনস্টিটিউটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রুনো ল্যানভিন মুখ্য গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এ র্যাংকিংয়ে ধনী ও দরিদ্র অর্থনীতির মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান অব্যাহত থাকবে। এমনকি এ ব্যবধান আগামী বছরগুলোয় বাড়বে। কারণ বিশ্বজুড়ে চলমান সংকটগুলো দরিদ্র অর্থনীতির দেশগুলোর দক্ষ কর্মী আকর্ষণে বৃহত্তর প্রভাব ফেলবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য, পরিষেবা ও মানুষের বিস্তৃত হওয়ার প্রবণতায় সীমাবদ্ধতা বাড়তে পারে। এটি শ্রমবাজারের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এ বিষয়গুলো উন্নত অর্থনীতির শ্রমবাজারে নতুন ধরনের বৈষম্যও সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য গবেষকরা নিয়োগকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, আকর্ষণ ও মেধাবী কর্মীদের ধরে রাখতে নতুন নতুন উপায় অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ঘন ঘন চাকরি পরিবর্তন এবং পার্ট টাইম চাকরির প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। মহামারী-পরবর্তী সময়ে গবেষকরা আরো দেখেছেন, লিঙ্গ বিভাজন সমাধানের সাম্প্রতিক অগ্রগতি কভিডের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অনেক দরিদ্র অঞ্চলে শিক্ষায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আবারো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্রুনো ল্যানভিন বলেন, মেয়েদের স্কুলে পড়াশোনা এবং নারীদের উচ্চ পদে সমান সুযোগ দেয়া দক্ষতার বৈষম্য কমানোর গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপায়। দক্ষতার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে দিতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। ল্যানভিন এসডিজির ৪, ৫, ৮ ও ১০ নম্বর লক্ষ্য অর্থাৎ মানসম্পন্ন শিক্ষা, লিঙ্গসমতা, শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈষম্য হ্রাসের বিষয়গুলো উল্লেখ করে বলেন, লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন না হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
প্রতিবেদনের গ্লোবাল সিটি ট্যালেন্ট কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্সে শীর্ষ তিনে রয়েছে সানফ্রান্সিসকো, বোস্টন ও জুরিখ। এ তালিকায় সিঙ্গাপুরের অবস্থান ষষ্ঠতে নেমে গিয়েছে। এটি শীর্ষ ২০-এ স্থান পাওয়া এশিয়ার একমাত্র শহর। হিউম্যান ক্যাপিটাল লিডারশিপ ইনস্টিটিউটের (এইচসিএলআই) প্রধান নির্বাহী ডরিস সোহমেন-পাও বলেন, দক্ষ কর্মী আকর্ষণের প্রতিযোগিতায় এশিয়া অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অথচ বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই বসবাস করে এ অঞ্চলে। এজন্য টেকসই ও সামগ্রিক পদ্ধতিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের আরো সমন্বিত এবং সহযোগিতামূলক নীতির প্রয়োজন। প্রতিবেদনে গবেষকরা সুপারিশ করেছেন, মেধাবী কর্মী ও বিনিয়োগ আকর্ষণ কৌশলগুলোর সমন্বয় দক্ষ কর্মীদের বৈষম্য কমাতে পারে। এমনটি করা গেলে শহরগুলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ধাক্কা সামলাতেও এগিয়ে থাকবে। বার্ষিক এ প্রতিবেদনের নবম সংস্করণটি পোর্টুলানস ইনস্টিটিউট ও এইচসিএলআইয়ের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের ১৩৩টি দেশ ও ১৭৫টি শহরের দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের আকর্ষণ ও ধরে রাখার বিষয়গুলো পরিমাপ করা হয়েছে।