দিনাজপুর জেলায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত
আধুনিক জেলকারাগারে কয়েদী ও হাজতি আসামীদের কারা কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় শিক্ষাসহ বিভিন্ন
কারিগরি শিক্ষা দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে কর্মঠ করে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন
করছে।
দিনাজপুর জেল কারাগারের জেল সুপার নুরশেদ
আহমেদ ভূঁইয়া সাথে আলোচনা করা হলে তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দিনাজপুর জেলা শহরে সেই পুরাতন জেল খানাটিকে
আধুনিক যুগ-উপযোগী নতুন ভবনসহ নিরাপত্তা বেষ্টুনি নির্মাণে কারাগারটিকে অপরাধীদের সংশোধনাগার
হিসেবে রুপান্তরিত করেছেন। এই কারাগারে দন্ডিত আসামীদের ধর্মীয় শিক্ষাসহ তাদের স্বাভাবিক
জীবনে ফিরতে কারিগারি শিক্ষায় বিভিন্ন হাতের কাজ শিখানো হচ্ছে। তারা কারাগার থেকে মুক্তি
পেয়ে যাতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সে বিষয়ে প্রতিদিন দন্ডিত শিশু, কিশোর ও যুবক
দন্ডিত আসামীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এভাবে যে সব কিশোর মাদক সেবনসহ
মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে বা নিয়োমিত বিচার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেল কারাগারে
আসছে তাদেরকে কারা কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত সময় দিয়ে মাদক সেবন ও ব্যবসা থেকে বিরত করতে বিভিন্ন
উদ্বুদ্ধ করণ কর্মসূচী মাধ্যমে নিয়োমিত কাজ করা হচ্ছে। ফলে অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন।
এভাবে জেলখানার বাহিরে এই কাজগুলো পারাবারিকভাবে করা গেলে নতুন শিশু কিশোর ও যুবকেরা
মাদক সেবন থেকে বিরত করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ সোমবার পর্যন্ত এই কারাগারে
২ হাজার ৬৩৮ জন পুরুষ-মহিলা কয়েদী ও হাজতি বন্দী রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৪৩৯
জন ও মহিলা ২৯৯ জন। পুরুষ হাজতির মধ্যে ২ হাজার ১২১ জন হাজতি ও ৩১৮ জন কয়েদী রয়েছে।
মহিলাদের মধ্যে ১৭১ জন হাজতী ও ২৮ জন কয়েদী রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও ধর্মীয়
উৎসবে কয়েদীদের সদাচারণের জন্য মুক্তি দেয়া হয়ে থাকে।
তিনি জানান, দিনাজপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে
ঐতিহ্যবাহী লোক ভবনের বিপরীতে জেল রোডসংলগ্নে প্রায় ২৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ কারাগারটি
উত্তরবঙ্গের অন্যতম একটি বৃহৎ জেলা কারাগার হিসাবে ১৮৫৪ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত হয়। তখন
এটির ধারণ ক্ষমতা ছিল ৫৯০ জন বন্দির। ঐ সময় গড়ে প্রায় ১০০০ এর বেশী বন্দি এ কারাগারে
অবস্থান করত। সম্প্রতি দিনাজপুর জেলা কারাগার
পুন:নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য
৫ তলা বিশিষ্ট ১০টি আবাসিক ভবন, ৩ তলা বিশিষ্ট জেল সুপারের বাসভবন এবং কারাভ্যন্তরে
বন্দিদের জন্য ৬ তলা বিশিষ্ট ৬টি হাজতি ভবন, ৬ তলা বিশিষ্ট ৩টি কয়েদি ভবন, ১ তলা বিশিষ্ট
১টি ওয়ার্ক সেড, ১তলা বিশিষ্ট ১টি কিশোর বন্দী ভবন, মহিলা বন্দিদের জন্য সেফ কাস্টডি
২ তলা বিশিষ্ট ১টি ভবন, ১ তলা বিশিষ্ট ১টি ডিভিশন ভবন, ফাঁসির গ্যালোজ, ১ তলা বিশিষ্ট
২টি রান্নাঘর, ১ তলা বিশিষ্ট ১টি কেস টেবিল, প্রশাসনিক ভবনের উপরে জেলারের বাসভবনসহ
২তলা বিশিষ্ট রেষ্ট হাউজ, ১ তলা বিশিষ্ট রিজার্ভ গার্ড হাউজ, প্যারেড গ্রাউন্ড, গ্যারেজ,
২ তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হল ও আধুনিক কনফারেন্স রুম এবং বিদ্যামান মসজিদের আধুনিকীকরণ
ও পার্শ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, নব-নির্মিত কারাগারটি গত ২০১৬
সালে ২০ শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। কারাগারটি পুন:নির্মাণের
ফলে বর্তমানে এটি একটি আধুনিক কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এর বর্তমান ধারণ ক্ষমতা
৩ হাজার ১৫৩ জন। অন্তরীন বন্দির সংখ্যা গড়ে ১০০০ থেকে ১ হাজার ২০০ জন। এক জন জেল সুপার
এবং তার কাজে সহযোগীতা করার জন্য নির্বাহী অফিসার হিসাবে ১ জন জেলার, ২ জন ডেপুটি জেলার,
২ জন কারা সহকারী, ২ জন সর্বপ্রধান কারারক্ষী, ১১ জন প্রধান কারারক্ষী, ১৭৫ জন কারারক্ষী,
১০ জন মহিলা কারারক্ষী ও ১ জন গাড়ী চালক কর্মরত রয়েছেন।
অন্যদিকে এ কারাগারে বন্দিদের চিকিৎসার
জন্য রয়েছে একটি ৭৫ শয্যা বিশিষ্ট কারা হাসপাতাল। চিকিৎসার জন্য ১ জন মেডিকেল অফিসার
ও ১ জন ফার্মাসিস্ট নিয়োজিত রয়েছে। বন্দি চিকিৎসার বিষয়টি সার্বিকভাবে তদারকির জন্য
কারাবিধি মতে সিভিল সার্জন দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের মিশন ও ভিশন-রাখিব
নিরাপদ দেখাব আলোর পথ।