বাগেরহাটে ডিলারের দেয়া মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ কিটনাশক ব্যবহার করে নষ্ট হয়ে গেছে চাষীদের আমন ধানের ক্ষেত। বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের হেদায়েতপুর বিলের চাষীরা এই মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ কিটনাশক ব্যবহার করে বিপাকে পড়েছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ কীটনাশক বিক্রি করা অপরাধ। বিষয়টির তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেউবা ব্যাংক থেকে, কেউবা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমন ধানের চাষ করেছেন।এই আমন ধানই তাদের একমাত্র ভরসা। সারা বছরের খাবার ছাড়াও উৎপাদিত ধান বিক্রি করে দায়-দেনাসহ সব ধরনের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন চাষীরা। তারা নিজের জমি ছাড়াও বর্গা বা নগদ টাকায় জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু এবছর ডিলারের দেয়া মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ কিটনাশক ব্যবহার করে নষ্ট হয়ে গেছে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের হেদায়েতপুর গ্রামের চাষীদের স্বপ্ন।
তারা বলেন, বীজতলা থেকে জমিতে চারা লাগানোর পর চাষীরা সন্তানের মত যত্ন করে বড় করে তুলেছিলেন ধান গাছ। ফলন আসার আগেরই জমিতে লেদা ও পারলি পোকা আক্রমন করে। ডেমা ইউনিয়নের বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার ‘অমিও এন্টারপ্রাইজের’ সত্ত্বাধিকারী আকুঞ্জি করিম হোসেন কাছ থেকে ‘সিনজেনটা’ কোম্পানীর ‘ভিরতাকো’ নামের একটি কিটনাশক ক্রয় করে ব্যবহার করে। কিন্তু দিনের পর দিন এই কিটনাশক ব্যবহার করেও কোন উপকার হয়নি তাদের। চোখের সামনেই শেষ হয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন। পরে তারা দেখতে পান এই কিটনাশকের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
কৃষক গাজী বাবর আলী জানান, তিনি ৭ লাখ টাকা খরচ করে ৬০ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। ফলন খুবই ভাল ছিল। লেদা পোকায় আক্রমন করলে তিনি কাশিমপুর বাজারের করিমের নিকট থেকে ‘ভিরতাকো’ নামের কিটনাশক এসে ব্যবহার করেন। চার বার দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে প্যাকেটের গায়ে দেখেন ওই কিটনাশকের মেয়াদ নেই।
কৃষক লোকমান শেখ বলেন, তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জমি লীজ নিয়ে আমন চাষ করেছেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ কিটনাশকের কারনে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।
কৃষক নজরুল ইসলাম, ইব্রাহিম মোল্লা, শেখ জিল্লুর রহমান জানান, আমন ধানই তাদের একমাত্র ভরসা ছিল। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জমিতে ধান লাগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ডিলার করিমের কাছ থেকে নেয়া উত্তীর্ণ কিটনাশক তাদের শেষ করে দিয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কিটনাশক বিক্রেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন ও তাদের ক্ষতি পুরণ দাবী করেন চাষিরা।
এ বিষয়ে জানতে ডিলার অমিও এন্টারপ্রাইজে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ পাওয়া গেছে। মোবাইলে প্রতিষ্ঠানের সত্তাধিকারী আকুঞ্জি করিম হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তন্ময় দত্ত জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণ কিটনাশক বিক্রি করা অপরাধ। বিষয়টি জানার পরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।