সবকিছুর শুরু যেমন আছে, তেমনি শেষও আছে। মহাকাশে সভ্যতার ইতিহাস গড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের আয়ুও প্রায় শেষের দিকে। ২০৩১ সাল নাগাদ এটিকে ছুঁড়ে ফেলা হবে প্রশান্ত মহাসাগরের দুর্গম নিমো পয়েন্ট এলাকায়। স্টেশনটি ধ্বংস করতে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সাথে ১০ হাজার কোটি টাকার চুক্তিও করে ফেলেছে নাসা।
প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে মানুষের সবচেয়ে বড় সাফল্য- এই স্টেশন তৈরি হয়েছে ৪ দেশ ও একটি সংস্থার উদ্যোগে। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া স্টেশনটির নেতৃত্বে থাকলেও ইউরোপ, কানাডা এবং জাপান রয়েছে সহযোগীর ভূমিকায়।
পৃথিবীর বাইরে মানুষের একমাত্র স্থায়ী আবাসস্থল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, আইএসএস। নির্মাণ কাজ শুরু ১৯৯৮ সালে। আর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু ২০০০-এ।ভাসমান এই গবেষণাগারে প্রথম পা রাখেন দুই রুশ নভোচারী সের্গেই ক্রিকালেভ ও ইউরি গিডজেনকো, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী উইলিয়াম শেফার্ড।
এ পর্যন্ত ২০ দেশের ২শ'র বেশি নভোচারীর পা পড়েছে এই মহাকাশ কেন্দ্রে। বলা হয়, যাত্রা শুরুর পর থেকে এটি কখনো মানবশূন্য থাকেনি। ছয় রুমের এই স্টেশনে রয়েছে মাইক্রো গ্রাভিটি নিয়ে গবেষণাগার। এছাড়া পানি বিরুদ্ধ করা এবং ক্যান্সারের মতো রোগের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা হয় সেখানে। এ পর্যন্ত এখানে প্রায় ৩ হাজার ৩শ’ গবেষণা চালিয়েছে বিজ্ঞানীরা।
প্রতিবছর এটি পরিচালনায় নাসার খরচ ৪শ’ কোটি ডলার। ২৪
বছরের দীর্ঘ সফরে মহাকাশে পর্যটন ভ্রমণ, সিনেমার শুটিংয়ের মতো অনেক ইতিহাসের সাক্ষী
হয়েছে এই আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র।
তবে এখন বয়সের ভারে প্রায় ন্যুব্জ আইএসএস।
যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত নানা সমস্যার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন নভোচারীরা। গেল জুনে
৮ দিনের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে আটকে গেছেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর
ও সুনিতা উইলিয়ামস। কারিগরি ত্রুটির কারণে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মহাকাশ কেন্দ্রেই থাকতে
হবে দু'জনকে।
তাই মহাকাশ বিজ্ঞানের এই অনন্য কীর্তি
২০৩০ সাল পর্যন্ত টিকে থাকবে পৃথিবীর কক্ষপথে। এরপর মহাকাশযানের কবরস্থান নামে খ্যাত
নিমো পয়েন্টে ডুবিয়ে ফেলা হবে আইএসএস'কে।
ফুটবল মাঠের আয়তনের সমান এই স্টেশনকে মহাকাশ
থেকে পৃথিবীর বুকে নামিয়ে আনা সহজ হবে না বিজ্ঞানীদের জন্য। এরই মধ্যে এটিকে ধ্বংস
করতে স্পেসএক্সের সাথে ৮৪৩ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে নাসা।
এটিকে কক্ষপথ থেকে টেনে নামাতে ডি-অরবিট
ভেহিকল নামের বিশেষ একটি যান তৈরি করবে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান।