মহাকাশ ভ্রমণ বা দীর্ঘদিন মহাকাশে অবস্থানের
কারণে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার মুখে পড়তে হয় নভোচারিদের। ওজন কমা, হাড়ের ক্ষয়, শারীরিক
কাঠামোয় পরিবর্তনসহ মানসিক সমস্যাও তৈরি হয়। গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর বাইরে মহাকর্ষণের
অভাবই সমস্যার কারণ।
একুশ শতকের আধুনিক প্রযুক্তির অনন্য এক
নজির মহাকাশ পর্যটন। টেসলা কর্ণধার ইলন মাস্ক, অ্যামাজনের জেফ বেজোস আর ভার্জিন গ্যালাক্টিকের
মালিক রিচার্ড ব্রানসনের মতো ধনকুবেররা এরই মধ্যে মহাকাশ পর্যটন ব্যবসায় নেমেছেন। বিক্রি
শুরু করেছেন মহাকাশ ভ্রমণের টিকেটও।
তবে দুঃসাহসিক মহাকাশ যাত্রায় আছে বেশকিছু
শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ। এতদিন শুধু পেশাদার নভোচারীরা এসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি
হয়েছেন। এখন পর্যটকদের এর জন্য তৈরি থাকতে হচ্ছে।
মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির কারণে ওজনহীনতা
অনুভব করেন নভোচারীরা। শুরুতে আনন্দ হলেও পরে অস্বস্তি অনুভব হয়। আর এ রোগের বৈজ্ঞানিক
নাম স্পেস অ্যাডাপটেশন সিকনেস। এছাড়া মাধ্যাকর্ষণের অভাবে শরীরের ভেস্টিবুলার সিস্টেম
ঠিকমতো কাজ না করায় মস্তিষ্কের সাথে দেহের সংযোগ বাধাপ্রাপ্ত হয়। দুর্বল হয়ে যায় মাংশপেশী,
ক্ষয় হয় হাড়।
মহাকাশচারী মাটিয়াস মাউরার বলেন, “এখানে আসার পর
প্রথম ক’দিন মাথা কিছুটা
ঝিমঝিম করে। সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে মস্তিষ্ককে সবসময় সজাগ রাখতে হয়। কয়েক সপ্তাহ
কাটলেও পরও অস্বস্তি কাটেনা।”
মহাকাশে ভাসমান থাকার কারণে দেহের উপরের অংশে রক্ত
চলাচল বেশি হয়। এর ফলে নভোচারীদের মুখের অংশ ফুলে যায়। দেহ আকৃতির বদলও হয়। পৃথিবীর
চেয়ে মহাকাশে মহাজাগতিক বিকিরণের পরিমাণ ১০ গুণেরও বেশি হওয়ায় চোখেরও ক্ষতি হয়। আর
সবচে ভয়ঙ্কর গামা রশ্মি ও আয়নের প্রভাবতো আছেই।
মহাকাশচারী মাটিয়াস মাউরার আরও বলেন, “মহাকাশে নভোচারীদের
মুখমণ্ডল চাঁদের মতো গোল হয়ে যায়। এর কারণ মহাকাশে দেহের তরল অংশগুলো উপরের দিকে চালিত
হয়। ফলে পায়ে রক্ত চলাচল কম হয়। এবং পৃথিবীর তুলনায় পা চিকন হয়ে যায়। তবে মাথায় বেশি
তরল চড়ে গেলে প্রচুর চাপ তৈরি হয়। এছাড়া কমে যায় দৃষ্টিশক্তি। পৃথিবীতে যারা চশমা পরেননা
এমন অনেকেরই এখানে চশমার প্রয়োজন হয়।”
মহাকাশে ঘুমচক্র নেই। রাত-দিনের
হিসাবও নেই। ফলে দীর্ঘ অবস্থানে মানসিক চাপ তৈরি হয়। বারবার প্রস্রাব করার প্রবণতা
থেকে পানিশূন্য হয় নভোচারীর শরীর।