পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও এইচএসকোডের (হারমোনাইজড সিস্টেম) ভুলের শাস্তি দেয়ার কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রথমবার কোনো পণ্য আমদানিতে শিথিলতা এলেও পরবর্তী সময়ে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করবে এনবিআর। কাস্টমস হাউজের কার্যক্রম অনেক বেশি ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করতে সংস্থাটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি এনবিআর একটি চিঠিতে এ বিধান জারি করেছে।
এনবিআরের ওই চিঠিতে ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের ১৫৬(১) সেকশনের ১৪তে দণ্ড আরোপের বিধিতে এ পরিবর্তন এনেছে। এ বিধান অনুযায়ী প্রথমবার মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শিথিলতা আনা হয়েছে। এনবিআর বলছে, আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের বাণিজ্যিক বা ট্যারিফ বর্ণনা, আর্ট নম্বর, পার্ট নম্বর, ব্র্যান্ড, মডেল, সাইজ, কালার, ক্যাপাসিটি ইত্যাদি সঠিক থাকতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ অনুযায়ী এইচএস কোড ৬ ডিজিট পর্যন্ত নির্ভুল থাকতে হবে। এ বিধি অনুযায়ী, প্রথমবার কোনো পণ্য আমদানিতে সিপিসি ভুল হলে তা মিথ্যা ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করবে না কাস্টমস হাউজ। তবে পরবর্তী সময়ে আমদানিতে সিপিসি ভুল হলে তার রাজস্ব সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে মিথ্যা ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে।
এছাড়া একবার যদি কোনো পণ্য একটি এইচএসকোড ও সিপিসির আওতায় শুল্কায়নের মাধ্যমে খালাস হয়ে যায় ও পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আগের ওই সিপিসি ও এইচএসকোড ভুল ছিল, সেক্ষেত্রে আগেরটা আমদানি মিথ্যা ঘোষণা হিসেবে বিবেচিত হবে না। আংশিক শিপমেন্ট সুবিধাযুক্ত ঋণপত্রের ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য হবে।
১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের ১৫৬(১)-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৩২-এর অধীন কোনো অপরাধ করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি যে পণ্যের ক্ষেত্রে অপরাধ করেছেন, সে পণ্যমূল্যের অনধিক তিন গুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং উক্ত পণ্যও বাজেয়াপ্ত বলে বিবেচিত হবে। একই সঙ্গে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বৎসর মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অথবা উভয় দণ্ডে অধিকতর দণ্ডিত হবে।’
তবে এনবিআরের প্রাক বাজেট আলোচনায়ও এ ভুলের শাস্তি শিথিলতার বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন এনবিআরকে জানায়। দীর্ঘদিন ধরেই এ বিধিবিধান বাতিলের দাবি জানিয়েছিল ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। নতুন এ বিধির বিষয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান বলেন, আমরা নতুন বিধিটি দেখেছি। অবশ্যই নতুন বিধি জারি করায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কিছুটা সুবিধা হবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যবসা কার্যক্রম সহজ করতে এনবিআর সবসময় কাজ করছে। কাস্টমস হাউজের কার্যক্রমকে সব স্টেকহোল্ডারের জন্য সহজ করার ক্ষেত্রে এটি এনবিআরের একটা কার্যকরী পদক্ষেপ বলে জানান ওই কর্মকর্তা।