ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একটি অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের আবেদনের ভিত্তিতে বুধবার (২৬ জুলাই) লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এ ঘোষণা দেন। এখন ১০ দিনের মধ্যে তিনি অনাস্থা ভোটের তারিখ ঘোষণা করবেন।
কংগ্রেসের নেতা মনোজ কে ঝা বুধবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আমরা এই অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব করিনি। কারণ লোকসভায় আমরা সংখ্যালঘু। এটা আমাদের জানা। কিন্তু মণিপুর সহিংসতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে, মোদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে বাধ্য করতেই আমরা এ অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব করেছি।
২০১৪ সাল থেকে ক্ষমমতায় থাকা মোদির বিরুদ্ধে ইতোঃপূর্বে আরেকবার অনাস্থা ভোটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোনো রাজ্যকে বিশেষ ক্যাটাগরির মর্যাদা দেওয়া যায় কিনা, তা আলোচনা করতেই তা ২০১৮ সালে সেই অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। লোকসভার এক সদস্যে সেই ভোটের আবেদন করেছিলেন। প্রায় ১২ ঘণ্টা তর্ক-বিতর্কের পর সেই অনাস্থা ভোটের পরিসমাপ্তি ঘটে।
বিবিসি জানায়, ভারতের লোকসভায় অনাস্থা ভোট গৃহীত হওয়ার জন্য অন্তত ৫০ সদস্যের সম্মতি লাগে। বুধবার কংগ্রেসের পাশাপাশি মণিপুর ইস্যুতে ভারত রাষ্ট্র সমিতি নামের একটি পার্টিও অনাস্থা ভোটের আবেদন করেছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত সমর্থন না থাকায় তা বাতিল হয়।
মণিপুর সহিংসতা: দুই মাস ধরে চলা মণিপুর সহিংসতার একটি ভিডিও ১৯ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ৪ মে ধারণ করা ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি মব বা উন্মত্ত জনতা দুজন নারীকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরাচ্ছেন। ওই দুই নারী রাজ্যটির সংখ্যালঘু আদিবাসী কুকি জনগোষ্ঠীর। ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে পরের দিন ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার মোদি প্রথমবারের মতো মণিপুর সহিংসতা নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি ওই ঘটনা ক্ষমার অযোগ্য এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। মোদির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মাথায় প্রধান অভিযুক্ত খুইরেম হেরোদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার, ২২ জুলাই পর্যন্ত একই ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারীদের ধর্ষণ ও নগ্ন করে ঘোরানোর ঘটনার সঙ্গে আরও অন্তত ৩০ জন জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্ক্রলডটইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ মে মূলত কুকি জনগোষ্ঠীর তিনজন নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। এরপর অভিযুক্তরা কিছু লোককে খেপিয়ে তিন নারীর মধ্যে দুজনকে নগ্নভাবে রাস্তায় ঘোরান।
আলজাজিরা জানায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যটিতে স্থানীয় আদালতের একটি আদেশকে কেন্দ্র করে ৩ মে থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতিস ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কুকি-জোদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। আদালতের আদেশে কুকি-জোদের মধ্যে মেইতিসদেরও তফসিলি সম্প্রদায়ের মতো যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।
কিন্তু কুকি-জোদের দাবি, মেইতিসরা তো সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা কেন বিশেষ সুবিধা পাবে। সবচেয়ে বড় শঙ্কা ছিল, বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে কুকি-জো অধ্যুষিত অঞ্চলে মেইতিসরাও জায়গা কিনতে পারবে। এই দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হওয়া সংঘাত এখনও থামেনি। সংঘাতে সেখানে এখন পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থানচ্যুত হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি।