স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বসিত গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা। কারণ এই সেতুর কারণে সড়ক পথের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে যেমন দক্ষিণাঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তেমনি শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। মোংলা বন্দর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য রফতানিতে সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘণ্টা। যা আগে লাগতো ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। এখানে তাদের সময় কমবে ৬ ঘণ্টা। আর মোংলা বন্দর থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে সময় লাগত ১৪ ঘণ্টা। সেতুর কারণে তা কমে এখন হবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। এখনেও সময় বাঁচবে ৬ ঘণ্টা। সবমিলিয়ে ব্যবসায়ীদের মোট ১২ ঘণ্টা সময় এগিয়ে থাকবে। যা তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পুঁজি তো বটেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবানও হবেন তারা।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি মোস্তফা জেসান ভূট্রো বলেন, সময় নষ্ট তাদের ব্যবসায় বড় ধরনের সমস্যা। পণ্য নিয়ে ঢাকা বা চট্রগ্রামে গেলে পদ্মার ফেরিতেই আটকে থাকতো হত কয়েক ঘণ্টা। এতে একদিকে যেমন সময় ও অর্থ নষ্ট হত, অন্যদিকে ভোগান্তিতে পড়তে হত তাদের। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে বলে এই ব্যবসায়ী নেতার প্রত্যাশা।
মোংলা বন্দর বার্থ-শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং বন্দর ব্যবহারকারী এস এম মোস্তাক মিঠু, এইচ এম দুলাল ও মশউর রহমান বলেন, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্প নির্মাণের মালামাল এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে। আমরাই আবার এখান থেকে আমদানি হওয়া পণ্য খালাস করে নদী ও সড়ক পথে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু পদ্মায় সেতুর অভাবে সেসব মালামাল দেরিতে পৌঁছেছে। মাদারিপুরের কাঁঠালবাড়ি নৌ ফেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তা আটকে থাকত। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই সমস্যায় আর পড়তে হবে না জানিয়ে এই ব্যবসায়ীরা বলেন, তাদের অনেক সময় বাঁচবে। এই সময়ে সমুদ্র বন্দর মোংলা থেকে যে কোনো পণ্য খালাস হওয়ার পর তা খুব সহজেই পৌঁছে দেওয়া যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণের অর্থনৈতিক দ্বারকে খুলে দেবে। ফলে এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে বিভিন্ন শিল্প কারখানা। এ প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এই বন্দরের গতিশীলতা বেড়ে যাবে এবং একই সঙ্গে সড়ক পথে সময় কমে দ্রুত এ বন্দর থেকে পণ্যবাহী কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিং করা যাবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিকিএমইএ) তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এখানে তারা বিনিয়োগ করবেন। তারা এই বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী কোম্পানিও যোগাযোগ করেছেন বলেও চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মুসা জানান।
মোংলা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মাহাবুব আহম্মেদ সিদ্দিক বলেন, সেতু হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক কমে যাবে। এখানকার বিনিয়োগকারীদের কাঁচামাল পণ্য আগে যেখানে জাহাজে করে আসতো এখন আসবে সড়ক পথে। সেতুটি চালু হলেই এই ইপিজেডে বিনিয়োগকারীও বাড়বে বলে জানান তিনি।