পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ওসি সৈয়দ আব্দুল্লাহ, স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও শাশুড়ি কারিমা খাতুনের বিরুদ্ধে আঠার কোটি পনের লক্ষ ষাট হাজার দুইশত ছিয়াশি টাকার অবৈধ স্থাবর সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫জুন) পিরোজপুর দুদক কার্যালয়ের অনুসন্ধানী কর্মকর্তা (সহকারি পরিচালক) মোস্তাফিজ বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪২০/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে সৈয়দ আব্দুল্লাহর নিজের নামে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটি এ ৬ কাঠা করে দুইটি মোট ১২ কাঠার প্লট ক্রয় করেন। তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার এর নামে ঢাকা মহানগরীর রমনা থানাধীন বড় মগবাজার, রমনায় ইস্পাহানি কলোনিতে এবিসি রিয়েল এস্টেট লি: এর নির্মিত দ্য ওয়েসিস কমপ্লেক্সের টাওয়ার নং ৫ এর ১০ম তলায় অ্যাপার্টমেন্ট, খিলগাঁও থানাধীন পুলিশ প্রজেক্ট সাউদার্ন পার্ক-১, ব্লক-এম, মেইন রোড পশ্চিম নন্দীপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা হোল্ডিং নং ১১/২৭/১৫ এর এফ-১০ নম্বরে ২০০০ বর্গফুট এর একটি অ্যাপার্টমেন্টসহ ১ টি বাণিজ্যিক স্পেস ও শাশুড়ির নামে ১ টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে অবৈধ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, আসামী সৈয়দ আব্দুল্লাহ প্রতারণার উদ্দেশ্যে তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার এর নামে ০২(দুই) টি এনআইডি কার্ড তৈরি করেন যার নম্বর ৬৮৬১৩০১৮৩৩ ও ৮৭০৮২০৩৮৬৭ এবং নতুন আরও একটি এনআইডি এর জন্য আবেদন করেছেন যা প্রক্রিয়াধীন আছে। যার ফরম নং ১১৪৫৩৯০৬০। ০২(দুই) টি এনআইডি এর জন্ম তারিখ যথাক্রমে ০১/০৪/১৯৭৮ খ্রি. ও ১০/০৪/১৯৮২ খ্রি. এবং যে নতুন এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে তাতে ফরমে উল্লেখ করা হয়েছে জন্ম তারিখ ০১/০৪/১৯৮০ খ্রি.।
উল্লিখিত ২ টি এনআইডি এর বিপরীতে আসামী ফারহানা আক্তার ট্যাক্স শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)- ৪৬৯৩৯৪২৮১৮১২ এবং ৫৮২৪১২৬৫৭৪৫৫ গ্রহণ করেন। উপর্যুক্ত তথ্য পর্যালোচনায় ও অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায়, আসামী সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টগণ কর্তৃক বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত হিসাব খোলা এবং উক্ত হিসাবসমূহে ১,৭৬,৯৫,৮৫৪.৭৭ টাকার আমানত গচ্ছিত রাখার তথ্য, বিভিন্ন ব্যাংকে ২টি এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে ১.০০ কোটি টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ৩১ লক্ষ টাকায় গাড়ী ক্রয়সহ (১,৭৬,৯৫,৮৫৪.৭৭+ ১,০০,০০,০০০+ ৩১,০০,০০০) = ৩,০৭,৯৫,৮৫৪.৭৭ /-(তিন কোটি সাত লক্ষ পচানব্বই হাজার আটশত চুয়ান্ন টাকা সাতাত্তর পয়সা) টাকার অস্থাবর সম্পদ ক্রয় করেছেন। এছাড়া আসামী সৈয়দ আব্দুল্লাহ নিজ নামে ২ টি প্লট, স্ত্রী ফারহানা আক্তার এর নামে ২ টি আবাসিক ফ্ল্যাট, ১ টি বাণিজ্যিক স্পেস, স্ত্রী ফারহানা আক্তার এর ব্যাংক হিসাব হতে অর্থ পরিশোধ করে শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে ১ টি আবাসিক ফ্ল্যাট বাবদ মোট (৪০,৪২,২০০/- + ২,৭৩,০৪,২৩২+ ৪০,০০,০০০+ ২,৭০,২০,০০০+ ৮,৮৩,৯৮,০০০)=১৫,০৭,৬৪,৪৩২ (পনের কোটি সাত লক্ষ চৌষট্টিহাজার চারশত বত্রিশ টাকা মাত্র)টাকার অধিক মূল্যের স্থাবর সম্পদ ক্রয় করেন।
এছাড়া আসামীদের নামে মোট ১৫,০৭,৬৪,৪৩২/- (পনের কোটি সাত লক্ষ চৌষট্টি হাজার চারশত পনের) টাকার স্থাবর ও ৩,০৭,৯৫,৮৫৪.৭৭/- (তিন কোটি সাত লক্ষ পচানব্বই হাজার আটশত চুয়ান্ন টাকা সাতাত্তর পয়সা) টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ১৮,১৫,৬০,২৮৬/- (আঠার কোটি পনের লক্ষ ষাট হাজার দুইশত ছিয়াশি) টাকার স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
আসামী সৈয়দ আব্দুল্লাহ এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার পদমর্যাদার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দূর্নীতির মাধ্যমে অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ জ্ঞাতসারে স্থানান্তর/রূপান্তর/হস্তান্তর করে নিজের নামে, তার পক্ষে তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার এর নামে, তার পক্ষে শাশুড়ি মিসেস কারিমা খাতুন, এর নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৮,১৫,৬০,২৮৬/- (আঠার কোটি পনের লক্ষ ষাট হাজার দুইশত ছিয়াশি) টাকা মূল্যের অধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসেব পাওয়া গেছে।
এছড়াও মানিলন্ডারিং এর উদ্দেশ্যে তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার সাথে যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যাবহার করে স্ত্রী এর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলে ব্যাংক হিসাবসমূহে মোট ২৬,৫০,০০,০০০/- (ছাব্বিশ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ) টাকার অধিক সন্দেহজনক লেনদেন করে।
অভিযুক্ত সৈয়দ আব্দুল্লাহ বর্তমানে ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ক্রাইম শাখা পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
পিরোজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচাললক শেখ গোলাম মাওলা বলেন, মঠবাড়িয়া থানা সাবেক অফিসার ইন চার্জ (ওসি) সৈয়দ আব্দুল্লাহ বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদক ও চোরাকারবারিদের সাথে সখ্যতা, মিথ্যা মামলার রেকর্ড ও অনৈতিকভাবে বিপুল পরিমান সম্পদের অর্জনের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য ২০২০ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয় হতে দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বরিশাল এ অনুসন্ধান এর জন্য অনুমোদন দেয়া হয়।
পরবর্তীতে সালের ৩ জুলাই দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পিরোজপুর উদ্বোধনের পর অভিযোগটি আমার তদারকীতে ও পিরোজপুর দুদক কার্যালয়ের অনুসন্ধানী কর্মকর্তা ( সহকারি পরিচালক) মোস্তাফিজ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন। দির্ঘ অনুসন্ধানের পর আজ সৈয়দ আব্দুল্লাহ সহ তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।