ভালোমানের ছোলার
দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে। অ্যাংকর ও খেসারি ডালের দামও
বেড়েছে পাঁচ টাকার মতো। অ্যাংকর ডাল খুচরায় কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ও খেসারির ডাল
মানভেদে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে
বেগুন ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দামও কেজিতে
বেড়েছে পাঁচ টাকার মতো। বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকায়।
পবিত্র রমজান
মাস শুরু হওয়ার পথে। রোজায় নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। আর সেই সুযোগে
এই সময়ে ওইসব পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ইফতারি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়
পণ্যের দাম বেশ কিছু দিন আগে থেকেই বাড়তির দিকে। গত এক সপ্তাহে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য
হিসেবে পরিচিত খেজুর, চিনি, ছোলা, বেসন, পেঁয়াজের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। রোজার আগে
গতকাল শেষ শুক্রবারের বাজারে জিনিসপত্রের দাম আগের দিনের চেয়ে আরও খানিকটা বেড়ে যায়।
ক্রেতারা অনেকেই অভিযোগ করেন, পণ্যের দাম নানাবিধ কারণে যতটা না বাড়ে, কখনও কখনও তার
চেয়ে বেশি বাড়ে ব্যবসায়ীদের খেয়ালখুশিতে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা
জানান, রোজার আগে হঠাৎ করে কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। কিছু সচ্ছল মানুষ আছেন যাদের
কারও হয়তো এক কেজি ছোলা প্রয়োজন। কিন্তু তিনি দুই কেজিও কিনে ফেলেন। এমন মনোভাবও বাজারে
কৃত্রিম চাপ তৈরি করে। যার কুফল ভোগ করতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের।
কারওয়ান বাজারের
ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. আলী হোসেন বলেন, খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি
হচ্ছে ১৪৮ টাকা, এক লিটারের বোতল ১৬৩ থেকে ১৬৫ টাকা, প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৪০ ও প্যাকেট
১৪৮ টাকা, ছোলা ৯০ থেকে ১০০, অ্যাংকর ও ডাবলি ৮০ টাকা, বেসন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে
বিক্রি হচ্ছে। এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার মহল্লা পর্যায়ে ছোলা ১১০ টাকা কেজিতে,
মোটা মসুর ডাল ১২০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৫০ টাকা, বোতলজাত দুই লিটার সয়াবিন তেল ৩৪০
টাকা, ছোলার বেসন ১৪০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া মরিয়ম খেজুর মান ভেদে ১৩০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য খেজুরের
দামও গতবারের চেয়ে এ বছর অনেকটাই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
ডাল ও ছোলার
দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন
বলেন, ডালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ডলার রেট অন্যতম কারণ। আমরা চাহিদামতো ডলার পাচ্ছি
না। তবে এখনও যে পরিমাণ ডাল ও ছোলা আছে তাতে রমজানে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।
এক সপ্তাহের
ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। কেজিপ্রতি
ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০
থেকে ৩৪০ টাকায়।
রমজানের আগে
মুরগির দাম এত বাড়ছে কেন তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন
হাওলাদার বলেন, গত বছরের আগস্ট থেকে করপোরেট কোম্পানিগুলো প্রান্তিক খামারিদের চাহিদামতো
বাচ্চা দিচ্ছে না। বাচ্চা না পেয়ে অনেকেই খামার বন্ধ রেখেছে। এই ফাঁকে তারা কন্ট্রাক্ট
ফার্মিংয়ের মাধ্যমে বাজারে মুরগি সরবরাহ করছে। বর্তমানে বাজারের ৫০ ভাগ মুরগি হচ্ছে
কন্ট্রাক্ট ফার্মের।
দাম বাড়ার আরও
একটি কারণ হচ্ছে, প্রান্তিক খামারিদের পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়ে যাওয়া। তার সঙ্গে রয়েছে
চাঁদাবাজি। প্রতিটি গাড়িতে চাঁদা দিতে হচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে
স্থানীয় বাজারের চাঁদা, রাস্তায় অন্যান্য চাঁদা মিলে বিপুল পরিমাণ অর্থ কেবল চাঁদা
বাবদ চলে যাচ্ছে। এ কারণেও দাম বেড়ে যাচ্ছে।
সুমন হাওলাদার
বলেন, একটি গাড়িতে ২ থেকে আড়াই হাজার মুরগি পরিবহনের সুযোগ থাকলেও করপোরেট কোম্পানিগুলো
১২০০ থেকে ১৫০০ মুরগি পরিবহন করছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রান্তিক খামারিদের বিআরটিএ
থেকে গাড়ি দেওয়া হচ্ছে না। আবার কিছু স্থানে গাড়ি দিলেও তার ওপরে খাঁচা বসাতে দেয় না।
সেখানে চাঁদা দিয়ে খাঁচা বসাতে হয়। দিনের বেলা গাড়ি চলতে দেওয়া হয় না। ইত্যাদি নানা
কারণে মুরগির দাম বাড়ছে।
এদিকে গরুর
মাংসের দামও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। বাংলাদেশ
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম, সবকিছু ঠিক থাকলে ৫০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি
করা সম্ভব হতো। কিন্তু নির্বাচনের আগে ভোক্তা অধিদপ্তর সাড়ে ৬০০ টাকা দাম নির্ধারণ
করে দিয়ে সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে কোথাও কোথাও প্রায় ৮০০ টাকা কেজিতে মাংস
বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।