বিসিএস কর্মকর্তাদের
৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রবিবার
সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এক
নবীন কর্মকর্তা। সহকারী মহা-হিসাবরক্ষক সংযুক্ত ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমির
(ফিমা) পিরু মোল্লা নামের এই কর্মকর্তার সংগ্রামী ও কষ্টের জীবনের গল্প মুগ্ধ হয়ে
শোনেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য শেষে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে
কথা বলেন।
নিজের সংগ্রামী
জীবন ও পরিবারের কষ্টের কথা প্রকাশ করে পিরু তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজ আমি স্বপ্নপূরণ ও ভাগ্য বদলের
গল্প বলতে এসেছি। এ স্বপ্নপূরণ আমার মতো হাজারও কর্মপ্রত্যাশী তরুণের। এ ভাগ্য বদল
চিরায়ত বাঙলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি প্রাণীর।’
তিনি বলেন,
‘আমি
এসেছি ফরিদপুর জেলার শোভারামপুর গ্রামের ভূমিহীন এক কৃষক পরিবার থেকে। বাবা আর ভাইদের
সঙ্গে অন্যের জমিতে সেচ দেওয়া, চুক্তিতে ধান-পাট কাটা, ক্ষেত নিড়ানি দেওয়াই ছিল
আমার পরিবারের উপার্জনের উৎস।’
পিরু মোল্লা
বলেন, ‘ঝড় বৃষ্টির রাতে ছনের ঘরের চালা উড়ে যাওয়ার ভয়ে ঘুম হতো না আমাদের।
সেই আমারই ইচ্ছে ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে
যেতে পারব কিনা সেই আশঙ্কা ছিল। আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্নটা প্রায় শেষই হতে
যাচ্ছিল। যদি না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং
বিভাগে পড়ার সুযোগ পেতাম। কেননা অর্থের অভাবে কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য
কোথাও ভর্তি ফর্ম তুলতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় মাঝে মধ্যেই
আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে রাজমিস্ত্রীর কাজে যেতে হতো। প্রাইভেট টিউশনি না পাওয়া পর্যন্ত
প্রথম বর্ষের বেশির ভাগ সময় আমি সকালে নাস্তা করতে পারিনি। তখন ১৮ ঘণ্টা আমাকে না
খেয়ে থাকতে হয়েছে।’
জীবনের গল্প
বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এমন একটা অনিশ্চিত জীবন থেকে উঠে এসে আজ আমি আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সামনে
কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। ২০২০ সালের আগস্ট মাসের ৩ তারিখে আমার প্রথম চাকরিতে যোগদানের
দিনই আব্বার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। এর দু’মাস আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে আমার ভগ্নিপতি মারা যান। সন্তানসম্ভবা বোন
আর তার দুই সন্তানের ঠাঁই হয়েছিল আমাদের পরিবারে। চরম আর্থিক সংকটে আব্বার চিকিৎসা
যখন প্রায়ই বন্ধ, তখন আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) সহযোগিতা পাই। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর
মাত্র ১৫ মাস পর আব্বা মারা যান। এর কিছুদিন পর মেঝ ভাই ও বিধবা বোনের শরীরেও ক্যানসার
শনাক্ত হয়।’