আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সংগঠনটির ২২তম সম্মেলন। দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিয়মিত বিরতিতে তাদের সম্মেলন করে আসছে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দলটির প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যেমন আশা-আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে তেমনি দেশের মানুষের জন্য তাদের দায়-দায়িত্বও বাড়ছে।
এমন এক সময়ে এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে যখন দলটির সরকার ক্ষমতায় কিন্তু দেশ সত্যিকার অর্থেই কিছু সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটটা প্রকট চেহারা নিয়ে সামনে রয়েছে। তবে রাজনৈতিক সংকট নিয়েও এই মুহূর্তে ভাবতে হচ্ছে দলটিকে।
আগামী বছরের শেষে বা পরের বছরের শুরুতে দেশে অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কী প্রত্যাশা- তারা কি আরেকবার ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে পারবে? দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কিংবা আওয়ামী লীগেরই আগামীর রূপ-রং কেমন হবে? সবটা কি সাদা চোখের ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ হবে নাকি অন্যকিছুর ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করে রাখছে দলটি? বিপরীত বাতাসের জন্য কতটা প্রস্তুত থাকবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ?
নানা হিসাব-নিকাশ আর প্রশ্ন-উত্তর গায়ে জড়িয়ে আজ সম্মেলনে মিলিত হবেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বলয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র- সর্বত্র কাউন্সিলের উষ্ণ আবহ দেখা গেছে গত কিছুদিন। দেশের রাজনীতি সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা উত্তপ্ত হলেও আওয়ামী লীগ পথ চলছে তার আপন গতিতে। দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপির মাঠের রাজনীতির শীর্ষ দুই নেতা এই মুহূর্তে কারাগারে রয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ অনেকটা সচেতনভাবেই তাদের কারাপ্রকোষ্ঠে রেখে নিজেদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখছে।
সারা দেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আজকের সম্মেলনের দিকে। এই দৃষ্টি যেমন নতুন নেতৃত্বের জন্য তেমনি নতুন দিক নির্দেশনার জন্যও। দলের প্রধান শেখ হাসিনা আজ সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের জন্য ভবিষ্যতের পথরেখা দেবেন বলে আশা করছেন সবাই। বিশেষ করে এক বছর পরে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনের জন্য এখন থেকে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে তার দিক-নির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি- এমনটা প্রত্যাশা করছেন তারা। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে কিংবা তাদের কোনো ষড়যন্ত্র বা বেআইনি পদক্ষেপ স্থানীয়ভাবে কীভাবে মোকাবিলা করবে তৃণমূল তার নির্দেশনাও আজ দিতে পারেন দলীয় প্রধান।
বহুল আলোচিত এবং অপেক্ষার এই সম্মেলনে বড় প্রশ্ন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন? স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য ‘স্মার্ট’ দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তিটি কি নতুন কেউ হবেন, নাকি গত দুইবারের মতো আরেকবার উচ্চারিত হবে ওবায়দুল কাদেরের নাম? সম্মেলন ঘিরে সপ্তাহ দুয়েক যে আলোচনা এবং যে ‘নীরবতা’ এক ধরনের (সম্পাদক পদ নিয়ে) তাতে বাতাসের প্রকৃত বার্তা পরিষ্কার নয়। সম্মেলনেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার অপেক্ষার অবসান হবে। তবে এ কয়দিনে নতুন কোনো নাম জোরালোভাবে কানে আসেনি, দেয়ালে প্রতিধ্বনিও শোনা যায়নি। সুতরাং ‘খেলা হবে’!
জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চের পেছনে যে ডিজিটাল ব্যানার স্থান পেয়েছে সেখানে একটি নৌকা রয়েছে। ভবিষ্যতের নৌকায় কারা উঠবেন সে ধরনের কোনো ইঙ্গিত অবশ্য সেখানে নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় আর মেয়ে পুতুল ব্যানারের যে জায়গাগুলোতে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তা অর্থবহ হতে পারে। ‘শেখ হাসিনার পরে’ বিষয়টা যদিও সেভাবে প্রকাশ্যে কেউ আনতেই চান না, আওয়ামী লীগ নেতারা তো ননই- বিচক্ষণ রাজনীতিক শেখ হাসিনা নিজে সেই চিন্তা করতেই পারেন। ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের ব্যানারে ভবিষ্যৎ কি পড়া যায়? হ্যা, না- দুটোই হতে পারে। তবে সত্যি সত্যি এমন একটি ভাবনা থাকা এবং এ বিষয়ে একটা ঠান্ডা মাথার সমাধান প্রত্যাশা করাও তো জরুরি যে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ আসলে কে গড়বেন, কারা গড়বেন?
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন থেকেই শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যাত্রা শুরু করবে আওয়ামী লীগ। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রায় কে কে নৌকার বৈঠা ধরবেন, কে কে হবেন মাঝি- আজ দিনশেষে নিশ্চয়ই মিলবে সে উত্তর।
উপমহাদেশের অন্যতম সফল রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া দলটির ভবিষ্যতের পথচলা সুচিন্তিত এবং মসৃণ হোক। দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী হোক আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছেন যত লক্ষ শহীদ আর যত লক্ষ মা-বোন দিয়েছেন সম্ভ্রম তাদের মনে রেখে হাজার বছর পথ চলুক এই দুর্দান্ত রাজনৈতিক দলটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন সফল হোক। ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে দলটির নেতাকর্মীদের প্রতি শুভেচ্ছা।