কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
লাল মাটির ক্যাম্পাস খ্যাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিল্প-সংস্কৃতি ও মুক্ত চিন্তা চর্চার গুরুত্বপূর্ণ এক অংশীদার হয়ে উঠেছে কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তমঞ্চ। কৃষ্ণচূড়া আর জারুলের রাজ্যে লাল সিরামিক ইটে তৈরি মুক্তমঞ্চটি
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। সারা বছরেই নানা অয়োজনে ব্যস্ত থাকে মঞ্চটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অনুষ্ঠান,
হেমন্ত উৎসব, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো কতৃক আয়োজিত বির্তক, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,
কনসার্টে মুখর থাকে মঞ্চটি। অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রতিদিন বিকেলে মঞ্চ এবং দর্শকসারি হয়ে
উঠে গল্প এবং আড্ডার জায়গা। কখনো দলবেঁধে আধুনিক গান, দেশাত্মবোধক গান, আবার কখনোও
জারি গান বা কখনো একসাথে বসে স্মৃতিচারণে ব্যস্ত থাকে মঞ্চ।
সারাদিনের ক্লাস পরীক্ষা শেষে অবসর সময়
কাটাতে অনেকের পছন্দ মুক্তমঞ্চ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মঞ্চের দর্শক সারির পাশাপাশি মঞ্চের
সামনের খালি জায়গা পূর্ণ থাকে। মঞ্চের সামনের খালি জায়গায় শিক্ষার্থীরা ক্রিকেট খেলে। মঞ্চের উপর ছাতার মতো ছড়িয়ে আছে কাঁঠাল গাছের
শাখা প্রশাখা। গ্রীষ্মে জারুল ফুল আর শরতে
কাশফুল মঞ্চের আশেপাশের জায়গা সাজিয়ে তুলে।
গ্রিক 'অ্যাম্ফিথিয়েটারের' আদলে তৈরি এই
স্থাপনা। অ্যাম্ফিথিয়েটার হল একটি উন্মুক্ত গোলাকার বসার জায়গা যা বিনোদন, পরিবেশনা
এবং খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত হয়। খোলা আকাশের নিচে বানানো এইসব অ্যম্ফিথিয়েটারকে আমরা
মুক্তমঞ্চ বলি। আধুনিক ব্যবহারে অ্যম্ফিথিয়েটার শব্দটি কখনও কখনও একটি থিয়েটার বা কনসার্ট
হলের জন্য ব্যবহৃত হয় যার আসনগুলি কেন্দ্রীয় এলাকাকে ঘিরে থাকে।
মুক্তমঞ্চ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য সংগঠন 'থিয়েটার কুবি'র সাবেক
সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচর্চা ও প্রগতিশীল সংস্কৃতির
জন্য মুক্তমঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মুক্তমঞ্চ থাকা উচিত। মুক্তমঞ্চে
'থিয়েটার কুবি'র যাত্রা সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান মুক্তমঞ্চের জায়গাটি পূর্বে ঝোপঝাড়ে
ভর্তি ছিল। ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ সে জায়গা পরিস্কার
করে 'থিয়েটার কুবি', 'বাঙালির স্বাধীনতা' নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এর ৬ মাস পর
মুক্তমঞ্চ নির্মিত হলে ২৬ সেপ্টেম্বর 'থিয়েটার কুবি' প্রথম মান্নান হীরা রচিত 'ইনডেমনিটি' নাটকটি মঞ্চস্হ
করে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাটক ছাড়াও মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্লাটফর্ম ব্যান্ড এই মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে।
যার প্রচেষ্টায় এ মুক্তমঞ্চ তিনি প্রত্নতত্ব
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন
প্রকল্পের জন্য গঠিত সাত সদস্যের কমিটির আহবায়ক ছিলেন।
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ
যেগুলো সাদা চোখে দেখা যায় না। আমরা ক্লাস, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিই কিন্তু
একটা বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান চর্চার জন্য ভালো লাইব্রেরি গুরুত্বপূর্ণ।
একাডেমিক-নন একাডেমিক কালচার ডেভেলপ করার জন্য অডিটোরিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি
শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিক নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান জড়ো হওয়ার জন্য
মুক্তমঞ্চ থাকতে হবে। জ্ঞান বা সংস্কৃতি চর্চার জন্য একটা প্লাটফর্ম এবং একটা আরামদায়ক
জায়গা লাগবে, যেখানে মানুষ বসে কথা বলতে পারে। মুক্তমঞ্চ হওয়ার পর সেখানে শিক্ষার্থীরা
আড্ডা দেয়, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে যার মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতি চর্চা হয়।