সাকিব আহম্মেদ বাপ্পি, মুন্সীগঞ্জ
রেডিমেড পোশাক পল্লী হিসেবে সুপরিচিত মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার দু'টি ইউনিয়ন রামপাল ও পঞ্চসার ইউনিয়ন এখানে রয়েছে ছোটবড় এক হাজারের বেশি পোশাক তৈরির কারখানা। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন পোশাক পল্লীর কারিগররা। এবারে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে এবার ঈদে ৫০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট তাদের পোশাক পল্লীর কারিগরদের।
পোষাক পল্লীর কারিগর ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার মুন্সীগঞ্জ সদরের রামপাল ইউনিয়নের সিপাহিপাড়া, দেউসার, শাঁখারীবাজার, দরগাবাড়ি, হাতিমারা,ও পঞ্চসার ইউনিয়নের, কালিখোলা, রতনপুর, রামেরগাঁও, নয়াগাঁও, ভট্টাচার্যের বাগ ও ডিঙ্গাভাঙা গ্রামের হাজারো বাড়িতে পোশাক তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে । এসব গ্রামের প্রতিটি কারখানায় সারা বছর পোশাক তৈরি হয়। তবে ঈদ এবং উৎসবে ব্যস্থতা বেড়ে যায়। চলে দ্বিগুণ বিকিকিনি। এসব ছোটছোট কারখানাকে ঘীরে রেডিমেড পোশাকের বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মুন্সীগঞ্জে। এবারের ঈদ ঘিরে প্রতি কারখানায় নানা ধরনের পোশাক তৈরি হচ্ছে। এসব পোশাক যাচ্ছে দেশের বড় বড় পাইকারি মার্কেটে। যেমন সদরঘাট, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান পাইকারি মার্কেট ও নারায়ণগঞ্জের পাইকারি মার্কেটসহ বড় বড় শপিংমলে।
রমজান শুরুর এক মাস আগে থেকেই পোশাক তৈরির ব্যস্থতা বেড়েছে বলে জানালেন দেউসার গ্রামের ফারুক মুন্সী মিনি গার্মেন্টসের কাটিং মাস্টার মানিক মিয়া। তিনি বলেন, এখানের ছোটবড় সব পোশাক কারখানায় চলছে ঈদের পোশাক তৈরির ধুম। এই ব্যস্ততা থাকবে ২৫ রমজান পর্যন্ত। ১৫ হাজার টাকা বেতন পাই উল্লেখ করে রিফাত হোসেন বলেন, ব্যস্ততা বাড়ায় ১২ ঘণ্টা কাজ করি। ওভারটাইমের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক দেওয়া হয় মালিক পক্ষ থেকে। তবে বেতনটা আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো।
এখানে সব ধরনের পোশাক তৈরি হয় জানিয়ে একই কারখানার কারিগর নয়ন বলেন , 'সুতি, ফেন্সি ক্রপ টপস, স্কার্ট, এমব্রয়ডারি ও কারচুপিসহ সব ধরনের লেডিস পোশাক তৈরি হয়। নারায়ণগঞ্জ সহ ঢাকার সব পাইকারি মার্কেটে যায় আমাদের পোশাক। আবার নিশেট, বিভাগীয় পাইকারি মার্কেটেও যায়। এবার আমরা হাজার বিশ পোশাক তৈরি করছি। আশা করছি, সব বিক্রি হয়ে যাবে।
আলীফ রেডিমেড কারখানার কারিগর রমজান বলেন, তৈরি পোশাকের জন্য এই পরি ঐতিহ্যবাহী। এখানের কারখানাগুলোতে ফ্রক, পহেদাগ সব ধরনের পোশাক তৈরি হয়। মারার ইসলামপুর, সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জের বড় মার্কেটে যায় এসব পোশাক। কোটি টাকার বেচাকেনার টার্গেট আছে আমাদের।
সরেজমিন কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার শ্রমিকদের দম ফেলার সুযোগ নেই বল্লেই চলে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, কামিজ, টপস, গাউন, প্রিন্টের কামিজ, সালোয়ার, এমভ্রয়ডারি ও কারচুপির কাজ করছেন তারা। আবার কোন কারখানায় মাতারুকাজের পোশাক তৈরি করছেন। আবার কেউ কেউ কাপড় কাটা, লেলাই, ডিজাইন, আয়রন এবং প্যাকেটিংয়ের কাজ করছেন।
২ যুগের বেশী সময় ধরে রেডিমেড পোশাক তৈরি করছেন চাম্পাতলার একজন সফল ব্যাবসায়ী নূর হোসেন। কারখানার মালিক নূর হোসেন। তিনি বলেন, ২ যুগের বেশী সময় এই রেডীমেড কাপড়ের ব্যাবসা করে আসছি। খুব কম দামে আমাদের পণ্য গুলো বিক্রি হয় বলে সারাদেশে প্রচুর চাহিদা আছে। আমার কারখানায় ১০টি মেশিন আছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ করেন শ্রমিকরা। আমাদের পণ্যের কোয়ালিটি অনেক ভালো। ফলে চাহিদা বেশি। সে কারণে ক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে পণ্যগুলো কিনে নিয়ে যান।
এবারের ঈদে কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট আছে বলে উল্লেখ করে মোঃ রুবেল বলেন, আমরা সব লেডিস আইটেম তৈরি করি। এবারের ঈদে
কোটি টাকার পোশাক তৈরি করেছি। এর মধ্যে ৭০ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। ২০ রোজার মধ্যে বাকিগুলো বিক্রি হয়ে যাবে।
রেডিমেড পোশাক কারখানায় ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, রমজানে ঈদে এখানকার ছোটবড় এক হাজারের বেশি কারখানায় ৫০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট রয়েছে। প্রত্যেক কারখানায় ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকার বেশি অর্ডার আছে। সারা বছর এসব কারখানায় পোশাক তৈরি হয়। সবমিলে বছরে হাজার কোটি টাকার পোশাক তৈরি ও বিক্রি হশ এখানে।
দিন দিন রেডিমেড পোশাক পল্লীর পরিসর বাড়ছে উল্লেখ করে মো: আব্দুল্লাহ বলেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে একসময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানি করা যাবে। এ জন্য ছোট কারখানাগুলোকে বড় করা জরুরি। তবে পাইকারি মোকামগুলো ঢাকা - চট্টগ্রাম -নারায়ণগঞ্জ হওয়ায় পণ্যগুলো পরিবহনে অসুবিধা হয়। নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।