সততা আর ভদ্রতার মুখশের আড়ালে থাকা একটি নাম কবির বিন আনোয়ার। ক্ষমতার আর সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি পিতার পরিচয় ব্যবহার করে হাতিয়ে নিয়েছিল মন্ত্রীপরিষদ সচিবের পদও। যদিও সেই পদের স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র ১৯ দিন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুগ্মসচিব হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাবস্থায় তার ক্ষমতা প্রকট হতে থাকে। ওই বছরের ৭ এপ্রিল অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে ওইদিনই তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক করে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৬ বছরেরও বেশি সময় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
ওই বছরের ২২ মার্চ অতিরিক্ত সচিব থাকাবস্থায়ই কবির বিন আনোয়ারকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) করা হয়। এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই দাপটেই তিনি ড্যামকেয়ার অবস্থায় ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রীকেও তিনি তোয়াক্কা করতেন না। একা যা সিদ্ধান্ত নিতেন তাই বাস্তবায়ন হতো এখানে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচাল থাকাকালীন অবস্থায় দুর্নীতির বড়পুত্র কবির বিন আনোয়ার নিজের পিত আনোয়ার হোসেন রতুকে সম্পাদক এবং তার অবৈধ ব্যবসার পার্টনার হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফাকে প্রকাশক করে নাম সর্বস্ব একটি অনলাইন ও পরবর্তীতে একই নামে দৈনিক পত্রিকা ( সাহস২৪.কম ও দৈনিক সাহস) খুলে নিউ এলিফ্যান্ট রোডের ১০৮ নং ভবনে খুলে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা কেন্দ্র। নেশা-নারী-ঘুষগ্রহণ থেকে এমন কোন অপরাধ নেই যা এই ভবনের ছাদে হয়নি। প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন নামহীন আইটি কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক শ’কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়ার পর কবির বিন আনোয়ারকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরবর্তীতে আইন অমান্য করে সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি আর ক্ষমতার লোভ তাকে আরো আগ্রাসী করে তুলে। নিয়ম ভেঙে নিজের পছন্দের লোক ও আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে গড়ে তুলে পানি সিন্ডেকেট। কোন টেন্ডার কে পাবে তাও পরিচালিত এই নাম সর্বস্ব পত্রিকারটির অফিসে বসেই।
অর্থ-ক্ষমতা আর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছত্রছায়ায় থেকে কবির বিন আনোয়ার এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠে যে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রীকেও তিনি তোয়াক্কা করতেন না। একা যা সিদ্ধান্ত নিতেন তাই বাস্তবায়ন হতো এখানে। তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে এই পত্রিকার সাংবাদিকে ব্যবহার করতে তিনি। তার অবৈধ ব্যবসার পার্টনার হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফাকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাতেন মেডিকেলের টেন্ডার। এই সিন্ডেকেট এতটাই ভয়াবহ ছিল যে অন্য কোন প্রকাশনী সংস্থা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে পারতো না। ফলে দেশের সবগুলো মেডিকেল কলেজে নিন্মমানের কাগজ দিয়ে প্রিন্ট করা বই সাপ্লাই দিত। যা অনেক সময়ে পাঠ উপযোগী ছিল না। কোন মেডিকেল কলেজের প্রধানরা এ বিষয়ে কথা বললে তাদের বিরুদ্ধে নিজের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে মুখ বন্ধ করে দিত।
কবির বিন আনোয়ার
এবং গোলাম মোস্তফার অমানবিক আচরণে এবং অন্যায় আবদার পূরণের জন্য দৈনিক সাহস এ কর্মরত
সাংবাদিকরা সবসময় অতিষ্ট ছিল। সারা মাস কাজ করলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হত।
এ নিয়ে দৈনিক সাহস কর্মরত সংবাদকর্মীরা প্রতিবাদ করলে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে পবিত্র
রমজান চলাকালে কোন প্রকার ঘোষণা না দিয়ে এবং বকেয়া বেতন-বোনাস না দিয়েই পত্রিকা বন্ধ
করে দেন। পরবর্তীতে নিজেদের দুর্নীতির সহযোগীদের নিয়ে এই পত্রিকা পরিচালনা করেন। এর আগে করোনাকালীন সময়ও দুই বছর বেতন-ভাতা দেই নি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকদের।
দৈনিক সাহস চাকুরিচ্যুত এক সাংবাদিক জানান, রমজানে সবারই আশা থাকে পরিবার নিয়ে উৎসব করার, কিন্তু কবির বিন আনোয়ার কোন প্রকার ঘোষণা না দিয়ে বেতন-বোনাস ছাড়াই সবাইকে চাকুরিচ্যুত করেছে। সেদিনের সেই ক্ষমতা আর দম্ভ আজ কোথায়।
দৈনিক সাহস তৎকালীন নির্বাহী সম্পাদক জানান, কবির বিন আনোয়ার এতটাই অমানবিক ছিলেন যে করোনা মহামারির সময়ে পত্রিকার স্টাফদের কোন খোঁজখবর নেয়নি। এই দুই বছর স্টাফদের কোন প্রকার বেতন-বোনাস দেয়নি। এসময় আমার নিজস্ব তহবিল থেকে স্টাফদের বেতন ভাতা প্রদান করেছি, কবির বিন আনোয়ার সেই টাকাও পরিশোধ করেনি। শুধু তাই নয় নিজের টাকা ব্যয় করে অফিস ইন্টেরিয়র করিয়েছি সেই টাকাও পরিশোধ করে নি।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য কবির বিন আনোয়ারের টেলিটক এবং গ্রামীন ফোন এর দুটি নম্বরে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।