বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আদেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন না করায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি), পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে (ডেপুটি ডিরেক্টরকে) তলব করেছেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আমাতুল করিম। আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরে মনজিল মোরসেদ জানান, পরিবেশ দূষণ রোধে ঢাকাসহ ৫ জেলার সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদসহ ৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে সহযোগিতা পাচ্ছে না। এটি জানানোর পর হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি), পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে (ডেপুটি ডিরেক্টরকে) তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩১ মে তাদের হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
৯ দফা নির্দেশনায় বলা হয়- ১. ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহন করতে হবে।
২. যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব জায়গার কন্ট্রাক্টররা তা ঢেকে রাখবে।
৩. ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনো পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণকাজ এবং কার্পেটিং যেসব কাজ চলছে, যেসব কাজ যেন আইনকানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা হয় সেটি নিশ্চিত করার নির্দেশ।
৫. যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে বলা হয়েছে।
৬. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরান হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ।
৭. যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনো বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ।
৮. পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধের নির্দেশ।
৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং তা মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশ।
এই ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। গত ৩১ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকার বায়ুদূষণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই আদেশ অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
পরবর্তীতে আদালত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় থাকা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে বুধবার শুনানির জন্য ধার্য ছিল।