আজঃ শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম

নীরব ‘ঘাতক’ তামাক, মুক্তিতে প্রয়োজন কার্যকর আইন

প্রকাশিত:রবিবার ২৯ মে ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ২৯ মে ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

ধূমপান ও তামাক সেবনের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি বছরে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর ১২ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করে আরও কয়েক লাখ মানুষ

হায়দার আলী (২৭) গাজীপুরের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঠাকুরগাঁওয়ে তাদের প্রতিবেশী তানিয়ার (২২) সঙ্গে তিন মাস আগে বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর তানিয়াকে গাজীপুরে নিয়ে আসেন হায়দার। একটি বাসা নিয়ে সেখানে তারা বসবাস শুরু করেন। সংসারজীবন প্রথমে ভালোই চলছিল। হায়দার প্রথম দিকে ধূমপান করতেন, সেটা তেমন পছন্দ করতেন না তানিয়া। তবু মানিয়ে চলছিলেন। এর মধ্যে একদিন তানিয়া দেখতে পান, তার স্বামী ঘরের ভেতরে কিছু একটা লুকোছাপা করে সেবন করছেন। তানিয়া জানতে চান, সেটা কী। হায়দার প্রথমে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা ঘোরাতে চাইলেও পরে স্বীকার করে নেন, তার হাতে গাঁজা। তানিয়া এটা ছুড়ে ফেলে দিতে চাইলে হায়দার তাকে বাধা দেন। পরদিন একইভাবে হায়দার ঘরে গাঁজা সেবনে মত্ত হন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হায়দার তার স্ত্রীকে কিল-ঘুষি মেরে বাসা থেকে বের করে দেন। তানিয়া নিরূপায় হয়ে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। ঘটনার তিনদিন পর হায়দার ঠাকুরগাঁওয়ে যান তানিয়াকে আনতে। তখন তানিয়ার পরিবার সায় না দিলে হায়দার তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন। তানিয়ার বাবা হায়দারের পরিবারকে বিষয়টি ফোনে জানান। হায়দারের বাবা এলাকার চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন। তখন দুপক্ষ সালিশে বসে। সালিশে হায়দারের গাঁজা সেবনের বিষয়টি জানানো হয়। এ নিয়ে দুপক্ষেরই তুমুল যুক্তি-তর্ক হলেও সিদ্ধান্ত হয় বিচ্ছেদের।

বর্তমানে যে আইন রয়েছে তা যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। আমরা ২০৪০ সালের আগে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে চাই। তাহলে বর্তমানে যে আইন রয়েছে তাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আইন শক্তিশালী করলে আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবো

তামাকজনিত রোগে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মৃত্যু: মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান জিরো টলারেন্স। আর মাদকের প্রথম ধাপ হিসেবে ধূমপানকেই দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যান। পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও কয়েক লাখ মানুষ। এখনো দেশের ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন। ধূমপান না করেও প্রায় তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

তামাকবিরোধী সংগঠকরা বলছেন, গণপরিবহন, পার্ক, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে হরহামেশাই লোকজনকে ধূমপান করতে দেখা যায়। অথচ জনসমাগমস্থলে ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল একটি আইন। আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ধরা হয়েছিল ৫০ টাকা। কিন্তু পরে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী এনে জনসমাগমস্থলে ধূমপানের শাস্তির অর্থ ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩শ টাকা করা হয়। কিন্তু আইন না জানা ও ভাঙায় অভ্যস্ত লোকজনের অবস্থা তাতে বদলায়নি এতটুকু।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ২০১৬ সালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকারস সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। এই লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করার ঘোষণাও দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তামাকবিরোধী সংগঠন থেকে আইন সংশোধন করে শক্তিশালীকরণের দাবি ওঠে। শতভাগ ধূমপান বন্ধ নিশ্চিতে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন থেকে বেশকিছু প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এসব প্রস্তাবের বিষয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল চূড়ান্ত সভা করে। সেখানে ছয়টি প্রস্তাবনার প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়। সেসব প্রস্তাবনার খসড়া এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে এটা পাস হলে পাঠানো হবে সংসদে। সেখানে পাস হলেই তা শক্তিশালী আইন হিসেবে রূপান্তরিত হবে। এর মধ্য দিয়েই ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শতভাগ ধূমপান বন্ধ নিশ্চিতে যে ছয়টি প্রস্তাবনার খসড়া মন্ত্রণালয়ে পেশ হয়েছে, সেগুলো হলো- উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা, তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার বাড়ানো, সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) নামে সিগারেট কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা এবং বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা।

১. উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) ধূমপান নিষিদ্ধ করা

খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অধূমপায়ীদের রক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা ডেজিগনেটেড স্মোকিং জোন বিলুপ্ত করতে হবে। চতুর্দিকে দেয়াল আবদ্ধ নয় এমন রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের হোটেল, পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র এবং একাধিক কামরা বিশিষ্ট যান্ত্রিক পরিবহন ও সব অযান্ত্রিক গণপরিবহনে ধূমপান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ধূমপানমুক্ত ভবন বলতে সেই ভবনের বারান্দাসহ সব আচ্ছাদিত স্থানকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে আইনে। শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন সহায়ক উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এটি একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের মতো যে কোনো ভবিষ্যৎ মহামারিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা গেলে কর্মীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ হ্রাস পায়, শ্বাসতন্ত্র ভালো থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যায়। অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানমুক্ত পরিবেশে ধূমপায়ী কর্মীর সিগারেট সেবনের মাত্রা দিনে গড়ে দুই থেকে চারটি পর্যন্ত কমেছে।

ব্রাজিলের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশটিতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন বাস্তবায়ন করা গেলে ১৬ বছরে ১৫ হাজার নবজাতক শিশুর মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হতো। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে জনসাধারণকে রক্ষার্থে প্যারাগুয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সব আচ্ছাদিত পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান শতভাগ নিষিদ্ধ করে। বর্তমানে থাইল্যান্ড, নেপাল, পাকিস্তান, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৬৭টি দেশ পূর্ণাঙ্গ ধূমপানমুক্ত আইন প্রণয়ন (ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বাতিলসহ) ও বাস্তবায়ন করছে।

২. বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্য বিপণনে কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী কৌশল মোকাবিলার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর ধারা ১৩ ও এ সংক্রান্ত গাইডলাইন অনুযায়ী বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা এবং পৃষ্ঠপোষকতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যে কোনো উপায়ে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হিসেবে গণ্য করা হবে মর্মে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক গবেষণায় ৭৭টি দেশের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলে দৈনিক ধূমপানের প্রবণতা প্রায় ৭ শতাংশ কমে। তামাকপণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ- ইউরোপের এমন ছয়টি দেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর বয়সীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা হ্রাসে তামাকপণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার কার্যকর প্রভাব রয়েছে। বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধের পর আইসল্যান্ড ও কানাডায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপানের হার ১০ শতাংশ কমেছে। নেপাল, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়েসহ বিশ্বের ৫০টি দেশ এরই মধ্যে পয়েন্ট অব সেল বা বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে।

৩. সিএসআরের নামে সিগারেট কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা

খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫-এ সামগ্রিকভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হলেও তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। ফলে তামাক কোম্পানিগুলো সিএসআর কার্যক্রমের অজুহাতে নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। কাজেই তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ করতে এফসিটিসির আলোকে বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধন করে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি করা গেলে তামাক কোম্পানিগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেদের প্রচার এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অন গ্লোবাল টোব্যাকো ইপিডেমিক ২০২১ অনুযায়ী নেপাল, ইরান, উরুগুয়ে, নাইজেরিয়া, স্পেন, রাশিয়াসহ বিশ্বের ৬২টি দেশ তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

৪. বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধ করা

তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধন করে বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা এবং প্যাকেট ছাড়া বা খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি করা গেলে জনগণের মধ্যে বিশেষ করে কিশোর, তরুণ, নারী ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও ব্যবহার কমে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ১১৮টি দেশ সিঙ্গেল সিগারেট স্টিক বা ছোট প্যাকেট বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। পাশের দেশ ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্য ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিড়ি-সিগারেটে খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করার উদ্যোগটি প্রক্রিয়াধীন।

৫. ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস বাজারজাত বন্ধ করা

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট অর্থাৎ ই-সিগারেটসহ সব ভ্যাপিং এবং হিটেড তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এই পদক্ষেপ নেওয়া গেলে তরুণ ও কিশোর বয়সীদের ধূমপানে আসক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সহায়তা করবে। পাশের দেশ ভারত এরই মধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৩২টি দেশে এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ।

৬. তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আওতা বাড়ানো

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করতে হবে এবং সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার আকার/আয়তন এবং এগুলোর মধ্যে ন্যূনতম কী পরিমাণ তামাকজাত দ্রব্য থাকবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। বড় আকারের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সহজেই তরুণ ও ব্যবহারকারীদের তামাকের ব্যবহার ছাড়তে উৎসাহিত করে।

উরুগুয়ে ও অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, সচিত্র সতর্কবার্তার আওতা বাড়ানো হলে ব্যবহারকারী স্বাস্থ্যক্ষতির বিষয়ে ভাবতে বাধ্য হয় এবং তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হয়। মেক্সিকোতে এক গবেষণায় দেখা যায়, বৃহদাকার সচিত্র সতর্কবার্তা অল্প বয়সীদের (১২-১৪ বছর) মধ্যে সিগারেটের প্রতি আকর্ষণ কমায়। তামাক কোম্পানি নির্ধারিত/নির্দিষ্ট আকারের মোড়কে তামাকপণ্য বাজারজাতকরণে বাধ্য হলে মোড়কে মুদ্রিত সচিত্র সতর্কবার্তার কার্যকারিতা বাড়ে। বিশ্বের ৮৩টি দেশ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০ শতাংশের অধিক জায়গাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করছে, যার মধ্যে নেপাল (৯০%), ভারত (৮৫%), থাইল্যান্ড (৮৫%), মালদ্বীপ (৯০%), শ্রীলঙ্কা (৮০%), অস্ট্রেলিয়া (৮২.৫%), উরুগুয়ে (৮০%) ও তুরস্ক (৯২.৫%) অন্যতম। অন্যদিকে বিশ্বের ১৮টি দেশে প্লেইন প্যাকেজিং প্রথা বাস্তবায়ন করছে যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া (২০১২), ফ্রান্স (২০১৭), যুক্তরাজ্য (২০১৭), নরওয়ে (২০১৮), আয়ারল্যান্ড (২০১৮), নিউজিল্যান্ড (২০১৮), হাঙ্গেরি (২০১৯), সৌদি আরব (২০১৯), তুরস্ক (২০১৯), থাইল্যান্ড (২০১৯), উরুগুয়ে (২০১৯), স্লোভেনিয়া (২০২০), ইসরায়েল (২০২০), সিঙ্গাপুর (২০২০), কানাডা (২০১৯), বেলজিয়াম (২০২১), নেদারল্যান্ডস (২০২১) এবং ডেনমার্ক (২০২১)।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত: ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান প্রফেসর সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের দেশের জন্য জরুরি প্রয়োজন। ধূমপান ও তামাক সেবনের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি বছরে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর ১২ লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করে আরও কয়েক লাখ মানুষ। এছাড়া তামাকের কারণে অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে চাইলে তামাককে না বলতে হবে। দূরে থাকতে হবে তামাকের ব্যবহার থেকেও। শিশুদের ফুসফুস পরিণত হতে দেরি হয় বিধায় সিগারেটের ধোঁয়া তাদের জন্য বড় হুমকির। তাদের ফুসফুস ছোট্ট হলেও পরিণত ফুসফুসের চেয়ে অনেক বেশিবার বাতাস টেনে নেয়। তাই বাতাসের সঙ্গে ক্ষতিকর ধোঁয়াটাও শিশুর ফুসফুস ভরে ফেলে দ্রুত। পরোক্ষভাবে ধূমপানে শিশুর ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘদিন কাশি, অ্যাজমা, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি ঝরারও কারণ। একই সঙ্গে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। শিশুর স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটায় পরোক্ষ ধূমপান।

সংগঠকরা যা বলছেন: তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের  বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের আগে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় করছেন। এজন্য ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী একটা নির্দেশনা দেন তামাক নিয়ে আমাদের বিদ্যমান আইন আরও শক্তিশালী করতে। সেজন্য আমি মনে করি আমাদের বর্তমানে যে আইন রয়েছে তা যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। আমরা ২০৪০ সালের আগে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে চাই। তাহলে বর্তমানে যে আইন রয়েছে তাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আইন শক্তিশালী করলে আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবো।

ই-সিগারেটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে এবিএম জুবায়ের বলেন, পাশের দেশ ভারত এর ব্যবহার বাতিল করে দিয়েছে। আমাদেরও আইন সংশোধন করে এটির ব্যবহার বাতিল করা উচিত। বিক্রয় কেন্দ্রগুলাতে সিগারেটের প্যাকেট সাজিয়ে রেখে যুবকদের আকৃষ্ট করার বিষয়টি আইন করে বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে সিঙ্গেল স্টিক বিক্রি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এক প্যাকেটের নিচে সিগারেট বিক্রি হয় না, যেন সহজে কিশোর-তরুণরা কিনতে না পারেন। আমরা এ ধরনের ছয়টা দাবি তুলে ধরেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা আমলে নিয়ে খসড়া করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ বছরই আশা করছি এটা সংশোধন হবে। এটা হলেই আমরা আশা করছি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবো।

যা বলছেন কর্মকর্তারা: এ বিষয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার  বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৫ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি সংশোধন করে। এরপর বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন থেকে দাবি ওঠে আইনটি সংশোধন করার। আইন সংশোধন করার জন্য ছয়টি প্রস্তাবনা দিয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের দাবি অনুযায়ী আমরা হোমওয়ার্ক করি। আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পক্ষ থেকেও চূড়ান্ত মিটিং করে সচিব মহোদয়কে দেখিয়ে ছয়টি প্রস্তাবনা প্রাথমিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত খসড়াটা পেশ করেছি। এটা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে। অনুমোদন হলে আমরা এটা ওয়েবসাইটে দেবো। এরপর আমরা পাঠাবো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এরপর মন্ত্রিসভা থেকে সংসদে যাবে। আইনটি সংশোধনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রত্যেকে যদি যার যার জায়গা থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন, তাহলে অচিরেই আমাদের দেশ তামাকমুক্ত হবে।

নিউজ ট্যাগ: তামাক

আরও খবর



উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করলেন আজকের দর্পণের সম্পাদক

প্রকাশিত:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
মশিউর রহমান রাহাত, পিরোজপুর

Image

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন আজকের দর্পণের সম্পাদক ও প্রকাশক এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী (শাহীন)। সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে নাজিরপুর উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামানের হাতে মনোনয়ন পত্র তুলে দেন।

এর আগে হাজার হাজার জনগনের উপস্থিতিতে তিনি দোয়া কামনা করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা।

এস এম নুরেআলম পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আজকের দর্পণের প্রতিষ্ঠাতা শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই। তিনি দির্ঘদিন ধরে এলাকায় জনগনের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে এলাকায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আছেন তিনি।

এদিকে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দফা কেন্দ্র করে পিরোজপুরের তিনটি উপজেলায় আনন্দমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ জেলার পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী উপজেলায় মনোনয়ন পত্র জমা দেন প্রার্থীরা। পিরোজপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এস এম বায়েজিদ হোসেন ও সাংবাদিক শফিউল হক মিঠু মনোনয়ন পত্র জমা দেন।

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন মনোনয়ন পত্র জমা দেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান কাছে।

এছাড়া নাজিরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী, মোহাম্মাদ আলী শিকদার, দিপঙ্কর নাগ, দীপ্তিষ হালদার মনোনয়ন পত্র দেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন মনোনয়ন পত্র উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামানের কাছে জমা দেন।

ইন্দুরকানী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম মতিউর রহমান, মো. জিয়াউল আহসান গাজী ও ফায়জুল কবির তালুকদার পত্র জমা দেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন মনোনয়ন পত্র জমা দেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলামের কাছে।


আরও খবর



হাইব্রিডে বিপ্লব এনেছে হীরা ধান

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
মোঃ মোছাদ্দেক হাওলাদার, বরিশাল প্রতিনিধি

Image

চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের মাঝে হাইব্রিডে বিপ্লব এনেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে মোটা জাতের হীরা-৬ ধান। অন্যান্য জাতের ধানের তুলনায় চাষীরা রোগ ও পোকার আক্রমন বিহীন হীরা-৬ জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন।

সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী মিশন পাড়ার অনুষ্ঠিত হীরা ধানের মেগা মাঠ দিবসের আলোচনা সভায় স্থানীয় কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।

সুপ্রীম সীড কোম্পানীর আয়োজনে হীরা ধানের মেগা মাঠ দিবসে স্থানীয় কৃষক আব্দুল আজিজ মৃধার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কোম্পানীর জোনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মশিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনিতা মজুমদার। কোম্পানীর রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ আসাদুল আলমের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় পরিবেশক দুলাল রায়, কৃষক শওকত আকন প্রমুখ।

কৃষক শওকত আকন জানিয়েছেন, তিনি তার ৬০ শতক জমিতে হীরা-৬ জাতের বোরো ধান চাষ করে এবার বাম্পার ফলন পেয়েছেন। আগামীতেও তিনি এ জাতের ধান চাষ করবেন।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে যেসব হাইব্রিড ধান চাষ হয় হীরা-৬ ধান তার মধ্যে অন্যতম। উচ্চ ফলনশীল হওয়ার কারণে এই ধান তাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

মাঠ দিবসের আলোচনার শুরুতে অতিথিরা কৃষকদের সাথে নিয়ে হীরা-৬ ধানসহ অন্যান্য জাতের চাষ করা কয়েকটি বোরো ক্ষেত পরিদর্শন করে ধানের চারা সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে গণনা করে হীরা-৬ ধানের প্রতিটি শীষে গড়ে ৩০৬ থেকে ৩১০টি ধান পাওয়া গেছে। অন্যান্য জাতের ধানে সর্বোচ্চ ২০০টি ধান পাওয়া যায়।

এরপর অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিবিদ মশিউর রহমান বলেন, হীরা-৬ বাংলাদেশের সবচেয়ে মোটা হাইব্রিড ধান। এই জাতের ধানে অন্য যেকোন হাইব্রিড ধানের তুলনায় বেশি ফলন হয়। রোগ ও পোকার আক্রমন বিহীন ১৪৫ দিনের জীবন কাল হীরা-৬ ধানের জাতে প্রতি শতকে এক মনের অধিক ধান পাচ্ছেন কৃষক। পাশাপাশি এ ধানের খোসা অত্যন্ত পাতলা হওয়ায় প্রতি ১০০ মন ধানে ৭৩ মনের অধিক চাল পাওয়া যায়। এছাড়াও এ ধানের চাউলের ভাত অন্যান্য জাতের মতো আঠালো হয়না।

সভায় উপস্থিত প্রায় দুই শতাধিক কৃষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বোরো চাষের শুরুতে আগে ভাবতে হবে কোন ধানের বীজ বপন করে ভাল ফলন পাওয়া যাবে। কারণ এটা শুধু বীজ নয়; একটি পরিবারের স্বপ্ন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে যে কয়টি কোম্পানি হাইব্রিড ধানের আমদানির অনুমতি পেয়েছে তাদের মধ্যে একটি সুপ্রীম সিড। কোম্পানিটি বাংলাদেশে প্রথম চীন থেকে বাংলাদেশে হীরা ধানের বীজ এনে বাজারজাত করেন। এরপর তারা নিজস্ব উৎপাদনে যায়। বর্তমানে ৯০ শতাংশ বীজ নিজেরাই উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, হাইব্রিড ধান সাধারণত ৭০-৭৫ শতাংশ পাকলেই কাটতে হয়। কারণ ধান বেশি পাকার ফলে ক্ষেতেই ঝড়ে যায়। তখন হাইব্রিড ধানের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা হয়। যে কারণে কৃষকদের সচেতনতার জন্যই মূলত হীরা-৬ ধানের মেগা মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়েছে।


আরও খবর



দ্বিতীয় টেস্টে নেই হাথুরুসিংহে

প্রকাশিত:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

Image

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে থাকছেন না বাংলাদেশ দলের হেড কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে।

আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্যক্তিগত কারণে চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে থাকতে পারছেন না হাথুরুসিংহে। এই টেস্টে তার পরিবর্তে সহকারী কোচ নিক পোথাস দায়িত্ব পালন করবেন।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারলেও ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতে বাংলাদেশ। এরপর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হারে টাইগাররা। আগামী ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে মাঠে গড়াবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট।


আরও খবর
আচমকা অবসরে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক

বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪




মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘অপহরণের’ ভিডিও পোস্ট, তোপের মুখে ট্রাম্প

প্রকাশিত:রবিবার ৩১ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ৩১ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অপহরণের ভিডিও পোস্ট করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আসন্ন নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হচ্ছেন ডেমোক্রেট জো বাইডেন এবং রিপাবলিকান ট্রাম্প। একটি পিকআপ ট্রাকের পেছনে জো বাইডেন হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে শুয়ে আছেন, স্থানীয় সময় শুক্রবার ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

প্রায় সাত সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা গেছে, পিকআপের পেছনে বর্তমান প্রেসিডেন্টের একটি ছবি প্রিন্ট করে লাগানো হয়েছে।  অর্থাৎ তাকে অপহরণ করা হয়েছে- এমনটাই বোঝানো হয়েছে ছবিতে। যদিও ছবিটি পুরোপুরি ড্ক্টরেট (সম্পাদিত)। পতাকা ও ডেকাল সম্বলিত দুটি ট্রাক ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে যেখানে দ্বিতীয় ট্রাকের পেছনে ছিল বাইডেনের ছবি।

এ ঘটনায় ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা ট্রাম্পকে দানব বলেও আখ্যা দিয়েছেন।  ভিডিওটি শেয়ার করে ৭৭ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যাপশন লিখেছেন, ৩/২৮/২৪, লং আইল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক।

ভিডিও পোস্ট করা মাত্রই বাইডেনের সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। বাইডেনের প্রচারণার যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক মাইকেল টেইলর বলেন, শুক্রবার রাতে ট্রাম্পের পোস্ট করা ছবিটি তার বিরোধীদের শারীরিকভাবে ক্ষতির করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ট্রাম্প প্রতিনিয়তই রাজনৈতিক সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছেন। এখন সময় এসেছে যেন মানুষ তাকে বয়কট করার।

এদিকে, ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং এক বিবৃতিতে বলেন, ছবিটি একটি পিকআপ ট্রাকের পেছনে ছিল, পিকআপটি হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। ডেমোক্র্যাটরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শুধু ঘৃণ্য সহিংসতার ডাকই দেয়নি, তারা আসলে তার বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে ভিডিওতে বাইডেনের ছবির উপস্থিতি নিছকই কাকতালীয় ঘটনা তা মনে হচ্ছে না। কারণ ভিডিওর শেষের দিকে বাইডেনের সম্পাদিত ছবিটি জুম করে দেখানো হয়েছে।

এদিকে ছবিটি নিয়ে অনেক টুইটার ব্যবহারকারী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হাভার্ডের আইন বিভাগের অধ্যাপক লরেন্স ট্রাইব এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, দানব এটা পোস্ট করেছে। ট্রাকের পেছনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হাত-পা বাঁধা একটি ছবি। তিনি (ট্রাম্প) প্রেসিডেন্টকে হুমকি দিচ্ছেন। এটি একটি অপরাধ। অন্য কেউ এটা করলে, তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। এখন কী করা হবে?

ওবামা প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমান সিএনএন জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক জুলিয়েট কায়েম লিখেছেন, ট্রাম্প সবকিছু ফেলে সহিংসতাকে কৌশল হিসেবে নিয়েছেন।


আরও খবর



শিক্ষক নিয়োগে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পদ ৯৬৭৩৬

প্রকাশিত:রবিবার ৩১ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ৩১ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এতে ৯৬ হাজার ৭৩৬টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ হবে। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজে ৪৩ হাজার ২৮৬ এবং মাদরাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৫৩ হাজার ৪৫০টি পদ রয়েছে।

রোববার (৩১ মার্চ) বিকেলে এনটিআরসিএর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্থাটি।

এতে বলা হয়েছে, আগামী ১৭ এপ্রিল দুপুর ১২টায় এনটিআরসিএ ও টেলিটকের ওয়েবসাইটে গণবিজ্ঞপ্তির শূন্যপদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওইদিন থেকেই প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনকারীর যোগ্যতা গণবিজ্ঞপ্তির শূন্যপদে আবেদন করতে সংশ্লিষ্ট বিষয়, পদ ও প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী এনটিআরসিএর নিবন্ধন সনদধারী হতে হবে। ৯ মে রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন এবং ১০ মে রাত ১২টা পর্যন্ত ফি পরিশোধ করা যাবে। আবেদনের জন্য সর্বস্তরের প্রার্থীকে এক হাজার টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত ফি পরিশোধ না করলে আবেদন বাতিল বলে বিবেচিত হবে।

আবেদনকারী প্রার্থীর বয়স ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে ৩৫ বছর বা তার চেয়ে কম হতে হবে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি তারিখে যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হয়েছে, তারা কোনোভাবেই আবেদন করার সুযোগ পাবেন না।

কোনো প্রার্থীর যদি স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়ের সনদ থাকে এবং তিনি যদি উভয় পর্যায়ের পদে আবেদন করেন। তাহলে প্রথমে তাকে কলেজ পর্যায়ে বিবেচনা করা হবে। কলেজ পর্যায়ে নির্বাচিত না হলে স্কুল পর্যায়ে বিবচেনা করা হবে। এমপিওভুক্ত প্রার্থীর এক পর্যায়ের (স্কুল বা কলেজ) একাধিক নিবন্ধন সনদ থাকলে ওই প্রার্থী একই পর্যায়ে আবেদন করতে পারবেন না।

সহকারী শিক্ষক (ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) পদে চাকরিপ্রত্যাশী আবেদনকারীকে অবশ্যই সেই ধর্মের অনুসারী হতে হবে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করলে তা বাতিল করা হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া, ফি পরিশোধসহ বিস্তারিত নিয়মাবলী গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির যেকোনো শর্ত এবং প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এনটিআরসিএ যেকোনো সময় সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন এবং স্থগিত করতে পারবে। একইসঙ্গে মামলা বা আইনগত অন্য কোনো জটিলতার কারণে অনলাইনে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কোনো পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হলে এনটিআরসিএ দায়ী থাকবে না বলেও গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিউজ ট্যাগ: এনটিআরসিএ

আরও খবর