আমিনুল ইসলাম মনি, নেত্রকোনা
: অনিয়ম করে নেত্রকোণা মোহনগঞ্জ উপজেলার গৃহহীনদের
জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ঘর উঠল সম্পদশালীর বাড়িতে, অনিয়ম লুকানোর জন্য ঘরের ডিজাইন বদল
করা হয়েছে ও দুর্যোগ সহনীয় ঘরের নেইমপ্লেট সরিয়ে কৌশলে ঐ স্হানে আয়না বসিয়ে দিয়ে গরিবের
ঘর নিয়ে আরাম আয়েশ করেই বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে সোহেল মিয়া নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
এ ঘটনা নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ
উপজেলায় । ওই উপকারভোগীর নাম মো. সোহেল মিয়া। তিনি উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগাঁও
গ্রামের মৃত. রতন মিয়ার ছেলে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন
কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর/কাবিখা)
কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘর
নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় দুই লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সাত ইউনিয়নে মোট ৩৬ জন গৃহহীনকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর
দেওয়া হয়। এরমধ্যে তেতুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগাও গ্রামের মো. সোহেল মিয়া কারসাজি করে নিজের
নামে একটি ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। যদিও তার চার একরের বেশি জমি রয়েছে।
আজকের দর্পণ নেত্রকোনা জেলা
প্রতিনিধির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সোহেল মিয়ার নানা অনিয়মের চিত্র।
সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসী
সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোহেল মিয়ার চার একরের বেশি জমি রয়েছে। তার বাড়িতে আগে থেকেই
একটি বিল্ডিং ছিল। প্রতারণা করে গৃহহীনের কোটায় ঘরটি বরাদ্দ নেয়। পরে ঘরের বরাদ্দকৃত ইট, টিনসহ
যাবতীয় মালামাল নিয়ে পুরনো ঘরটির সাথে মিশিয়ে ফেলেন। অনিয়ম লুকাতে ঘরের ডিজাইন পরিবর্তন
করেছেন সোহেল মিয়া। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে ২০ সালের জানুয়ারি মাসে ওই প্রকল্পের
ঘর বরাদ্দের তালিকা চুড়ান্ত করা হয়। ৩৬ জন উপকারভোগীর তালিকায় সোহেল মিয়ার নাম রয়েছে
১১ নম্বরে। আর নওয়াগাও গ্রামে একমাত্র উপকারভোগী হিসেবে তার নাম রয়েছে। এ গ্রামে আর
কেউ ঘর পাননি। এছাড়া দুইটি টিউবওয়েল ও একটি হাজার ফুটের সাব-মার্সেবল নিয়েছেন তিনি।
এরমধ্যে একটি ৯০ ফুটের ডবল টিউবওয়েল, হাজার
ফুটের আরও একটি টিউবওয়েল ও একটি হাজার ফুটের সাব-মার্সিবল পানির মটর ব্যবস্থা নিয়েছেন
সোহেল। এ নিয়ে গ্রামে নানা গুঞ্জন রয়েছে।
নওয়াগাও গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, চার একরের বেশি জমি রয়েছে সোহেলের। অনিয়ম করে গৃহহীনদের
ঘর নিজের নামে নিয়েছেন। যদিও আগে থেকেই তার একটি বিল্ডিং ছিল। প্রকল্পের ওই ঘরের বরাদ্দকৃত
ইট, সিমেন্ট ও অন্যান্য জিনিসপত্র তার আগের সাথে মিলিয়ে ভিন্ন নকশার বড় একটি ঘর বানিয়ে
ফেলা হয়েছে। এছাড়া প্রভাব কাটিয়ে সোহেল নিজের
নামে জনস্বাস্থ্যের দেয়া দুইটি টিউবওয়েল ও
একটি হাজার ফুটের সাব-মার্সেবল নিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে একটি ৯০ ফুটের ডবল টিউবওয়েল, হাজার ফুটের আরও একটি
টিউবওয়েল ও একটি হাজার ফুটের সাব-মার্সিবল পানির মটর ব্যবস্থা নিয়েছেন সোহেল।
উপকারভোগী মো. সোহলে মিয়ার
সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,
সরকারি ঘর ব্যক্তিগত ঘরের সাথে ডিজাইন বদল
করা অন্যায় জানলে আমি এটা করতাম না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প
বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাকিবুল হাসান বলেন, আমি এখানে আসার আগে এ তালিকা চুড়ান্ত
হয়েছে। ফলে আমার কিছু করার ছিল না। আর তার সম্পদ কি আছে আমার জানা নেই। আমরা বিষয়টি
খতিয়ে দেখছি। যদি এমনটি হয়ে থাকে তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহদে আকুঞ্জির সাথে সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি বারবার এড়িয়ে যান।