শ্রীলঙ্কার ঘাড়ে
ঝুলছে ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণের বোঝা। আর সেই বৈদিশক ঋণ যে এই মুহূর্তে তাদের
পক্ষে মেটানো সম্ভব নয় তা জানিয়ে দিল শ্রীলঙ্কা। নিজেদেরকে ঋণ খেলাপি বলে এই মুহূর্তে
ঘোষণা করেছে সেই দেশের সরকার। এই ঋণ কবে কীভাবে মেটানো সম্ভব সে ব্যাপারে কোনও সুনির্দিষ্ট
ধারণা শ্রীলঙ্কা সরকার দিতে পারেনি। বলতে গেলে এই ঘোষণা প্রমাণ করে দিল যে গোটা দেশটাই
এখন দেউলিয়া হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে দ্বীপরাষ্ট্রের পাশে ভারত
কীভাবে দাঁড়াবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কে সেটাও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঋণ খেলাপি হওয়ার
জন্য নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার শূন্য হয়ে যাওয়াকেই দায়ী করেছে শ্রীলঙ্কা। যার
জেরে তারা বিদেশ থেকে কোনও জিনিসস আমদানি করতে পারছে না। প্রতিনিয়তই শ্রীলঙ্কার আর্থিক
দুর্দশা চরমে উঠেছে। তেলের অভাবে অধিকাংশ স্থানে
সাধারণ যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। তেলের অভাবে দেশের এক স্থান থেকে অন্যস্থানেও
পণ্য সামগ্রী পাঠানো যাচ্ছে না। লোডশেডিং এখন শ্রীলঙ্কার রোজকার জীবনের সঙ্গী হয়েছে।
অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পর্যান্ত খাবার-দাবারও মজুত নেই বলে
জানা গিয়েছে। বহু স্থানে মানুষ আধপেটা খেয়েই দিন নির্বাহ করছে- এমন খবরও সূত্রে মিলেছে।
শ্রীলঙ্কা সরকারের
অর্থমন্ত্রক একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে যে সব বিদেশী রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন
ঋণ দিয়েছে, তারা এই মুহূর্তে এই অপ্রদেয় ঋমের জন্য যে কোনও মাত্রার সুদ নির্ধারণ করতে
পারেন অথবা তারা শ্রীলঙ্কার নিজস্ব মুদ্রায় ঋণের অর্থ ফেরত নিতে পারেন। এই বিবৃতিতে
আরও জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কা সরকার চেষ্টা করছে এমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে যে
অবস্থা তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলা করার। ঋণ খেলাপের বিষয়টিকে তারা লাস্ট রিসর্ট বা চূড়ান্ত
ব্যবস্থা বলে বিবেচনা করছে। এর কারণ যাতে দেশের অর্থনীতিতে আর কোনও অবনতিকর পরিস্থিতি
তৈরি না হয়।
বিবৃতিতে আরও
জানানো হয়েছে যে সম্প্রতি যারা শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছে তাদের কাছেও একটা গ্রহণযোগ্য
বার্তা রাখতে এই প্রয়াস। এর মধ্যে দিয়ে শ্রীলঙ্কা সরকার আশা রাখছে তাদের আর্থিক পরিস্থিতি
বুঝে ঋণ প্রদানকারীরা চিন্তাভাবনা করে একট সহজ এবং তাদের পক্ষে সুবিধাজনক কোনও রাস্তা
বের করবেন। দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলির আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই ইন্টারন্যাশনাল
মানিটারি ফান্ড একটি রেটিং চার্ট প্রকাশ করবে। তার আগে এই ঋণ খেলাপি হিসাবে নিজেদের
কে ঘোষণা করাটা দ্বীপরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আর্থিক মন্দার
জেরে শ্রীলঙ্কায় ২২ মিলিয়ন মানুষের দুর্দশা যেমন চরমে উঠেছে তেমনি সাধারণ মানুষ রাস্তা
নেমে এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। একাধিক স্থানে রোজ অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে। প্রেসিডেন্ট
প্যালেসেও ঢোকার চেষ্টা করেছে বিক্ষোভকারীরা। শ্রীলঙ্কার আর্থিক পরিস্থিতি যে ভালো
নয় তা গত বছরই সামনে এনেছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক রেটিং প্রদানকারী সংস্থা। এমনকী
শ্রীলঙ্কাকে আর ঋণ দেওয়া উচিত নয় বলেও তারা বারবার সওয়াল করেছিল।