জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও ১/১১-এর
কুশীলবরা তৎপর হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারকে
বিতর্কিত করতে একটা সংবাদ প্রকাশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাশাপাশি প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশও বাংলাদেশের বিষয়ে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে বলে মনে
করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (৮ এপ্রিল) ভারতের বাংলা ভাষাভাষীদের
মধ্যে জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার বিষয়টিকে তুলে ধরে এমনই এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
চলতি বছর ডিসেম্বর বা তার পরের মাসে বাংলাদেশের
সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ধারণা দিয়ে আনন্দবাজার বলছে, খুবই ঘটনাবহুল
হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। বাংলাদেশে সচরাচর রমজান মাসে সব রাজনৈতিক কর্মসূচি
বন্ধ থাকলেও এবার সরকারবিরোধী নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপর বিরোধীরা। থেমে নেই ক্ষমতাসীন
দলও।
বিষয়টির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আনন্দবাজার কথা
বলেছে আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতার সঙ্গে। ওই নেতার নাম প্রকাশ না করে দৈনিকটি বলছে,
আওয়ামী লীগের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার দাবি, গোয়েন্দা সূত্রে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের
কাছে খবর গেছে, হঠাৎই একটি বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অতিসক্রিয় হয়ে
উঠেছে।
এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা
চলছে বলেও মনে করেন শাসক দলের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে — প্রভাবশালী সংবাদপত্র
গোষ্ঠী অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিদেশি শক্তির তৎপরতায় ‘অংশ নিয়েছে’। এবারও তাদের
বিশ্বাস করার প্রশ্ন নেই।
বিদেশি শক্তির কোন তৎপরতা নজর কেড়েছে সরকারের—এ বিষয়ে আনন্দবাজারের
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত
নানা জনের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাস যোগাযোগ করছে। ঢাকার পাশাপাশি বেছে নেয়া হয়েছে কলকাতাকেও।
সম্প্রতি হাসিনা সরকারের বিরাগভাজন এক নামি অর্থনীতিবিদ কলকাতায় মার্কিন দূতাবাসে
গিয়ে বৈঠক করেছেন। আসামের কোকড়াঝাড়ে একটি সম্মেলনে তার উপস্থিতিও বাঁকা চোখে দেখছে
ঢাকা। জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতাকর্মীকেও কলকাতায় দেখা যাচ্ছে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের
গোয়েন্দা কর্মকর্তা সম্প্রতি কলকাতা সফর করেছেন।
ওই নামি বিশেষ ব্যক্তির বিষয়ে আনন্দবাজার
আরও জানিয়েছে, ২০০৭-এর ১১ জানুয়ারি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাপ্রধান
মিলে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের পর মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশের ওই নামি অর্থনীতিবিদের
নেতৃত্বে সরকার গঠনে তৎপর হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি— দুই দলই সেই
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর শেখ হাসিনা ফের ক্ষমতায় আসেন।
কিন্তু তার সরকারের সঙ্গে ওই অর্থনীতিবিদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি।
দৈনিকটি আরও বলেছে, সম্প্রতি তার প্রতি
উপযুক্ত আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বের বিশিষ্ট ৪০ জনের স্বাক্ষর করা একটি আবেদন
সম্প্রতি বিজ্ঞাপন হিসেবে মার্কিন একটি সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী
এই বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, ঢাকার বিশেষ
সংবাদপত্র গোষ্ঠী সেই সময়ে অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষে ছিল। এবারও তাদের বিশ্বাস করার
প্রশ্ন নেই।
১/১১-তে কারা সক্রিয় ছিল :
২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে
এক আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি
স্টার পত্রিকা ২০ বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর
থেকে এ দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না। কারণ তারা কী লিখবে তা আমি জানি। তারা ভালো কিছু
লিখলেও শেষের দিকে আমাকে নিয়ে খোঁচা দেয়। এ খোঁচা খেয়ে আমি আত্মবিশ্বাসে হোঁচট খাব।
তাহলে পত্রিকা দুটো পড়ব কেন?’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের নাম উল্লেখ না
করে তিনি বলেন, ‘আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে তার পত্রিকা
যতকিছু লিখেছে সেগুলো নাকি ডিজিএফআই সাপ্লাই দিয়েছে। অথচ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের
ওপরে লেখা থাকে নির্ভীক সাংবাদিকতা। তারা আলোর কথা বলে কাজ করে অন্ধকারের।’
ওই লেখাগুলো ছাপানো হলো কিন্তু সূত্র লেখা হলো না কেন প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সরকার স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রথমেই আমার ওপর আঘাত করে। আমি তো সরকারে ছিলাম না, তখন বিরোধীদলে ছিলাম। তবে কেন প্রথমে আমাকে গ্রেফতার করা হলো। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে ওই দুটি পত্রিকা (প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার) একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে গেছে। ডিজিএফআইয়ের ব্রিগেডিয়ার বারী ও আমিনের নির্যাতনের হাত থেকে ওই সময় কেউই রেহাই পায়নি। ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ছাত্রদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের সঙ্গে কী সখ্য ছিল- তার জবাব কি প্রথম আলোর মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামরা দিতে পারবেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আরেকজন জড়িত। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য
মাঠে নেমেছিলেন। একজন সম্পাদক ওই দলের লোক জোগাতে নেমেছিল। কিন্তু কেউ আসেনি। ওই ভদ্রলোককে
(ড. ইউনূস) আমিই মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়েছিলাম। ওই মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমে দলের
লোক গোছানোর চেষ্টা করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ আইন লঙ্ঘন করে ১০ বছর পর্যন্ত
বেশি ছিলেন। তাকে সম্মানজনকভাবে সরতে বলা হলে তিনি মামলা করলেন। তিনি আইন লংঘন করলেন,
মামলায় হারলেন আর সব দোষ শেখ হাসিনার ওপর। এমডি পদ হারানোর ক্ষেভ পড়ল পদ্মা সেতুর
ওপর। আমেরিকার বন্ধুকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করালেন তিনি।
ড. ইউনূস গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে অগণতান্ত্রিক কিছু এনে লাভবান হতে চান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, অনেকে ভেবেছিল বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা না নিয়ে বাংলাদেশ চলতে পারবে না। এদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। গণতন্ত্রকে এতটুকু ধরাশায়ী করা যায়, অগণতান্ত্রিক কিছু আসে, তাদের কপাল খুলবে- সেই অবস্থা বাংলাদেশে কখনও হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক আরাফাত বলেন, ‘বন্দুকের নল এবং ১/১১ এর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে বা এসেছে, প্রধানমন্ত্রীর তাদের বিষয়ে আপত্তি আছে। পশ্চিমাদের ক্রীড়নক হয়ে ড. ইউনূস দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন, এমন প্রক্রিয়াকে শেখ হাসিনা কোনোদিন মেনে নেবে না। তার এমন ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগকে
বিতর্কিত করতে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো আবারও সক্রিয় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।