সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরিশালে বীরদর্পে অব্যাহত রয়েছে কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, এসএসসি পরীক্ষা চলার সময় দেড় মাস দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে। তবে বরিশালে সেই নির্দেশনা মানার বালাই নেই। আর এসব বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকারি পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
সূত্রমতে, বরিশাল নগরীতে প্রায় ২ শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে নগরীর বগুরা রোডের বরিশাল সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে রয়েছে নগরীর সিংহভাগ কোচিং সেন্টার। শুধু বিদ্যালয়টির অপরদিকে সালাম সাইকেল স্টোর সংলগ্ন লস্কর লেনের মধ্যেই রয়েছে নাম-বেনামে প্রায় ডজন তিনের বেশি কোচিং সেন্টার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুরা রোডের লস্কর লেনের সকল কোচিং সেন্টারেই ক্লাস চলছে। একই গলিতে কিছু বেনামের কোচিং সেন্টার গুলোতে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে ক্লাস নিতে দেখাগেছে।
শুধু বগুড়া রোডেই নয়। নগরীর বিভিন্ন বিএম কলেজ রোড, কলেজ অ্যাভিনিউ, নবগ্রাম রোড, বটতলা, রুপাতলি হাউজিং, হাসপাতাল রোডসহ প্রায় এলাকার সব ধরনের কোচিং সেন্টারই চলছে পুরোদমে। পরীক্ষা চলাকালে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কেন কোচিং খোলা রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের। তবে কেউ কেই বলছে, অফিস খোলা রাখা হয়েছে, ক্লাস বন্ধ আছে। আর চলমান এসব কোচিং সেন্টারের অধিকাংশই সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত হছে বলে জানাগেছে। এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য সরেজমিনে গেলে সাংবাদিকদের উৎকোচ দেয়ার চেষ্টাও করেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
কোচিং করানোর বিষয়টি স্বীকার করে আলেকান্দা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষক তাইজুল ইসলাম বলেন, শুধু আমি নয়, সবাই তো কোচিং করায়। আর আমার কোচিং সেন্টার না শিক্ষার্থীদের ব্যাচের মাধ্যমে পড়ানো হয়।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, কোচিং কর্তৃপক্ষ খোলা রাখায় ক্লাস করছেন তারা। কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ না করলে তারা কি করবেন। প্রতি মাসে বেতন দিতে হবে ক্লাস করুক অথবা না করুক। আর সিলেবাস সম্পন্ন করতে ক্লাসে আসা প্রয়োজন দাবি শিক্ষার্থীদের।
তবে নগরীর বটতলার প্লাটিপ্লাস, হাসপাতাল রোডের ফেইথ শিক্ষা পরিবার, মল্লিক রোডের শাহিন শিক্ষা পরিরবার, শিক্ষণ একাডেমি কোচিং সেন্টার কতৃপক্ষ জানিয়েছে সরকার থেকে তারা এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা হাতে পায়নি।
সাইন্স একাডেমি কোচিং সেন্টারে আসা শিক্ষার্থীর অভিভাবক রাজিয়া সুলতানা ও সোহেল হায়দার বলেন, ‘সন্তানদের পড়াশোনার কথা বিবেচনা করে তাদের নিয়ে কোচিংয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তবে কোচিং পরিচালকরা যদি সরকারের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেন তাহলে তারাও তা স্বাগত জানাবেন।’একইকথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারে আসা অভিবাবকরা।
ফেইথ শিক্ষা পরিবার কোচিং সেন্টারে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার ও জান্নাত আরা জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষা চলার সময়ে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকলে তাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হবে। তবে স্যার কোচিং সেন্টার বন্ধ দিয়ে দিলে তারা আসবেন না।
এ বিষয়ে শাহিন শিক্ষা পরিরবার ক্যাডেট কোচিং সেন্টারের পরিচালক জালাল সরকার বলেন, সরকার এভাবে যদি দুই মাস এক মাস কোচিং বন্ধ দেয়। তাহলে আমরা কি ভাবে চলবো, অন্যথায় ব্যবসা বন্ধ করে চলে যেতে হবে।
প্লান্টিপ্লাস কোচিং সেন্টারের পরিচালক মাহাবুব হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধে সরাসরি কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কথা বিবেচনা করে কোচিং চালু রেখেছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সব কোচিং সেন্টারগুলোকে বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তারপরও কোচিং সেন্টার চালু রাখা হলে অভিযানের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।