গত কয়েক বছর ধরেই ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের আনন্দ রাত না গড়াতেই পরিণত হচ্ছে বিষাদে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ঘটেছে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। ফানুস থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দুই শতাধিক স্থানে আগুন ও আতশবাজির শব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। গত বছর মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে এবার কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানো কিংবা বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা পড়লেই ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসবমুখর এবং নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো, পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বন্ধ হয়নি অলিগলিতে আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি। এমনকি রাজধানীর বিভিন্ন সিগনালেও ফানুস বিক্রি করতে দেখা গেছে প্রকাশ্যে। ফানুস ও আতশবাজির সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজার ও শাখাঁরীবাজারসহ পুরান ঢাকার অলিগলিতে কিছুটা লুকিয়ে-ছাপিয়ে বিক্রি হচ্ছে আতশবাজি ও ফানুস। শাখাঁরীবাজার গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি দোকান পাওয়া যাচ্ছে ফানুস ও আতশবাজি। কায়দা করে এসব বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। পরিচিত মুখ না হলে বিক্রি করছেন না তারা।
শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, পাতলাখান লেনসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার গলিতের ভিতরের ছোট ছোট দোকানগুলোতে চোরাইভাবে বিক্রি হচ্ছে আতশবাজি ও ফানুস। তবে তাঁতীবাজার-শাখাঁরীবাজার গলির মাথায় ও দোকানের কোনায় কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকজন তরুণ ও কিশোর। যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। আতশবাজির বড় বাজার হিসেবে পরিচিত হলেও শাঁখারীবাজারের দোকানগুলোতে সচরাচর আগের মতো আতশবাজি পাওয়া যায় না। কিন্তু কেউ কিনতে এসে খোঁজাখুঁজি করলে কোনও না কোনোভাবে টের পেয়ে যায় গলি ও দোকানের কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো। মুহূর্তেই ক্রেতার সামনে হাজির হয়ে যায় তারা। গলির ভেতর ডেকে নিয়ে চলে দরদাম। এভাবেই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে আতশবাজির বিক্রি।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা ওয়াহিদুল ইসলাম সাফায়াত বলেন, আতশবাজি ও ফানুস উৎসব পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। নিষিদ্ধ হলেও শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারে ফানুস পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে দোকানের পিছনে রেখে স্থানীয়দের কাছে লুকিয়ে বিক্রি করছে।
পুরান ঢাকার আরেক বাসিন্দা ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী তূর্য বলেন, নতুন বছরের আগমনকে কেন্দ্র করতে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর আতশবাজিসহ উৎসব-আয়োজনে রাতটি উদযাপন নতুন কিছু নয়। তবে উদযাপন যে কাল হয়ে দাঁড়ায় তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ থার্টি ফার্স্ট নাইট। প্রতিবছর আমি নিজেও এসব আতশবাজি আর ফানুস ওড়াতাম। কিন্তু যখন দেখলাম এর কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে, তখন থেকে এসব এড়িয়ে চলছি। তাছাড়া বাসা থেকেও এসব করতে নিষেধ করেছে। আমার মনে হয়, এই অপসংস্কৃতি বন্ধে সামাজিক সংগঠন ও টেলিভিশনে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাঁখারীবাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, ফানুস ও আতশবাজি এখানের অনেক দোকানেই আছে কিন্তু ডিএমপি নিষিদ্ধ করায় আমরা সেগুলো লুকিয়ে বিক্রি করছি। তবে আমরা এগুলো নতুন করে আনছি না আগের যা ছিল তাই বিক্রি করছি খুব পরিচিত মানুষের কাছে।
ডিএমপির নির্দেশনা অমান্য করে কেন এই ফানুস ও আতশবাজি বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন, পরিচিতদের অনুরোধে আমরা এগুলো নিয়ে এসেছি। তাছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে আমরা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারি। এজন্য লুকিয়ে বিক্রি করছি। তবে এগুলো শেষ হয়ে গেলে আর আনবো না, বিক্রিও করবো না।