নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে ইতিহাস গড়লেন
দুই বাংলাদেশি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে বেসরকারিভাবে
নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহানা হানিফ। অন্যদিকে কুইন্স কাউন্টি বিচারক
পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ। তাদের এই বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের
নতুন ইতিহাস রচিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) নিউইয়র্ক
সিটির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ
চলে। রাত ৯টার পর থেকে ভোটের ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করতে থাকে নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব
ইলেকশন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া মোট ভোটের ৯৮ দশমিক ৮১ ভাগ ফলাফলে ডেমোক্রেট
প্রার্থী শাহানা হানিফ পেয়েছেন ২৮ হাজার ২৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ
পার্টির ব্রেট উইনকুপ পেয়েছেন ২ হাজার ৫২২ ভোট।
এদিকে কুইন্স কাউন্টি বিচারক পদে অ্যাটর্নি
সোমা সাঈদ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির
উইলিয়াম ডি. শানাহান পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৬২ ভোট।
প্রাপ্ত ভোটের যে ব্যবধান রয়েছে তাতে শাহানা
হানিফ এবং অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ বেসরকারিভাবে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে রয়েছেন। মেইল ইন এবং
অ্যাবসেন্টি ব্যালট গণনার জন্য চূড়ান্ত ফল পেতে অপেক্ষা করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে
তা হবে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
এর আগে চলতি বছরে তিনি ২২ জুনের প্রাইমারিতে
জয়ী হয়ে সাধারণ নির্বাচনে ডেমোক্রাটিক পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পান অ্যাটর্নি সোমা
সাঈদ। দশ বছরের জন্য তিনি এই পদে আসীন থাকবেন। তাঁর আদালতে ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত মামলার
শুনানি করার এখতিয়ার থাকবে।
অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ বলেন, জয়ের ব্যাপারে
আমি আশাবাদী ছিলাম সব সময়। জয়ের পথে রয়েছি এটা জানলেও কখনো সেটা নিজে মনে করিনি এবং
কাউকে বুঝতে দেইনি। কারণ আমাদের জয়ের পুরো বিষয়টি নির্ভর করছিল ভোটারদের ওপর। তারা
ভোট না দিলে জয়ী হতে পারতাম না। এ কারণে নিশ্চিত করে বলার কোন সুযোগ ছিল না যে আমি
জয়ী হবে। তিনি বলেন, আমার জয়ে আমি আনন্দিত। আনন্দিত তারাও যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন।
সোমা সাঈদ বলেন, কুইন্স ডেমোক্র্যাটিক
কাউন্টি। সবাই মনে করেন এখান থেকেই যিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নমিনি হবেন তিনি জয়ী
হতে পারবেন। এই কারণে প্রাইমারির জয়কেই অনেকেই আসল জয় মনে করেন। কিন্তু আসলে বিষয়টি
এই রকম ছিল না। সাধারণ নির্বাচনের দিনে ভোট দেওয়া যেমন জরুরি ছিল, তেমনি জয় পাওয়া এবং
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রয়োজন রয়েছে। তাই সব মিলেয়ে বলা যায়- আমি জানতাম জয়ী হবো, তবু
কাজ করে গেছি। এটাই নির্বাচনের নিয়ম। কখনো বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে নেই।
তিনি বলেন, ভাগ্য আমার সহায়ক হয়েছে এটা
অনেকেই মনে করেন। সেটাতে, অবশ্যই কিন্তু কাজ করতে হয়েছে। এই কাজ একদিনে করিনি ধীরে
ধীরে কাজ করে গেছি। কষ্টের ও পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে আমার মতো একজন মানুষের এই পদে আসীন
হওয়া। তিনি বলেন, আমি নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছি। ভবিষ্যতেও করে যাবো।
ডিসট্রিক্ট-৩৯ থেকে কাউন্সিলওমেন পদে বেসরকারিভাবে
বিজয়ী শাহানা হানিফ বলেন, আমার এলাকায় বাংলাদেশি ভোটার আছেন। তবে সংখ্যা অনেক বেশি
নয়। তারপরও তাদের ভোট আমার জন্য খুবই জরুরি ছিল। পাশাপাশি আমার এলাকায় বিভিন্ন কমিউনিটির
মানুষ বাস করেন। তাই তাদের ভোটের ওপর আমাকে নির্ভর করতে হয়েছে, যাতে আমি সব কমিউনিটির
ভোট পেয়ে জয়ী হতে পারি। জয় পাবো এটা জানতাম। তবে জয়ী হবোই সেটা বলতে চাইনি।
তিনি বলেন, আমি প্রাইমারীতে জয়ের পর এটা
মনে করেছিলাম যে আমি সিটি হলে যেতে পারবো। কিন্তু এই চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছার জন্য
সাধারণ নির্বাচনে জয় প্রয়োজন। সেই জয়ের মাধ্যমে সেটি হলে যাওয়ার সুযোগ মেলে। এই জয়ের
মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে।
শাহানা হানিফ বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ধন্যবাদ
জানিয়ে বলেন, তাদের সহায়তা ছাড়া এটি কখনো সম্ভব ছিল না। আমি দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময়
ধরে কাজ করে গেছি। দিনে দিনে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই সব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পেরেছি।
সব মিলিয়ে বলা যায় যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা আমার প্রয়োজন ছিল। আমি আমার ডিসট্রিক্টের
সবার প্রতি এবং আমাকে যারা এনডোর্স করেছেন, ভোটে অংশ নেওয়া, জয়ী হওয়ার ব্যাপারে সহায়তা
করছেন, যারা ভোট দিয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় বিভিন্ন কমিউনিটির
লোক রয়েছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি আমেরিকানরাও আছেন। তাদের জন্য আলাদা একটি অফিস করবো।
সেখানে মানুষ আসবেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সহায়তা করবো। বিশেষ করে ডোমেস্টিক
ভায়োলেন্স এখন বেড়েছে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, শিক্ষাখাতের
বিভিন্ন পর্যায়ে অভিভবাকদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে তাদের সম্পৃক্ত হতে
উৎসাহিত করা ও সহায়তা করা হবে। এছাড়াও ইমিগ্রান্টদের অনেকেরই অনেক সমস্যা রয়েছে সেগুলোতেও
সহায়তা করা হবে।
তিনি বলেন, সিটি হলে গিয়ে আমার কাজ হবে যেসব বিষয় জরুরিভিত্তিতে বিল পাস হওয়া দরকার কিন্তু তারপরও এতদিনে হয়নি সেইসব বিল পাস করাতে চাই। সময় লাগবে তবু চেষ্টা করে যেতে হবে। আমরা যে সময় টুকু পাবো এই সময়ের মধ্যে যখনই সম্ভব তা করবো। এরপর যারা পরে আসবেন তারা সেই সব কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমার এজেন্ডাগুলোতে আমি সব সমস্যাগুলো প্রাধান্য দিয়েছি।