বর্তমানে দেশের মুদ্রিত সংবাদপত্র এক কঠিন সময় পার করছে। কারণ ছাপার কাগজ ও ছাপার সামগ্রীর দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে পত্রিকা চালানো অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন অনেক বড় বড় পত্রিকারও সার্কুলেশন কমিয়ে ফেলেছে। আমাদেরও কমাতে হচ্ছে। কারণ কাগজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে, বেড়েছে প্লেটসহ অন্যান্য সামগ্রীরও দাম। এমন পেক্ষাপটে পত্রিকারও মূল্য বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়, কারণ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মুদ্রিত সংবাদপত্রের পাঠক কমে গেছে বিপুলভাবে। অথচ পাঠকই সংবাদপত্রের প্রাণ ও মূল চালিকাশক্তি।
অনলাইন নিউজপোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে মুছে ফেলা যায়। কিন্তু ছাপা সংবাদ মুছে ফেলার সুযোগ নেই। কারণ প্রিন্ট ইজ প্রুফ (ছাপাই প্রমাণ)। এ জন্যই আমি আশাবাদী, যতোই প্রতিকূলতা আসুক না কেন প্রিন্ট পত্রিকা টিকে থাকবে। ভবিষ্যতে অতীত হবে না ছাপা কাগজ।
সংবাদপত্র সাধারণ মানুষের কথা বলে, সমাজের কথা বলে, দেশের কথা বলে। দেশ পরিচালনায় সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরে, সমালোচনা করে সরকারকে সঠিক পথনির্দেশনা দেয়। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদপত্র সমাজকে সজাগ করে, সম্ভাবনার কথা বলে। সমাজ প্রগতির কথা বলে, সমাজকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। এ কারণে সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। সেই দর্পণে সমাজের সঠিক চিত্র প্রতিফলিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। সংবাদপত্র পরিচ্ছন্নভাবে পরিচালনা করা সমাজের সঠিক প্রতিবিম্ব ও প্রতিফলনের চিত্র তুলে ধরার পূর্বশর্ত। তাই সংবাদপত্রকে সমাজের অন্যকোনো বিষয়ের সাথে তুলনা করা চলে না। এ কারণে সংবাদপত্র ও সাংবাদিককে চলতে হয় বন্ধুর পথে, অতিক্রম করতে হয় অনেক দুর্গম পথ। এভাবেই সংবাদপত্র হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক।
আর সেই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমরা পেরিয়ে এসেছি অনেকটা পথ। আজ (২২ সেপ্টেম্বর) আজকের দর্পণের জন্মদিন। ৯ বছর আগে ‘সত্যের খোঁজে প্রতিদিন’ স্লোগান নিয়ে আমার বড়ভাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপির সম্পাদনা ও প্রকাশনায় আজকের দর্পণ-এর যাত্রা শুরু করেছিলেন। অদম্য মনোবল আর প্রচণ্ড সাহস নিয়ে শুরু হয়েছিল আজকের দর্পণের পথচলা। নানা বাধাবিপত্তি ডিঙিয়ে নয়টি বছর পেরিয়ে দশ বছরে পর্দার্পণ করলো আজকের দর্পণ।
এরই মধ্যে পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে পত্রিকাটি। ব্যাপক জনপ্রিয় না হলেও পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে ‘আজকের দর্পণ’ এ আমার আত্মবিশ্বাস। পত্রিকাটির জন্ম আমার হাতে না হলেও আজ এটি আমার সন্তানের মতো। এ কাগজটি প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে প্রিয়পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের ভূমিকাই বেশি।
একমাত্র পাঠকের ভালোবাসায়, বিজ্ঞাপনদাতাদের সহযোগিতায়, হকার ও এজেন্টদের আন্তরিকতায় কোনো বড় গ্রুপের অর্থলগ্নি ছাড়াই পথ চলছে ‘আজকের দর্পণ’। এ আমাদের এক অন্যরকম শক্তি। এ কারণেই ‘আজকের দর্পণ’ কারো মুখাপেক্ষী নয়। ‘আজকের দর্পণ’ এমন একটি জাতীয় দৈনিক যেটা দেশের কথা বলবে, দেশের মানুষের কথা বলবে। এ দেশের আপামর মানুষের কণ্ঠই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ‘আজকের দর্পণ’ পত্রিকায়। এ জায়গা থেকে আমরা একটুও সরে আসিনি, একচুল পরিমাণও ছাড় দেইনি। দেশপ্রেম প্রশ্নে একচুলও আপস করিনা আমরা। ‘আজকের দর্পণ’ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে দেশের মানুষের কাছেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোনো দল বা গোষ্ঠীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়, দায়বদ্ধও নয়। তাই ‘আজকের দর্পণ’ সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে দ্বিধা করে না। এর ব্যত্যয় ঘটবে না কখনো।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের সাথে নিয়েই আমাদের এ পথচলা। আমাদের এ পথচলায় আমরা সবসময় আপনাদের পাশে পেয়েছি। আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। আপনাদের অবদানের কথা আমরা সবসময়ই কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি। আপনাদের ভালোবাসায় ‘আজকের দর্পণ’ অসম সাহস ও ধৈর্য নিয়ে এগোবেই।
সম্প্রতি আজকের দর্পণ-এর ই-পেপার ও অনলাইন পোর্টাল আরো আপগ্রেড করা হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে পত্রিকাটিকে আরো পাঠকপ্রিয় কাগজে পরিণত করা হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের সমর্থন ও সহযোগিতা। আশা করি, আপনাদের পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত আগের মতো প্রসারিত থাকবে।
পরিশেষে আজকের দর্পণের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রিয়পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন। যতোই সংকট থাকুক, প্রতিকূলতা আসুক, নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে আমরা যেতে চাই বহুদূর।
সম্পাদক ও প্রকাশক, আজকের দর্পণ