দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২৪ এপ্রিল
সোমবার শপথ নেবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহাবুদ্দিন। ওইদিন বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার
হলে নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
নতুন রাষ্ট্রপতির অপেক্ষায় বঙ্গভবন।
সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রপতি হিসেবে
আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ। বঙ্গভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে আবদুল হামিদ
এখানে রেখে যাবেন নানা সুখস্মৃতি। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করার
রেকর্ডও বঙ্গভবনের রেকর্ডবুকে রেখে যাবেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক। বিচক্ষণ, বিনয়ী, সদালাপি,
পরোপকারী এবং বিতর্কমুক্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবেও নিজের নামটি রেখে যাবেন লাখো-কোটি মানুষের
হৃদয়ে।
দেশের একুশতম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে রাজকীয় বিদায়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বঙ্গভবন। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি দুই মেয়াদ ১০ বছর রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। বিদায় অনুষ্ঠান সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে সব ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : ২৪ এপ্রিল শপথ নেবেন নতুন রাষ্ট্রপতি
বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, ক্রেডেনশিয়াল
মাঠে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে সালামি গার্ড প্রদান করা হবে বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে।
অন্যদিকে রীতি অনুযায়ী বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একভাগ গাড়ির সম্মুখ
রশি টানবেন, আরেক ভাগ পেছন থেকে গাড়িতে ধাক্কা দেবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি খোলা জিপে
বঙ্গভবন প্রস্থানের সময় বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পিজিআর সদস্যরা ফুলের
পাপড়ি ছিটিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাবেন।
গত ১২ মার্চ বঙ্গভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে
মো. হামিদ জানান, ঢাকায় থাকলেও মাসে অন্তত ১০-১২ দিনের জন্য হলেও হাওরে যাবেন তিনি।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের পতনের
মধ্য দিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। এরপর থেকে গত ৩৩ বছরে বাংলাদেশের
রাষ্ট্রপতি হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের কারও কারও বঙ্গভবন ছাড়তে হয় বিতর্ক
সঙ্গে নিয়ে, কিন্তু সজ্জন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত আবদুল হামিদকে কোনো বিতর্ক স্পর্শ
করতে পারেনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে
চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব
পালন করেন। একই বছরের ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে আবদুল হামিদ
সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এর এক মাস পর ২০১৩ সালের ২২
এপ্রিল তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। একই বছরের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের
২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে ২১তম রাষ্ট্রপতি
হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সব মিলিয়ে টানা ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব
পালন করে আসছেন মো. আবদুল হামিদ।
অবসরে গেলেও আইন অনুযায়ী অবসর ভাতা, চিকিৎসা
সুবিধাসহ সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরও কিছু সুবিধাও
পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী)
পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন, যার মোট বার্ষিক পরিমাণ সরকার নির্ধারণ করবে। একজন মন্ত্রীর
প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধাদি পাবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি।
আরও পড়ুন : নতুন রাষ্ট্রপতিকে আবদুল হামিদেরঅভিনন্দন
সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে
সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন এবং সরকার নির্ধারিত সীমা
পর্যন্ত বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও
পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তিনি দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে
বিনা ভাড়ায় থাকতে পারবেন।