
বিদেশে অবস্থানরত গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের সঙ্গে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সদস্য মেন্দি এন সাফাদির ছবিটি বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার বিষয়। ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে নুর জানান, এটি এডিট করা এবং মেন্দি এন সাফাদিকে তা তিনি জানেন না। ফলে প্রশ্ন ওঠে ছবিটি আসলেই এডিট করা কিনা।
এ ছবিটি এডিট করা হয়েছে কিনা জানতে ফটোগ্রাফি বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত একাধিক সাংবাদিকের কাছে প্রেরণ করা হয়। এর পাশাপাশি সিমিলার ইমেজ, রিভার্স ইমেজ সার্চ থেকে শুরু করে ওয়েব্যাক মেশিনেও চেক করা হয়। ছবিটি সর্বোচ্চ জুম করে তার চুল দেখার চেষ্টা করা হয়েছে যা ব্যকগ্রাউন্ডের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এখানে ভিন্ন কোন রং দেখা যাচ্ছে না নুর বা মেন্দির চুলের শীর্ষ ভাগে।
এ বিষয়ে ফটোগ্রাফি
বিভাগ থেকে তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়। যার প্রথমটি হলো 'সাবজেক্ট এজ' সাধারণ অর্থে
বললে, যেই ব্যক্তির ছবি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তার শরীরের বাহিরের বর্ডার লাইনের সঙ্গে
ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি পিক্সেল পারফেক্ট হবে না। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো চুল। সেটা পুরোপুরি
মিলে যাচ্ছে। যা প্রমাণ করে এই ছবিটি এডিট করা নয়।
অপর বিষয়টি হলো সূর্যের আলো। ছবিটিতে বামপাশ থেকে সূর্যের আলো প্রথমে মেন্দি এন সাফাদির গায়ে পড়েছে এবং এই ব্যক্তির শরীরের ছায়া স্পষ্টভাবে পড়েছে নূরের শরীরে যা আসলে এডিট করে বসানো সম্ভব নয়। এমনকি নূরের পায়ের জুতাটিতেও ছিলো সূর্যের ছটা। অর্থাৎ এভাবে ছবির আলো এডিট করা সম্ভব নয়।
সর্বশেষ পয়েন্টে বলা হয়েছে তাদের উভয়ের দাঁড়ানোর ভঙ্গি। এ ক্ষেত্রে ছবিটিতে স্পষ্ট বোঝা যায়, উভয় দাঁড়িয়েছে পাশে কাউকে রেখে। ধরে নেয়া হোক এটি এডিট করা ছবি। সেক্ষেত্রে নূরের ছবিকে যদি অন্যকারো ছবির ওপর প্রতিস্থাপন করা হয়, তাহলে এটি অসম্ভব যে একই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং ভঙ্গিমায় হুবহু আরেক ছবি এভাবে শতভাগ মিলে যাবে।
এদিকে সিমিলার
ইমেজ এবং রিভার্স ইমেজ সার্চ করে নূরের বা সাফাদির এমন একক বা অন্যকারো সঙ্গে ছবি মেলেনি।
এমনকি তাদের নাম পৃথক পৃথক সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজেও এ ধরনের কোন একক বা অন্য ব্যক্তির
সঙ্গে ছবি মেলেনি। অন্য ব্যাখ্যায় ছবিটি এডিটেড নয় বলে জানিয়েছেন অপর একজন ফটোগ্রাফি
বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়ে নূরের তোলা ছবিগুলোতেই এই শার্ট পরা অবস্থায় তাকে
দেখা গেছে। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, তার জুতো এবং শার্ট এক। কিন্তু এ
ধরণের ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো ও এই পোশাক পরা নূরের কোন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেই।
ফলে এই ছবিটি প্রকৃত ছবি। এডিট করা নয়।
আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ সম্প্রতি প্রকাশিত এক ভিডিওতেও নুরের এই ছবিটি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ছবিটির পায়ের দিকে দেখুন এবং রোদ যেভাবে মেন্দি সাফাদির গায়ে লেগেছে তার ছায়া নুরের গায়ে পরেছে। এ বিষয়টি প্রতিটি পয়েন্টে স্পষ্ট। এ ছাড়াও, যেই মোবাইল থেকে ছবিটি ওঠানো হয়েছে, সেই মোবাইল থেকেই সোর্স নিশ্চিত হবার পর ছবিটি ব্যবহার করেছি আমি। এখন গুজব প্রতিহতের নাম করে এই প্রকৃত ছবিটিকে কেউ গুজব হিসেবে প্রচার করলে তার উদ্দেশ্যে নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়।
এর আগে গত সোমবার
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের একটি
ছবিতে দেখা যায় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে।
এই দুইজনের হাস্যোজ্জ্বল সেই ছবি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় দেশের নেট দুনিয়ায়। জানা গেছে,
ইসরাইলের এই গোয়েন্দা সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দুবাইয়ে দেখা করেছেন নুরকে। অবশ্য বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন নুর। তিনি 'এই ছবিটি এডিট
করা' বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে ফেসবুকেও একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।
২০১৬ সালে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী বিদেশে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুজনের ছবি ফাঁস হয়ে গেলে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। একপর্যায়ে আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশে আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানায় পুলিশ।