কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়। কান্দিরপাড়ের নামে কান্দিখাল। সে ঐতিহ্যবাহী খালটি বছরের পর পর দখল হয়ে আছে।
হোটেল সালাহ উদ্দিন থেকে টমছমব্রিজ পর্যন্ত দখলের হিসাব এখনো কষা হয়নি। টমছমব্রিজ থেকে জাঙ্গালিয়া পর্যন্ত চারটি সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৪০টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দখলে আছে খালটি। এটিই নগরীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ মনে করেন নগর কর্তৃপক্ষ।
সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু জানিয়েছেন মার্চ থেকে কার্যক্রম শুরু হবে। কিন্তু মার্চ মাস শেষ হতে চললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সূত্রমতে, কান্দিখাল নগরীর উত্তর চর্থার নওয়াববাড়ি চৌমুহনী থেকে নোয়াগাঁও চৌমুহনী হয়ে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পুরাতন ডাকাতিয়া নদীতে মিশেছে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ খালের সিএস নকশা অনুযায়ী কোনো কোনো স্থানের প্রস্থ ৪৫ ফুট থেকে ৯৫ ফুট পর্যন্ত। এছাড়া নগরীর মনোহরপুর থেকে কান্দিরপাড় পর্যন্ত এ খালের শাখা রয়েছে। কিন্তু দখলদারদের কবলে পড়ে এ কান্দিখালটি দিনে দিনে অনেকটা বিলীন হয়ে প্রায় ৮ ফুট থেকে ২৫ ফুট প্রস্থের সুরু ড্রেনে পরিণত হয়েছে। খালের প্রস্থ বিলীন হয়ে বর্তমানে আছে ১০-১৫ ফুট। এছাড়া নগরীর টমছম ব্রিজ মোড়ে ৭৯ ফুট ও নোয়াগাঁও মোড়ে ৯৫ ফুটের খালের প্রস্থ নেমে এসেছে ১৫-২০ ফুটে।
নগর ভবনের তথ্যমতে, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের পাকা বাউন্ডারি ওয়াল ও মূল ফটকসহ রয়েছে ১০.৫৬ শতক ভূমি, সামাজিক বন বিভাগের বাউন্ডারি ওয়াল রয়েছে ৩.৫৬ শতক ভূমি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ালসহ রয়েছে প্রায় দুই শতক ভূমি। শাকতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা পাকা ভবনসহ ১.৩২ শতক ভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লা মডার্ন হাসপাতালসহ ৩৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান অবৈধ দখলের তালিকায় রয়েছে।
নগরীর প্রবীণ নাগরিক জহিরুল হক দুলাল বলেন, কুমিল্লাকে আমরা বলি ব্যাংক আর ট্যাঙ্কের শহর। দিনদিন সে ঐতিহ্য বিলীন হচ্ছে। পুকুর ভরাট হচ্ছে, খাল ভরাট হচ্ছে। কান্দিখালের নামেই কান্দিরপাড়। এক সময় বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল করতো কান্দিখালে। জলাবদ্ধতা মুক্ত নগরীর জন্য নাগরিক ও নগর কর্তৃপক্ষ উভয় পক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি রোকেয়া বেগম শেফালী বলেন, দখল করা কোন সুনাগরিকের কাজ না। যারা দখল করেন, তাদের বিরুদ্ধে যদি প্রশাসন কঠোর হতো, তাহলে বারবার দখল হতো না। এ যে কিছুদিন আগে ফুটপাত দখল মুক্ত করা হলো, তা আবার দখল হয়ে গেছে। এসবের কারণে নগরবাসী সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, টমছমব্রিজ থেকে নোয়াগাঁও চৌমুহনী পর্যন্ত ৪১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। মার্চে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে আমরা এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি। প্রথম পর্যায়ে আমরা নগরীর ড্রেনগুলো খনন শুরু করেছি। কান্দিখালকেও আমরা দখলমুক্ত করবো। এবার উচ্ছেদের পর টেকসই রিটার্নিং ওয়াল দেওয়া হবে।